ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

স্থানীয় জনতা ও পুলিশের সমন্বিত অভিযান

মাত্র দশ দিনেই বিহারী ক্যাম্প মাদকমুক্ত

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৪ ডিসেম্বর ২০১৬

মাত্র দশ দিনেই বিহারী ক্যাম্প মাদকমুক্ত

গাফফার খান চৌধুরী ॥ মাত্র দশ দিনে ঢাকার মোহাম্মদপুরের উর্দুভাষী অবাঙালীর বসবাসের ক্যাম্পগুলো সস্ত্রাসী ও মাদক মুক্ত করে রীতিমতো চমক সৃষ্টি করেছে পুলিশ, ক্যাম্পবাসী ও স্থানীয় জনতা। অভিযানে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসী ও মাদকের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত জোন ‘এ’ নামের ক্যাম্প থেকেই ৩২জন গ্রেফতার হয়েছে। যাদের অধিকাংশই বিভিন্ন সন্ত্রাসী মামলার আসামি ও মাদক ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে ১২ জনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছেন ক্যাম্পবাসী ও স্থানীয় জনতা। আর ২০ জন পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে। এমন ঘটনায় আতঙ্কে মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীরা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়েছে। মোহাম্মদপুরে থাকা অন্য পাঁচটি ক্যাম্প থেকে একই কায়দায় মাদক নির্মূল ও সন্ত্রাসী গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে। তবে এমন চমক কতদিন থাকবে, তা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সন্ত্রাসী, পেশাদার অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ী, জঙ্গী ও বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামির বিরদ্ধে এমন অভিযান চালানো হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকায়ও সাঁড়াশি অভিযান চলছে। বিশেষ অভিযান চলছে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পগুলোতে। ক্যাম্পগুলো দীর্ঘদিন ধরেই দেশী- বিদেশী অপরাধীর আত্মগোপনের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে পরিচিত। ক্যাম্পগুলো মাদকের স্বর্গরাজ্য হিসেবেও কুখ্যাতি ছড়িয়েছে। মাদক ব্যবসা এবং পলাতক সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে চালানো অভিযানের সূত্র ধরে মাঝেমধ্যেই ক্যাম্পগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ গত ১০ নবেম্বর জোন-এ নম্বর ক্যাম্পে অভিযানের সূত্র ধরে পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও আর্মড পুলিশের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশ গুলি চালায়। ক্যাম্পগুলো থেকে মাদক নিমর্ূূলসহ ও পলাতক সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়। ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার ক্যাম্প থেকে মাদকের আগ্রাসন সরাতে এবং আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে ক্যাম্প নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয়দের সঙ্গে টানা পাঁচদিন মতবিনিময় সভা করেন। সভায় উপস্থিত থাকা মোহাম্মদপুর থানার ওসি মোঃ জামাল উদ্দিন মীর জনকণ্ঠকে বলেন, মতবিনিময় সভার ধারাবাহিকতায় জোন-এ নম্বর ক্যাম্পের নয়টি সেক্টরের ইনচার্জদের প্রধান করে নয়টি মাদকবিরোধী কমিটি গঠন করা হয়। প্রতি কমিটিতে ১০ জনকে সদস্য করা হয়। মাদক নির্মূল কমিটি, ক্যাম্পের নেতৃবৃন্দ ও জনতা ইতোমধ্যেই ১২ জনকে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। পুলিশও অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত ৩২ জনই মাদক ছাড়াও বিভিন্ন সন্ত্রাসী মামলার আসামি। এমন ঘটনায় ক্যাম্প ছেড়ে পালাচ্ছে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা। মাদকের সঙ্গে জড়িত এবং সন্ত্রাসীদের আনাগোনা ঠেকাতে ক্যাম্পের ভেতরের অনেক বিতর্কিত দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, বিজয় দিবসের নিরাপত্তার পাশাপাশি আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসী, পেশাদার অপরাধী, দেশী-বিদেশী জঙ্গীকে গ্রেফতার করতে মোহাম্মদপুরের উর্দুভাষী অবাঙালীদের বিহারী ক্যাম্পগুলোকে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। ইতোমধ্যেই জোন-এ নম্বর ক্যাম্পটি প্রায় শতভাগ মাদক ও সন্ত্রাসী মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। অন্য ক্যাম্পগুলোতেও ধারাবাহিক অভিযান চলছে। ক্যাম্পটির চেয়ারম্যান এসকে গোলাম জিলানী জনকণ্ঠকে বলেন, মাদক ব্যবসায়ী ও আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের ধরে পুলিশে সোপর্দ করতে নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাঁড়াশি অভিযানের মুখে ক্যাম্প ছেড়ে মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে মাদক ব্যবসা। সরেজমিনে ক্যাম্পে গিয়ে দেখা গেছে, অন্যান্য শুক্রবারের মতো জোন-এ ক্যাম্পে কোন ভিড় নেই। অথচ এক সময় ক্যাম্পটিতে একপ্রকার মাদকের হাট বসত। নিরাপদ আস্তানা হিসেবে অনেকদূর থেকে মাদকসেবীরা সেখানে যেত। ক্যাম্পটির অলিগলি ঘুরে দেখা গেছে, কোন ভিড় নেই। মাদক বিক্রি বা সেবনকারীর হাঁকডাকও নেই। কারণ জানতে চাইলে অনেকেই যা বললেন, তা চমকে ওঠার মতো। বললেন, মাদক সেবন বা কিনতে এসে থাকলে দ্রুত কেটে পড়ুন। অন্যথায় নির্ঘাত জেলের ঘানি টানতে হবে। অলিতে গলিতে মাদকবিরোধী টিম পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ী আর সেবী কাউকেই ছাড়ছে না। সোজা পুলিশে সোপর্দ করছে। ক্যাম্পের বাসিন্দা এমন ঘটনায় রীতিমতো খুশি। তারা বলছিলেন, মাদকের অবাধ সেবন ও বেচাকেনা হওয়ায় বিশেষ করে উঠতি বয়সী মেয়েরা আর স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছিল না। তা থেকে আপাতত মুক্তি মিলেছে। তবে এমন মুক্তি কতদিন থাকবে, তা নিয়ে অবশ্য আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেক ক্যাম্পবাসী।
×