ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এক চীন নীতি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত

তাইওয়ানের দিকে ঝুঁকছেন ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৪:০০, ৪ ডিসেম্বর ২০১৬

তাইওয়ানের দিকে ঝুঁকছেন ট্রাম্প

পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর দেশটির সঙ্গে যে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি গড়ে উঠেছিল তা থেকেও সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে তার এ সংলাপে এবং এ সঙ্গে সৃষ্টি হলো চীনের সঙ্গে মারাত্মক বিরোধকে উসকে দেয়ার ঝুঁকি। খবর বিবিসি ও এএফপির। ট্রাম্পের টেলিফোন কল ওয়াশিংটনের সরকারী ‘এক চীন’ অবস্থানের ভারসাম্য নীতি থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরে যাওয়া কি-না তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়। কিন্তু এ কল বেজিংকে ক্ষুব্ধ করবে এবং বেশ আশঙ্কার সৃষ্টি হবে যে, তিনি এক এ্যাডহক পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করছেন। চীন স্বশাসিত তাইওয়ানকে বিবেচনা করে এর দেশের একটি অংশ হিসেবে এবং বেজিংয়ের শাসনাধীন একত্রীকরণের অপেক্ষায় রয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের কোন উদ্যোগ যা তাইওয়ানের স্বাধীনতার প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থন যোগায় তা উত্তেজিত করবে চীনকে। ট্রাম্পের অফিস থেকে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ও সাইয়ের সংলাপে তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পর্ক বিষয়ে ওঠে এসেছে। ট্রাম্প এক টুইটে বলেছেন, মার্কিন নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় সাই আজ আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে তার হস্তান্তর টিম বলেছে যে, তাইওয়ানে জানুয়ারির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় সাইকে অভিনন্দন জানিয়েছে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টও। ওয়াশিংটন ১৯৭৯ সালে বেজিংয়ে ‘এক চীন’ নীতির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে তাইওয়ানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। তাইওয়ান চীনের একটি অংশ, চীনের এ নীতির গৃহীত নয় প্রেসিডেন্ট সাইয়ের প্রশাসনের কাছে। প্রশাসন তাইপে ও বেজিংয়ের মধ্যকার সম্পর্কে পরিবর্তনে প্রত্যাশী। তাইওয়ানের প্রথম নারী নেতা প্রেসিডেন্ট সাই ডেমোক্র্যাটিক প্রগেসিভ পার্টির (ডিপিপি) নেতৃত্বে রয়েছেন এবং দলকে নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয় এনে দিয়েছেন। ডিপিপি ঐতিহ্যগতভাবে চীনের কাছ থেকে স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। সাইয়ের প্রতি ট্রাম্পের অভিনন্দনে চীন ক্রোধান্বিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে মিডিয়ায় রিপোর্টে প্রকাশিত হওয়ার পর ট্রাম্প এক টুইটে বলেন, মজার ব্যাপার যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে শত শত কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করল তাইওয়ানের কাছে। আর একটি অভিনন্দন জ্ঞাপন কল গ্রহণ করা উচিত হবে না আমার পক্ষে। ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর চীনের প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের সঙ্গেও কথা বলেছেন। সাইয়ের কাছে ট্রাম্পের টেলিফোনের দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস। ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, চীন-তাইওয়ান প্রশ্নে আমাদের দীর্ঘদিনের নীতির কোন পরিবর্ত হয়নি এবং তিন যৌথ ইশতেহার তাইওয়ান রিলেশন এ্যাক্টভিত্তিক আমাদের ‘এক চীন’ নীতির প্রতি দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র। এখনও তাইওয়ানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। ট্রাম্পের মুখপাত্র বলেছেন, তাইওয়ানের সঙ্গে মার্কিন নীতি সম্পর্কে ভাল করেই সজাগ রয়েছেন ট্রাম্প। চীন কয়েক শ’ ক্ষেপণাস্ত্র তাক করে রেখেছে তাইওয়ানের দিকে এবং তাইওয়ান স্বাধীনতা অর্জনের চেষ্টা চালালে এর বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের হুমকি দিয়ে এসেছে। বেজিং এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোন মন্তব্য প্রকাশ করেনি। ইতোমধ্যে ট্রাম্প ফোনে কথা বলেছেন ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতের্তের সঙ্গেও। তিনি আগামী বছর হোয়াইট হাউস সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন দুতের্তেকে। দুতের্তের সহযোগীদের একজন এ কথা বলেছেন। দুতের্তে এ বছরের প্রথম দিকে প্রেসিডেন্ট ওবামার বিরুদ্ধে বেশ কিছু আপত্তিকর মন্তব্য করলে ওবামা তার সঙ্গে এক বৈঠক বাতিল করে দেন। চীন তাইওয়ানের ব্যাপারে কোন দর কষাকষিতে যেতে প্রস্তুত নয়। কোন চীনা নেতাকেও একটি বিষয়ে পশ্চাদাপসরণ করতে দেখা যায় না, যা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে যুদ্ধে টেনে নামাতে পারে। ট্রাম্পের এশিয়া বিষয়ক কয়েকজন ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা মনে করেন বিভিন্ন মার্কিন প্রশাসন বেজিংয়ের অভিলাষ পূরণের এক উপায় হিসেবে গণতান্ত্রিক তাইওয়ানের সম্পর্ক বিসর্জন দিয়েছে। ওই উপদেষ্টাদের একজন ইউসি আর্ভাইসের অর্থনীতির অধ্যাপক পিটার নাভারো বলেন, ওয়াশিংটনের কর্মকর্তাদের ‘এক চীন’ নীতির উল্লেখ বন্ধ করতে হবে এবং চীনের উত্থানের বিরুদ্ধে সামরিক ভারসাম্যের জন্য তাইওয়ানকে ব্যবহার করতে হবে। সম্প্রতি ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট সাময়িকীতে এক নিবন্ধে নাভারো প্রস্তাব করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তাইওয়ানের ডিজেল সাবমেরিন শক্তি গড়ে তোলা এবং মার্কিন কেবিনেট সদস্যসহ উচ্চ পর্যায়ের সফর সম্প্রসারণে সুযোগ সৃষ্টি করা।
×