ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আবুল মাল আবদুল মুহিত

সুদীর্ঘ ষাট বছরের বিচিত্র কর্মজীবন

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ৪ ডিসেম্বর ২০১৬

সুদীর্ঘ ষাট বছরের বিচিত্র কর্মজীবন

চতুর্থ অধ্যায় মহামান্য ব্রিটিশ রানী এলিজাবেথের বাংলাদেশ সফর এবং বাংলাদেশে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী উৎসব উদ্্যাপন (গতকালের পর) ১৯৬১ সালে আগস্ট মাসে আমার বড় ভাই আমাদের গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি বিদেশে পাড়ি দেন। তিনি টেক্সাস এ. এম. কলেজে উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারি বৃত্তি পেয়ে গমন করেন। এই কলেজটি বর্তমানে টেক্সাস এগ্রিকালচারাল এন্ড মেকানিক্যাল ইউনিভার্সিটি। তাকে বিদায় দেবার জন্য আমাদের পরিবারের সকলে ঢাকায় আসেন। তার বিদেশ যাত্রার অব্যবহিত পরে আমার চাচা আবদুল মতিন (পূর্ব পাকিস্তান পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন সংস্থা ডঅচউঅ-তে পানি কমিশনার ছিলেন) আমার আব্বাকে একদিন জানালেন যে, তার ভ্রাতুষ্পুত্র এবং ভগ্নীকন্যা একে অন্যকে পছন্দ করে এবং তাদের বিয়ে দেয়া সমীচীন হবে। আমার আব্বার জবাব ছিল ‘তাই নাকি। তাহলে এনগেইজমেন্টের একটা ব্যবস্থা এখনই করতে পারি এবং আমরা ঢাকায় থাকতে এই আয়োজন কর।’ আমি পরে জেনেছি, আমার আব্বা এই বিয়েতে তেমন উৎসাহী ছিলেন না কারণ তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা বিবেচনা করে আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বিয়েতে আগ্রহী ছিলেন না। কয়েকদিনের মধ্যেই এনগেইজমেন্ট পর্ব সম্পাদিত হলো। তখনকার দিনে এই পর্বটি অন্য রকমের ছিল। প্রথমত এইটি ছিল একান্তই পারিবারিক বিষয়। পরিবারের বাইরে আমার মনোনীত ২/৪ জন বন্ধু এবং বান্ধবী ছিলেন। তারা মেয়ের বাড়িতে কিছু মিষ্টি নিয়ে হাজির হলেন। সেখানে মোটামুটি দু’টি বিষয়ে আলোচনা হলো। একটি হলো দেন-মোহরানা কত হবে এবং অন্যটি হলো বিয়ের তারিখ কি হতে পারে। রাতে খাওয়া-দাওয়া করে এনগেইজমেন্টের পার্টি আমার বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করলেন। আমি ঢাকায় পদায়িত হওয়ার পরে প্রায় প্রতিদিনই একবার আমার হবু স্ত্রীর বাড়িতে যেতাম। সম্ভবত. ২৫ অক্টোবরের পরে আমার বিয়ের তারিখ পর্যন্ত আমি আর আরমানিটোলামুখী হইনি। এই সময়টিতে বিয়ের জন্য দাওয়াতপত্র ঠিকঠাক করা, প্রেরণ করা, বিয়ের তিন-তিনটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা নিয়ে ব্যস্ত থাকি। অবশ্যি সিলেটের আয়োজন করা নিয়ে আমাকে কিছুই করতে হয়নি। শুধু দুই টিন ঘি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আমাকে পাঠাতে হয়। ১৯ নভেম্বর আমার বিয়েতে বরযাত্রীর সংখ্যা আমাদের নির্দিষ্ট করতে হয়। কিন্তু তাতেও প্রায় আড়াইশ’ বরযাত্রী আমাকে সঙ্গ দেন। আমার ওয়ালিমা অনুষ্ঠানে আমার অতিথি ছিলেন প্রায় ৬০০। সে সময় ঢাকায় এত লোকের উপস্থিতিতে কোন বিয়ে হতো না। এত উপস্থিতির প্রধান কারণ ছিল যে, আমার পরিচিতির বলয়টি ছিল অতি