ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ হানাদার মুক্ত দিবস

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৪ ডিসেম্বর ২০১৬

আজ হানাদার মুক্ত দিবস

কামালপুর নিজস্ব সংবাদদাতা জামালপুর থেকে জানান, ৪ ডিসেম্বর কামালপুর মুক্ত দিবস ! ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাজিত হয় পাকসেনারা। শত্রুমুক্ত হয় ১১নং সেক্টরের জামালপুরের বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর রণাঙ্গন। ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে এই অঞ্চলে ১১নং সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ পরিচালিত হয় আর ১১নং সেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন মুক্তিযোদ্ধার অন্যতম বীর সেনানী কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তম। বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর থেকে ২ কিঃমিঃ দূরে ভারতের মহেন্দ্রগঞ্জে ১১নং সেক্টরের সদর দফতর ছিল। এই সেক্টরে ১২ মে থেকে ২৮ নবেন্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে পাকসেনাদের বিভিন্ন সময়ে ৫২ বার সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে। এই সব যুদ্ধে ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিনসহ মোট ১৯৪ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আর ৪৯৭ পাকসেনা নিহত হয়। পরিকল্পনানুযায়ী ২৪ নবেম্বর থেকে কামালপুর পাকসেনা ক্যাম্প অবরোধ করে রাখে মুক্তিযোদ্ধারা। ৩ ডিসেম্বর যৌথ কমান্ডের সিদ্ধান্ত মতে অবরুদ্ধ পাকসেনা ক্যাম্পে একটি চিঠি পাঠানো হয়। বকশীগঞ্জের অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা বশীর আহমদ বীরপ্রতীক সেই চিঠিটি সঙ্গে করে পাকসেনাদের ক্যাম্পে হাজির হন। চিঠিতে লেখা ছিল তোমাদের চারদিক যৌথবাহিনী ঘেরাও করে রেখেছে। বাঁচতে চাইলে আত্মসর্মপণ কর, তা না হলে মৃত্যু অবধারিত। এই চিঠি পেয়ে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে পাকসেনা কমান্ডার আহসান মালিক। অবস্থা বেগতিক দেখে তারা কমান্ডার বশীরকে না মেরে আটক করে রাখে। অন্যদিকে বশীরের ফিরতে বিলম্ব হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা চিন্তিত হয়ে পড়ে। সবার ধারণা বশীরকে হয়ত মেরে ফেলেছে। তাই আক্রমণের জন্য সবাই প্রস্তুতি নেয়। এর মধ্যেই সিদ্ধান্ত পাল্টে আরেকটি চিঠি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সঞ্জুকে পাঠানো হয় পাকসেনা ক্যাম্পে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বীরদর্পে দ্বিতীয় চিঠি নিয়ে সঞ্জুও শত্রু ক্যাম্পে হাজির হলেন। সেই চিঠিতেও লেখা ছিল উপায় নেই, বাঁচতে হলে আত্মসর্মপণ করতে হবে। অবশেষে উপায় না দেখে গ্যারিসন অফিসার আহসান মালিকসহ বেলুচ, পাঠান ও পাঞ্জাবী সৈন্যের ১৬২ সদস্য বিপুল গোলাবারুদসহ ৪ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনীর বিগ্রেড কমান্ডার হরদেব সিং ক্লেয়ারের কাছে আত্মসমর্পণ করে। শত্রুমুক্ত হয় ১১ নম্বর সেক্টর বকশীগঞ্জের কামালপুর। দামুড়হুদা সংবাদদাতা, দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা থেকে জানান, ৪ ডিসেম্বর দামুড়হুদা উপজেলা মুক্ত দিবস। মহান মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের বিভীষিকাময় পরিস্থিতির অবসান ঘটে এই দিনে। দামুড়হুদা ছেড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। দামুড়হুদার মুক্তিকামী মানুষ উল্লসিত হয়ে নেমে পড়ে রাস্তায়। যুদ্ধকালীন সময়ে ৮নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লিয়াকত আলী জানান, ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৯টায় সীমান্তবর্তী দামুড়হুদা উপজেলার বাড়াদি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনী ক্যা¤েপ ৪১ পার্বত্য রেজিমেন্ট গোরখা ব্রিগেডিয়ার কমান্ডার মিচিগান নির্দেশ দেন উপজেলাসহ দর্শনাকে শত্রুমুক্ত করত হবে। