ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে পাটনি সম্প্রদায়ের দাবি ‘শেষ ঠিকানা’

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৪ ডিসেম্বর ২০১৬

কুড়িগ্রামে পাটনি সম্প্রদায়ের দাবি ‘শেষ ঠিকানা’

রাজুমোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম ॥ এক সময় নদীতে খেয়া ঘাটে মানুষ পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করেছে পাটনি সম্প্রদায়। কালের পরিবর্তনে খেয়া ঘাট সরকারীভাবে ইজারা পদ্ধতি চালু হওয়ায় দিনে দিনে এ পেশা হারাতে হয়েছে তাদের। এখন অনেকের বাস্তুভিটাও নেই। নেই তাদের শবদেহ সৎকারের জায়গাটুকুও। রাস্তার পাশে খাস জমিতে বাঁশ ও বেতের জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে জীবন যুদ্ধে কোন রকমে টিকে আছে দলিত সম্প্রদায়ের এ মানুষগুলো। সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নে কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কের পাশে বসবাস করছে অর্ধ শতাধিক পাটনি পরিবার। বাপ দাদার পেশা হারিয়ে বাঁশ ও বেতের তৈরি ডালি, কুলা, ডুলি, চালনিসহ গৃহস্থালী আসবাবপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে তারা। বর্তমানে প্লাস্টিক সামগ্রীর দাপটে চাহিদা কমে আসছে তাদের তৈরি পণ্যের। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে কোন রকমে চলছে তাদের সংসার। এ অবস্থায় নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে মৃত্যুর পর লাশের সৎকার নিয়ে। এতদিন অন্যের জমিতে লাশের সৎকারের ব্যবস্থা থাকলেও এখন আর সেই সুযোগটিও নেই। লাশ নিয়ে নামতে হচ্ছে রাস্তায়। ফলে এ সম্প্রদায়ের মানুষের চাওয়া জীবনের শেষ ঠিকানার জন্য একটু নির্দিষ্ট জায়গা। সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের বাজার সংলগ্ন পাটনি সম্প্রদায়ের রমেশ চন্দ্র অধিকারী বলেন, ২০ বছর আগে কাঁঠালবাড়ীতে পাটনি সম্প্রদায়ের আলাদা গ্রাম ছিল। সেখানে চার শতাধিক লোকের বসবাস ছিল। তখন নদীর ঘাটে ইজারা হতো না। বাপ-দাদারা নদীর খেয়া ঘাটে নৌকা দিয়ে লোকপারা পারের কাজ করে টাকা উপার্জন করে সংসার চালাত। কিন্তু এখন তাদের সে পেশা কেড়ে নিয়েছে বিত্তবানরা। অন্য জাতের মানুষরা নৌকা দিয়ে লোক পারাপার করছে। প্রতিযোগিতার যুগে মূল পেশায় টিকে থাকতে না পারায় পেশা বদলাতে হয়েছে তাদের। পেশা বদলে যান্ত্রিক যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে পেশা ছেড়ে দিয়েছে অনেকেই। পাটনি সম্প্রদায়ের গণেশ জানায়, এখন তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। নিজেদের থাকার জায়গা নেই। পাশাপাশি তাদের সম্প্রদায়ের কারও মৃত্যু হলে লাশ সদকারের জায়গা পাওয়া যায় না। আগের শ্বশান ঘাট ও কবরস্থান কলেজ তৈরি হয়েছে। মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাড়ি-ঘরের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। এজন্য এখন আর কেউ আমাদের লাশ পোড়ানো বা কবর দেয়ার জায়গা দেয় না। গত ২২ নবেম্বর আমার দাদি মারা গেলে তাকে পোড়ানো বা কবর দেয়ার জায়গা পাইনি। ফলে আমাদের সম্প্রদায়ের সকলে মিলে লাশ নিয়ে রাস্তা অবরোধ করতে হয়েছে। পরে পুলিশ ও চেয়ারম্যান এসে লাশ পোড়ানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এখন আমরা সরকারের কাছে মৃত্যুর পর শেষ ঠিকানা দাবি করছি। সরকার যেন একটু শ্মশান বা কবরস্থানের জায়গা করে দেয়।
×