বিস্তৃত। আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধব ছাড়াও কার্যোপলক্ষে বা বিভিন্ন আড্ডার মাধ্যমে (ছাত্র প্রতিষ্ঠান, গান-বাজনার আসর, সাহিত্য সভা ইত্যাদি) আমার বন্ধু-বান্ধব এবং শুভানুধ্যায়ীর সংখ্যা খুবই বেশি ছিল। ঢাকার গণ্যমান্য প্রায় সবাই আমার বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন। লাট সাহেব জেনারেল এম আজম খান, পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যসচিব কাজী আনোয়ারুল হক, সেনাবাহিনীর এঙঈ খাজা ওয়াসিউদ্দিন, পাকিস্তানের অবসরপ্রাপ্ত বড় লাট ও প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন, প্রাক্তন মন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূত তফাজ্জুল আলী, ঢাকা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আমিন আহমদ, ঢাকার কমিশনার ওয়াহেদ বকস কাদরি, প্রাদেশিক সচিব গিয়াসউদ্দিন আহমদ, সফিউল আজম এবং আবুল মওলা ফয়জুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মাহমুদ হোসেন প্রমুখ সবাই এতে উপস্থিত থাকার বিষয়টি দৈনিক সংবাদপত্র গড়ৎহরহম ঘবংি এর ঝড়পরধষ ঈড়ষঁসহ লেখক অনারারি মেজর মহসিন উদ্দিন খান মন্তব্য করেন যে, It was the marriage of the year... Presence in the Walima Reception reflected that aûbody of importance and power across the society were there. বিয়ের আয়োজনে নিজ থেকেই সেই সময়কার একজন সংবেদনশীল সজ্জন ব্যক্তি পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল শামসুল আলম সব সময় দেখাশোনা করেন। কারা দাওয়াত পাচ্ছেন, রান্নাবান্নার কি ব্যবস্থা, শামিয়ানা কোথায় হচ্ছে সব বিষয়ে ছিল তার নজর। রান্নাবান্নার ভার ছিল কলকাতা থেকে ঢাকায় হিজরত করা প্রসিদ্ধ লোলা বাবুর্চি। আর রান্নাঘরের স্বেচ্ছা নিয়োজিত তদারক ছিলেন সিলেট থেকে আগত আব্বার বন্ধু আমাদের ফুলবাড়ীর চাচা মাহবুবুল কাদির চৌধুরী ওরফে মুবই মিয়া। বিয়ের আগে প্রায় ৪ নভেম্বর থেকে শুরু করে বিয়ের পর সিলেটের অনুষ্ঠান থেকে প্রত্যাবর্তন অর্থাৎ ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত বিশ দিন আমাকে অতি ব্যস্ত থাকতে হয়। আমার মনে পড়ে, বিয়ের রাতে যখন বিয়ের আসর থেকে আমার বাড়িতে ফেরার জন্য রওনা হলাম তখন তাৎক্ষণিকভাবে আমি ঘুমিয়ে যাই। এই অবসাদের শেষ হলো ২৫ নভেম্বর ঢাকা প্রত্যাবর্তনের পরে। কয়েকদিন পরে আমরা ট্রেনে চট্টগ্রাম গেলাম কক্সবাজারে মধুচন্দ্রিমা যাপনের উদ্দেশে। চট্টগ্রামে তখন আমার দুলাভাই সমবায় বিভাগের ডেপুটি রেজিস্টার (উপ-নিবন্ধক) ছিলেন। তার বাসায় আমাদের এক রাত থাকার কথা ছিল। কিন্তু পরদিন সকালে আমার স্ত্রী একটু অসুস্থবোধ করেন। তাই আমাদের আরো অতিরিক্ত একদিন চট্টগ্রামে থাকতে হয়। ডাক্তার ইউসুফের পরিচর্যায় আমার স্ত্রী একদিনেই ভালো হয়ে উঠেন। ইনি পরবর্তীকালে লন্ডনে এক সময় আমাদের হাই কমিশনার ছিলেন। কক্সবাজারে এইটিই ছিল আমাদের প্রথম যাত্রা। আমি ইতিমধ্যে বাংলাদেশের অনেক শহরই কার্যোপলক্ষে ভ্রমণ করি। কিন্তু কক্সবাজারে আসার সুযোগ এর আগে কখনও