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা এক প্লাটুন মিত্রবাহিনী ও ৪০ মুক্তিযোদ্ধা লোকনাথপুর তালবাগান সড়কের উদ্দেশে রওনা দেয়। তারা গলায় দাড়ি ঘাটের কাছে রাবারের নৌকাযোগে ২ ভাগে বিভক্ত হয়ে মাথাভাঙ্গা নদী পার হয়ে সড়কে গিয়ে রাত ১২টায় এমবুস করে। এ সময় পাক হানাদার বাহিনীর একটি এ্যাম্বুলেন্স চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা দিয়ে তালবাগানের কাছে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর গোলাবর্ষণে আগুন ধরে পুড়ে যায়। এতে ৫ পাক বাহিনী নিহত হয়। দর্শনাকে শত্রুমুক্ত করতে প্রাণ দিতে হয় দর্শনা কেরু এ্যান্ড কো¤পানির চার শ্রমিক ও দর্শনা সরকারী কলেজের এক অধ্যক্ষ, দুই অধ্যাপককে। পরে পারকৃষ্ণপুর ঘাট পার হয়ে মিত্র বাহিনী দর্শনার দিকে আসে। অপর দিকে উথলী প্রান্ত থেকে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সামাদ ও আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী দর্শনার দিকে আসে। এভাবে ৩ দিক থেকে দর্শনায় পাক বাহিনীর ওপর ত্রিমুখী আক্রমণ চালিয়ে ৪ ডিসেম্বর ভোর ৬টা ৩০ মিনিটের সময় দামুড়হুদা উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। ৮নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডারের অভিযানে মিত্রবাহিনীর নেতৃত্ব দেন কর্নেল বুফে। পরে পাকবাহিনী বাধ্য হয়ে উপজেলা থেকে চুয়াডাঙ্গার দিকে রেল সড়ক ধরে পালিয়ে যায়। ঝিনাইগাতী নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর, থেকে জানান, ৪ ডিসেম্বর ঝিনাইগাতী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক-হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা ঝিনাইগাতী অঞ্চলকে শক্রমুক্ত করে। ২৩ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে তাওয়াকুচা পাকবাহিনীর ক্যাম্প দখল করে। আট আগস্ট নকশী পাকিস্তানী ক্যাম্প আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধারা। সম্মুখ যুদ্ধে পাকবাহিনীর ৩৫ সেনা নিহত হয়। ২৭ নবেম্বর কমান্ডার জাফর ইকবালের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ঝিনাইগাতী বাজারের রাজাকার ক্যাম্প দখল করেন। ওই সময় আট রাইফেলসহ আট রাজাকারকে ধরে নিয়ে যায়। এভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর্যুপরি আক্রমণে হানাদার বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। অবশেষে কামালপুর দুর্গ পতনের আগাম সংবাদ পেয়ে ৩ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক দেড়টায় ঝিনাইগাতীর শালচুড়া ক্যাম্পের পাকিস্তানী বাহিনী পিছু হটে। এরপর আহমদ নগর পাকিস্তানী হেড কোয়ার্টারের সৈনিকদের সঙ্গে নিয়ে রাতেই মোল্লাপাড়া ক্যাম্প গুটিয়ে শেরপুর শহরে আশ্রয় নেয়। আর বিনা যুদ্ধে ঝিনাইগাতী শক্রমুক্ত হয়। ৪ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা মুক্ত ঝিনাইগাতীতে প্রবেশ করে প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ায় ।
×