সমুদ্র হক ॥ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটক এখন বাংলাদেশকে নিরাপদ মনে করে আসতে শুরু করেছেন। আগে যে ভয় ছিল তা কেটে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর শক্ত অবস্থানে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষতায় এবং জঙ্গীদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অবস্থানে বিদেশীরা এই দেশে এসে আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান করছেন। ইতোমধ্যে ঢাকায় আন্তর্জাতিক কয়েকটি অনুষ্ঠান হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় আগামী বছরের পুরোটা সময় বগুড়ার মহাস্থানগড়ের কালচারাল রাজধানীকে ঘিরে শুধু বগুড়া নয় সারাদেশই উৎসবের আমেজে থাকবে। বগুড়া পরিণত হবে উৎসবের নগরীতে। এই উৎসবে শরিক হবে সার্কভুক্ত সকল দেশ। একই সঙ্গে বিশ্বের বৌদ্ধ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা সকল দেশের পর্যটক এই দেশে আসবে। এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। শনিবার দিনভর মহাস্থানগড়ে সার্ক কালচারাল সিটিকে ঘিরে আগামী বছরের উদযাপন পরিকল্পনা ও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সফল আয়োজনের লক্ষ্যে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর মহাস্থানগড় পরিদর্শন শেষে বিকেলে বগুড়া সার্কিট হাউসে সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সার্ক কালচারাল ক্যাপিটালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আরও কতভাবে সাজানো যায় এবং ভরবছর কি ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যায় তার মতামত নেন।
মন্ত্রী শনিবার সকালে বিমানযোগে সৈয়দপুর অবতরণের পর মোটরগাড়িযোগে দুপুরে মহাস্থানগড়ে পৌঁছলে পাহাড়পুর এলাকার আদিবাসী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী তাকে সংবর্ধনা দেয়। মন্ত্রী নূর প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার অবতরণে হেলিপ্যাড নির্মাণ ও জনসভার স্থান নির্ধারণ করে দেন। আগামী ২১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহাস্থানগড়ে সার্ক সাংস্কৃতিক রাজধানীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। উল্লেখ্য ২ হাজার ১৫ সাল হতে সার্কভুক্ত দেশের কোন একটি শহরকে এক বছরের জন্য সাংস্কৃতিক রাজধানী হয়ে থাকার রেওয়াজ চালু হয়েছে। ওই বছর প্রথম এই সুযোগ পায় আফগানিস্তানের বামিয়ান শহর। ২ হাজার ১৭ সালে পরবর্তী সাংস্কৃতিক রাজধানীর মর্যাদা দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের বগুড়ার মহাস্থানগড়কে।
সুধী সমাবেশে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, এক জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশে বিশ্বের যে পর্যটকগণ আসেন তারা শুধু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখতে আসেন না। বিশ্বের অনেক দেশেই সমুদ্র সৈকত আছে। শতকরা ৭৫ থেকে ৮০ জন পর্যটক আসেন বৌদ্ধদের স্থাপনা ও কীর্তি দেখতে। বিশ্বে বৌদ্ধরা মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, জাপান হয়ে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এই বৌদ্ধদের কাছে বড় আসন করে নিয়েছে বগুড়ার মহাস্থানগড়। যেখানে রয়েছে বৌদ্ধদের অনেক কীর্তি। যা প্রতœ খননে বের হয়ে আসছে। সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী ঘোষণার পর বিশ্বের বৌদ্ধরা বাংলাদেশে আসবে। এমনটি আশা করা হয়েছে।
বগুড়ার মহাস্থানগড় পরিদর্শন ও সুধীজনের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সঙ্গে ছিলেন সংস্কৃতি সচিব আকতারী মমতাজ, প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক আলতাফ হোসেন। বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোঃ আশরাফ উদ্দিনের সঞ্চালনায় সুধীজনদের অনুষ্ঠানে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা তিনটি পর্বে সাংস্কৃতিক রাজধানীর পরিকল্পনার পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন। এ সময় জানানো হয় বগুড়া উৎসবের নগরীতে পরিণত হবে। সাউথ এশিয়ান মিউজিক ফেস্টিভ্যাল, ফুড ফেস্টিভ্যাল, হস্তশিল্পের প্রদর্শনী, চিত্র প্রদর্শনী, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন, কবিতা উৎসব, সাহিত্য উৎসব, সঙ্গীত উৎসব, চলচ্চিত্র প্রদর্শন, প্রতœমেলা লোকজ ও বাঙালীর ঐতিহ্যের সকল সংস্কৃতির প্রদর্শনী হবে। অনুষ্ঠানগুলো শুধু বগুড়াতেই নয় দেশের সকল স্থানে অনুষ্ঠান হবে তবে বগুড়ার আয়োজনে তা যোগ হবে। পহেলা বৈশাখ, বসন্ত উৎসব, নবান্নের উৎসব সংযুক্ত হবে সাংস্কৃতিক রাজধানীর উৎসবের সঙ্গে। প্রাধান্য দেয়া হবে মুক্তিযুদ্ধকে। সার্ক সাংস্কৃতিক আয়োজনে একুশের অনুষ্ঠান স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
সাংস্কৃতিক রাজধানীকে কি করা যায় এর ওপর বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না বগুড়ার আঞ্চলিক গান পুতুল নাচসহ হারিয়ে যাওয়া সকল ঐতিহ্য তুলে ধরার আহ্বান জানান। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের মানুষ সাংস্কৃতিক রাজধানীর আয়োজনকে ঘিরে নানা বিষয় উপস্থাপন করেন। মন্ত্রী বলেন, সকল মতামত গ্রহণ করে সাংস্কৃতিক রাজধানীকে ঘিরে আগামী একটি বছর কিভাবে বগুড়াসহ সারাদেশকে উৎসবের আমেজে পরিণত করা যায় তার সবই করা হবে। তিনি সকল সাংস্কৃতিক কর্মীসহ কালচারাল মাইন্ডেড সবাইকে তাদের সৃষ্টিশীল কর্ম উপস্থাপনের প্রস্তুতি নিতে বলেন। এত বড় সুযোগে দেশের ক্রিয়েটিভরা অবশ্যই এগিয়ে আসেব এমনটি আশা করেন তিনি।