হয় নি। কক্সবাজারে সমুদ্রতীরে একটি কটেজ ভাড়া নিয়েছিলাম। তখন সমুদ্রের খুব কাছেই একটি গেস্টহাউস ছিল যেখানে ৫০/৬০ জন অতিথি থাকতে পারতেন এবং সেখানে সব রকম খানাদানার ব্যবস্থা ছিল। তারই অদূরে ৪টি কটেজ ছিল, যার দেখাশোনা ঐ গেস্টহাউসই করতো। কটেজে ইচ্ছা করলেই রান্না-বান্নার ব্যবস্থা করা যেত; অন্যথায় গেস্টহাউস থেকে খাবার পাওয়া যেত। আমার মনে হয় কটেজ থেকে সমুদ্রের দূরত্ব ছিল খুব বেশি হলে ৫০০ গজের (১৭০ মিটারের) মত। আমরা ক’দিন মহানন্দে সমুদ্র স্থান উপভোগ করি। আমার স্ত্রীর জন্য এইটি ছিল তার জীবনে প্রথম অভিজ্ঞতা। অবশ্যি তিনি নানা বাড়িতেই বাল্যাবস্থায় সাঁতার শিখেন। আমি সাঁতারে বেশ পারদর্শী ছিলাম; বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রসিদ্ধ সাঁতারু আসাফুদ্দৌলার রিলে টীমে সদস্যও ছিলাম। সমুদ্র তীরটি ছিল একান্তই নির্জন। সারাদিনে হয়তো সেখানে বিস্তৃত এলাকায় একসঙ্গে ২০/২৫ জনের বেশি পরিব্রাজক থাকতেন না। কক্সবাজারে তখন মহকুমা হাকিম (এসডিও) ছিলেন হারুনুর রশীদ, সিএসপি। তার স্ত্রী ছিলেন একজন জার্মান মহিলা ইয়াসমিন এবং সম্ভবত তাদের ইতিমধ্যেই একটি সন্তান জন্মেছিল। হারুন আমার ঘনিষ্ঠজন ছিল এবং সে আমাদের কক্সবাজার ভ্রমণটিকে অত্যন্ত আনন্দময় করে তোলে। তার জীপে করে সমুদ্রের অত্যন্ত কাছে দিয়ে আমরা হিমছড়ি পর্যন্ত ঘুরে বেড়াই। সমুদ্রের কাছে দ্রুতগতি গাড়ি কিন্তু খুব ভালভাবে ড্রাইভ করা যেত। কারণ, পানির প্রভাবে বালির রাস্তা দ্রুতগতির যানবাহনের জন্য বেশ ভাল ছিল। কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল সে সময় অত্যন্ত নিরাপদ ছিল। আমার মনে আছে, একদিন দুপুর রাতে ১২টার পর আমরা সমুদ্র স্থান করি এবং তাতে ভয়ের কোন কারণ ছিল না। আমাদের মেয়েরা সে সময় খুব কমই সমুদ্র স্থানে যেতেন এবং তারা তাদের ব্লাউজ, শেমিজ এবং শাড়ি পরেই পানিতে নামতেন। আমার মনে হয়, ৩০ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা কক্সবাজারে অবস্থান করি। সেখান থেকে আবার গাড়ি করে চট্টগ্রাম প্রত্যাবর্তন করি এবং তার একদিন পরেই ঢাকায় ফিরে আসি। সম্ভবত তখন বিমানে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার যাওয়া যেত। তবে বিমানে ভ্রমণের কোন চিন্তা-ভাবনাই আমাদের মনে ছিল না। বস্তুতপক্ষে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ট্রেন ভ্রমণটাই খুব আরামদায়ক ছিল। বিয়ে সম্বন্ধে নাটক, নোবেল, কবিতা ইত্যাদি লেখা যায়। সেসবে না গিয়ে শুধু একটি কথায় বলবো, বিয়ে একটি মানুষকে একেবারে বদলে দেয়। আর একজন মানুষের সঙ্গে জীবন-যাপন করা ব্যক্তিজীবনে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করে। আমার মনে হয় একজন ব্যক্তি তখন অনেক উন্নত এবং পরিপূর্ণ জীবন-যাপন করতে সক্ষম হয়। সারাজীবন আরেকজন মানুষের সঙ্গে থাকতে গেলে নানা ধরনের সমঝোতা করতে হয়। সেই আরেকজনের জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের দায়িত্ব নিতে হয়। সেই আরেকজনের আচার-আচরণ, দৈনন্দিন চাল চলন, খেয়াল খুশী এসব শুধু জানতে ও বুঝতেই হয় না, তার