ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভাঙ্গনের কবলে ছাতিরচর

১৩ বছর ধরে নেই ইউপি ভবন ॥ পরিষদ বসে চেয়ারম্যানের বাড়িতে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৪ ডিসেম্বর ২০১৬

১৩ বছর ধরে নেই ইউপি ভবন ॥ পরিষদ বসে চেয়ারম্যানের বাড়িতে

মাজহার মান্না, নিকলী থেকে ফিরে ॥ বর্ষাকালে প্রচ- ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে গ্রামগুলো দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। ভাঙ্গন ঠেকাতে নেই পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষা। তাই আগের মতো এ অঞ্চলে আর চোখে পড়ে না ঘনবসতি। কোন স্থায়ী হাট-বাজার নেই। ১৩ বছর ধরে নেই ইউনিয়ন পরিষদের ভবন। এলাকায় শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ প্রয়োজনীয় কাক্সিক্ষত সেবাও অপ্রতুল। এমনই চিত্র হাওড় অধ্যুষিত নিকলী উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়নের। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যন্ত এ অঞ্চলের নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা নিজ বাড়িতে বসেই পরিষদের সার্বিক কাজকর্ম চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদের জায়গায় দোচালা টিনের ঘর স্থাপিত হলেও সেখানে এখনও টাঙানো হয়নি কোন সাইনবোর্ড। তাছাড়া ছাতিরচর ইউপির সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মৌজা সংক্রান্ত জটিলতা। নদীর পূর্বপারের মানুষের চরদিঘীরপাড় মৌজাটি এখনও পার্শ্ববর্তী গুরুই ইউপিতে রয়ে গেছে। এ কারণে ভূমি অফিস সংশ্লিষ্ট কাজকর্মের ট্যাক্স থেকে ছাতিরচর ইউপি বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমানে জনগণের ট্যাক্স ছাড়া ছাতিরচর ইউপির কোন আয়ের উৎস নেই বললেই চলে। জানা গেছে, দেড় যুগ আগে হাওড় উপজেলা নিকলীর গুরুই ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ড ভেঙ্গে নদীর পূর্বপারের গ্রামগুলো নিয়ে ছাতিরচর নামে নতুন আরেকটি ইউনিয়ন গঠিত হয়। এরপর থেকে সেখানে লোকজনের বসতি বাড়তে থাকে। বর্তমানে ছাতিরচর ইউনিয়নে ২২শ’ পরিবার বাস করছে। পরিবারগুলো প্রতিবছর বর্ষায় ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। গত বছর থেকে এ পর্যন্ত আট শ’ পরিবার ভাঙ্গনে উচ্ছেদ হয়েছে। তারা বসতভিটা হারিয়ে এখন ঢাকার কামরাঙ্গীরচর ও চট্টগ্রামের পাহাড়ী এলাকায় গিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। এরপরও প্রতিবছর ছাতিরচরে নতুন নতুন দরিদ্র পরিবার বসতি গড়ে প্রকৃতির সঙ্গে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করে যাচ্ছে। নতুন যারা বসতি স্থাপন করছে তারা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনের। স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ অনেকে জানান, প্রায় ৪০ বছর ধরে এলাকাটি ভাঙ্গনের কবলে পড়ে দিন দিন গ্রামগুলোর আয়তন ছোট হয়ে আসছে। ছাতিরচর নতুন ইউপিতে রূপান্তরিত হওয়ার পর দীর্ঘদিন নির্বাচিত চেয়ারম্যান নিজ বাড়িতে বসেই পরিষদের কার্যক্রম চালাতেন। এখানে কর্মরত সচিবরা এলাকায় না থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ সারতে মাঝে মাঝে এলাকায় আসেন। মূলত বসার জায়গার অভাবেই সচিব এলাকায় থাকতে চান না বলে জানা গেছে। এনজিও কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন খান জানান, হাওড়াঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য-শিক্ষা, স্যানিটেশন, নিরাপদ সুপেয় পানির অভাব রয়েছে। তাছাড়া সচেতনতার অভাবে এখানে প্রায়ই বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটছে। বর্তমানে স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতায় বেসরকারী সংস্থা কাজ করায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। ছাতিরচর ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে কিছুদিন হলো দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি। আগে বাড়িতে বসে কাজকর্ম করলেও এখন পরিষদের ২০ শতাংশ জায়গায় দোচালা টিনের ঘরে পরিষদের কার্যক্রম চলানো হচ্ছে।
×