ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যাস্ট্রোর মৃত্যুর পর বিষয়টি প্রতীয়মান হয়

প্রজন্ম ব্যবধান বেড়েই চলেছে কিউবায়

প্রকাশিত: ০৪:০১, ৪ ডিসেম্বর ২০১৬

প্রজন্ম ব্যবধান বেড়েই চলেছে কিউবায়

লাতিন আমেরিকার দেশ কিউবায় প্রজন্ম ব্যবধান বেড়েই চলেছে। ফিদেল ক্যাস্ট্রোর মৃত্যুর পর বিষয়টি ভালভাবে প্রতীয়মান হয়ে উঠেছে। প্রথম প্রজন্ম ১৯৫৯ সালের আগে বিপ্লব পূর্ববর্তী দারিদ্রতাকে স্মরণ করেন। আর তরুণ প্রজন্ম বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও শিক্ষার প্রশংসা করলেও তারা ভয় পাচ্ছে এটি তাদের একবিংশ শতাব্দীতে পেছনে নিয়ে যাচ্ছে কিনা তা নিয়ে। বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও শিক্ষাকে ক্যাস্ট্রো সরকারের সফলতা হিসেবে দেখানো হয়ে থাকলেও বিশ্লেষকরা বলছেন দেশটিতে অর্থনীতি কখনই সেভাবে বিকশিত হয়নি। এর একটি কারণ যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত দীর্ঘমেয়াদী নিষেধাজ্ঞা, বিপুলহারে কিউবানদের দেশত্যাগ ও সৌভিয়েত ইউনিয়নের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীলতা। কিউবায় যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে বিদেশী পর্যটকদের আসা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯১ সালে সৌভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে পড়ায় কিউবা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। প্রথম প্রজন্মের লোকেরা বিপ্লবের প্রথম দিকের অবস্থা বর্ণনা করেন। তাদেরই একজন হলেন জুলিও লোপেজ (৭৭) ১৯৫৬ সালে যখন ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে দেখা করেন তখন তিনি ক্ষুধার্ত ও খোলা পায়ের ১৪ বছর বয়সী এক কিশোর ছিলেন। সে সময় ক্যাস্ট্রো সিয়েরা মাদ্রি পাহাড়ে তার বিপ্লব শুরু করেছেন মাত্র। তিনি ক্যাস্ট্রোকে যিশু খ্রিস্টের মতো মনে করেন ও তার জীবনে কঠোর পরিশ্রমের ফলে বঞ্চনার পথ রোধ হয়েছে বলে মানেন। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত ফুলজেনসিও বাতিস্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগের অবস্থা সম্পর্কে লোপেজ বলেন, আমরা ১২ ভাই ছিলাম। আমরা নোংরা একটি মেঝেতে ঘুমাতাম। যা আগুন দিয়ে গরম রাখা হতো। আমাদের কোন ওষুধ ছিল না। সে সময়টা ছিল চরম দারিদ্র্যতার। নিরক্ষর ছিলাম। বিপ্লব শেষে কিউবায় এমন কোন শিশু ছিল না যারা স্কুলে যায়নি। ক্যাস্ট্রোর মৃত্যুর পর তার কাজের সফলতার কথা সবাই স্বীকার করলেও অসমাপ্ত কাজগুলো করা খুব কঠিন বলে মনে করেন তারা। তাদের মতে, এজন্য অর্থনৈতিক পরিবর্তন জরুরী। এখনই সময় দ্বীপদেশটির সমাজতান্ত্রিক সরকারের অর্থনৈতিক পরিবর্তন করা। প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ট্রোর ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে দেশটিতে অর্থনৈতিক সংস্কার করা হয়েছে। যাতে ব্যক্তি মালিকানার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে তা খুব ধীর গতিতে হচ্ছে। তরুণ কিউবানরা বিষয়টি নিয়ে খুব সচেতন হয়ে উঠেছে। তারা জনসমক্ষে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে। বিশ্ব যেখানে একসঙ্গে যুক্ত সেখানে কেন কিউবা থাকবে না তা নিয়ে ভাবনা শুরু হয়ে গেছে। তরুণ প্রজন্মের মতে, রাজনৈতিক দিক থেকে ফিদেল অবশ্যই সম্মানিত ব্যক্তি। রাজনীতিকে অর্থনীতির আগে রাখলে অর্থনৈতিক পরিবর্তন সম্ভব নয়। আমরা উত্তর কোরিয়ার মতো হয়ে থাকতে চাই না। অধিকাংশ কিউবান শুধু জানেন সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিতে অর্থনীতি যোগ করে বিষয়টিকে ঘোলাটে করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে হয়েছে। বর্তমান প্রজন্ম বিশেষ করে তরুণ কিউবানরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিবর্তনের সম্ভাব্যতা দেখে সংস্কার চাচ্ছে। পরিবর্তন হতে হবে ভালভাবে ও সময়মতো। -ভয়েস অব আমেরিকা ও এএফপি
×