ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আন্তরিকতা নিয়ে প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়ান॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৪ ডিসেম্বর ২০১৬

আন্তরিকতা নিয়ে প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়ান॥ প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকার সব প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধকে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা ব্যবস্থার আওতায় আনতে জীবনচক্রভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকলের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা আন্তরিকতা ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পাশে দাঁড়ান। প্রতিবন্ধীরা আমাদের আপনজন, আমাদেরই সন্তান। কাজেই তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেয়া, সমাজে তাদের একটা সম্মানজনক অবস্থান সৃষ্টি করা এবং তাদের আরও সুন্দরভাবে বাঁচার সুযোগ করে দেয়াই আমাদের কর্তব্য। প্রতিবন্ধীদের সহায়তায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি। শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২৫তম আন্তর্জাতিক ও ১৮তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মোঃ নুরুজ্জামান আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের সভাপতি রজব আলী খান নজিব এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব জিল্লুর রহমান। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনটি ক্যাটাগরিতে নয় ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মধ্যে ক্রেস্ট ও সনদপত্র বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানস্থল থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের সঙ্গে কথা বলে মিরপুর-১৪ নম্বর সেকশনে আট দিনব্যাপী প্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণে আয়োজিত ‘প্রতিবন্ধী উত্তরণ মেলা’ উদ্বোধন করেন। জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি স্কুলে প্রতিবন্ধী শিশুর শিক্ষা অর্জনের ব্যবস্থা থাকতে হবে, যাতে আর দশটা স্বাভাবিক শিশুর সঙ্গে মিশে তারা শিখতে পারে। সমাজের মূল ধারায় সম্পৃক্ত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক, চিকিৎসা ও শিক্ষা সহায়তা দেয়া হবে। রাস্তাঘাট, ফুটপাথ ও নতুন অবকাঠামো যেখানেই হচ্ছে সেখানে প্রতিবন্ধীদের সহজে চলাচলের জন্য পৃথক লেন, এমনকি টয়লেট তৈরি করাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের জন্য পথ প্রশস্ত করতে কর্পোরেট সেক্টর, সমাজের বিত্তবান মানুষসহ সব পেশাশ্রেণীর মানুষকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অনেক বিত্তবানই আছেন যারা টাকা খরচের আর জায়গা পান না। আবার অনেকের ছেলেমেয়ে রয়েছে যারা জীবনে চাওয়ার কিছুই না পেয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের পথে চলে যায়। কাজেই সেই বিত্তবানদেরও আমি বলব, তারা যদি এই ধরনের প্রতিবন্ধীর সহায়তায় এগিয়ে আসেন, তাহলে সমাজ এতে উপকৃত হবে। নিজেরাও উপকার পাবেন এবং সবাই আল্লাহর রহমত পাবেন । পঁচাত্তরে পরিবারের সবাইকে ও সবকিছু হারানোর পরও দেশে ফিরে নিজেদের সম্পদ জনগণের বিশেষ করে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে ব্যয় করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেনে, প্রতিবন্ধীসহ অনগ্রসর-অবহেলিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সবকিছু বিলিয়ে দিয়েছি। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীসহ অনগ্রসর-অবহেলিত জনগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণের কথা সংবিধানেই রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের সংবিধানে জাতির জনক শুধু সংবিধানেই এর সংযোজন ঘটাননি, প্রতিবন্ধীদের ভাগ্যের উন্নয়নের সকল পদক্ষেপ নেন। শেখ হাসিনা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপের ফলে আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি। এমডিজি বাস্তবায়ন করেছি, এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। কাজেই বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। আর সেই সঙ্গে এই প্রতিবন্ধীতার বিষয়টাকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকের অন্তত এটুকু চিন্তা করা উচিত: প্রতিবন্ধী তো কেউ ইচ্ছে করে হয়নি। কাজেই তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে, আন্তরিক হতে হবে, তাদের সহযোগিতা করতে হবে। বিশ্বের অনেক প্রতিভাবান বিজ্ঞানী, সঙ্গীতজ্ঞ, কবি ও লেখক প্রতিবন্ধিতার শিকার মনীষীদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী অন্য সবার মতো প্রতিবন্ধীদেরও মেধা বিকাশের সুযোগ করে দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, যারা অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী আছেন তাদের ভেতরেও এ রকম সুপ্ত মেধা থাকতে পারে, যেটা বিকশিত হবার সুযোগ আমাদের করে দিতে হবে। আমাদের প্রতিবন্ধীরা ক্রিকেট খেলা থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে অবদান রাখছে। তারা বিদেশ থেকে স্বর্ণপদকও লাভ করেছে। স্পেশাল অলিম্পিকে ২১ টি স্বর্ণ পদকসহ প্রায় ৭৬টি পদক নিয়ে এসেছিল প্রতিবন্ধীরা। তাদের খেলাধুলার বিকাশের জন্য তার সরকার ইতোমধ্যেই কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকার অদূরে ১২ একর জমিতে ৩শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকার প্রতিবন্ধী ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া সংসদ ভবনের পাশেই প্রতিবন্ধীদের অনুশীলনের জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলেও জানান। শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য আইন ও বিধিমালা প্রণয়নসহ তাদের অধিকার আদায়ে সহায়তা করছে সরকার। এমনকি শিক্ষা নীতিমালাতেও প্রতিবন্ধীদের অধিকারের বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক জরিপ অনুসারে বর্তমানে দেশে প্রায় ১৫ লাখ প্রতিবন্ধী রয়েছে। আমরা একটা নেটওয়ার্ক করতে চাই সেই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের ভাতার ব্যবস্থা, চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং শিক্ষার সুযোগ প্রদান করা হবে। তার সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সামাজিক নিরাপত্তা খাত ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারণ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সাড়ে ৭ লাখ অসচ্ছল প্রতিবন্ধীকে মাথাপিছু মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫শ’ ৪০ কোটি টাকা। আমাদের সরকার বিসিএসসহ প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য ১ শতাংশ এবং ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর চাকরিতে ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করছে। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের আওতায় প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের থেরাপি, সহায়ক উপকরণ, শ্রবণ পরীক্ষা, কাউন্সেলিং ও রেফারেলসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রুধানমন্ত্রী। দেশের অটিজম আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ায় তার কন্যার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্লোবাল অটিজম পাবলিক হেলথ ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন সায়মা হোসেন পুতুলের পরামর্শ ও দিক নির্দেশনায় বর্তমান সরকার দেশে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী ও অসামর্থ্যবানদের পুনর্বাসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
×