সঙ্গে নিজের আচার-আচরণ ও ব্যবহারটিকে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। অথচ এত বড় পরিবর্তন শুধু ভালবাসা ও প্রেমের জন্যই সহজে সাধিত হয়। বিবাহিত জীবন সত্যিই বিধাতার একটি আর্শীবাদ। ১৯৬১ সালের একটি বড় বিষয় ছিল জোট নিরপেক্ষ রাষ্ট্র গোষ্ঠির জন্ম। যুগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রপতি মার্শাল যোসেফ ব্রজ টিটো কমিউনিস্ট ক্যাম্পের নেতা হলেও তিনি রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ববাদে তত স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন না। তিনি কমিউনিস্ট চিন্তাধারার মানুষ ছিলেন কিন্তু রাশিয়ার কর্তৃত্ব মানতে রাজি ছিলেন না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যদিও রাশিয়া, বৃটেন এবং আমেরিকা মিত্রশক্তির বড় বড় নেতা ছিল কিন্তু যুদ্ধশেষে আদর্শিক বিভাগের ফলে তাদের মধ্যে সেই রকম সুসম্পর্ক ছিল না। যুদ্ধশেষে দেখা গেল, রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোকে রাশিয়া তার বলয়ে নেয়ার জোর প্রচেষ্টা চালালো। এই কারণে পূর্ব ও পশ্চিম নামক দুটি বলয়ে পৃথিবী বিভক্ত হতে থাকলো। বুলগেরিয়া, চেকোস্লাভাকিয়া, পোল্যান্ড এসব দেশ রাশিয়ার প্রভাব বলয়ে চলে গেল। প্রভাব বলয়ের কারণেই জার্মানি এবং কোরিয়া বিভক্ত হলো। অন্যদিকে যুদ্ধোত্তরকালেই উপনিবেশবাদের অবসান শুরু হলো। প্রথমে ফিলিপাইন্স স্বাধীন হলো। তারপরে ভারত, পাকিস্তান ও বার্মা স্বাধীনতা পেল। এরই অব্যবহিত পরে আফ্রিকায়ও স্বাধীন দেশগুলোর উদ্ভব হতে থাকলো। এই নতুন দেশগুলোর অনেকে ইঙ্গ-মার্কিন অথবা রাশিয়ার বলয়ে আশ্রয় নিতে থাকলো অথবা এই বিষয়ে টানাপোড়নে রইল। মার্শাল টিটো এই সময়ে ১৯৬১ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেলগ্রেডে এই নতুন দেশগুলোর একটি সম্মেলন আহ্বান করলেন। এই সম্মেলনেই জোট নিরপেক্ষ দেশগোষ্ঠির আবির্ভাব হয়। এই জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের নেতৃত্বে আরো ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহের লাল নেহরু, মিসরের রাষ্ট্রপতি জামাল আব্দুল নাসের এবং ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি সুকর্ণ। এই আন্দোলন ক্রমে ক্রমেই তৃতীয় বিশ্বের মুখপাত্র হয়ে উঠে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও জাতি তখন তিনটি দলে বিভক্ত হয়। দু’টি বিবদমান জোট ইতোমধ্যেই সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। যথা- ন্যাটো এবং ওয়ার সো প্যাক্ট। তারা একে অন্যের বিপক্ষে সবরকম মারণাস্ত্র নিয়েই সদাপ্রস্তুত ছিল। তাদের শক্তিতে এমন ভারসাম্য ছিল যে, তারা কখনও যুদ্ধে লিপ্ত হয় নি। এই দু’টি জোটের বিকল্প একটি নতুন জোট ক্রমে ক্রমে গড়ে উঠলো। তারা ছিল তুলনামূলকভাবে প্রায় নিরপেক্ষ দেশের জোট নিরপেক্ষ দল। তাদের কারোই তখন আণবিক বোমা প্রস্তুতের দক্ষতা ছিল না। তবে তাদের মধ্যে অনেকেই আণবিক প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা শুরু করে এবং আণবিক ক্ষমতা আহরণের প্রচেষ্টা চালায়। চলবে...
×