ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ বিমান ভ্রমণ

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৪ ডিসেম্বর ২০১৬

নিরাপদ বিমান ভ্রমণ

‘আকাশে শান্তির নীড়’ সেøাগান নিয়ে উড়ে বেড়ানো বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনস যেন আকাশে ঝুঁকির নীড় তৈরি করতেই বদ্ধপরিকর। তাই তার ঢিলে হয়ে আসে নাট-বল্টু। ফুরিয়ে যায় জ্বালানি। কলকব্জা আর যন্ত্রপাতির ত্রুটি সারাতে সারাতে দিন, মাস, বছর ফুরিয়ে আসে। ত্রুটি আর সারে না। বরং কেবলই বাড়তে থাকে। আকাশপথ ছোট করে এনেছে পৃথিবীকে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একপ্রান্ত থেকে মানুষ ছুটছে অন্যপ্রান্তে। আকাশপথে যাত্রীর পাশাপাশি মালামাল পরিবহনও বাড়ছে দ্রুতগতিতে। একই সঙ্গে বাড়ছে পরিবহন সংস্থা- যেমন রাষ্ট্রীয়ভাবে তেমনি ব্যক্তি মালিকানায়। অধিকাংশ সংস্থা লাভজনকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু বিমান বাংলাদেশ যেন সে পথে যেতে চায় না কোনভাবেই। কিন্তু এভাবে কী আর টিকে থাকা যায়। তার তো অনেক দায়। তথাপি বার বার পড়ছে মুখথুবড়ে। জনগণের অর্থের শ্রাদ্ধ করে হলেও বার বার একে টেনে তোলার চেষ্টা চলছে অবিরাম। খড়কুটো আঁকড়ে ধরে আশ্রয় পেতেও নেই আপত্তি। টিম টিম করে জ্বলায় তার আনন্দ অফুরান তবু। নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বলেই অনিয়ম-দুর্নীতিকে ভালবেসে তবু সে এগিয়ে যেতে চায়। মৃত্যুঘণ্টা বাজার অপেক্ষায় দিন গুজরান তথাপি তাকে করে যেতে হচ্ছে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অভ্যাসটা তার গোড়া থেকেই হয়নি। অপুষ্টিতে আক্রান্ত দেহজুড়ে তার ক্ষত আর ক্ষত। কোন মলমেই আর তা সারানো যায় না। বিমানের দুর্নীতি, অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতা প্রতিষ্ঠানটির মজ্জাগত বিষয়ে পরিণত হয়েছে বহুকাল আগেই। আর এ কারণেই তা হয়ে উঠেছে জাতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি বিমানবহরে তিনটি উন্নতমানের বোয়িং যুক্ত হওয়ার পরও বিমান এখনও আগের মতোই যাত্রাপথে বিকল হচ্ছে। ভিআইপিরাও দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা তার স্বাভাবিক স্বভাব যেন। বিকল আর সিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে বিমানের ‘গৌরব’ আর ‘অহঙ্কার’। টিকেট ফ্লাইট সিডিউল আর যাত্রীদের ব্যাগেজ নিয়ে বিমান যে ঐতিহ্য দাঁড় করিয়েছে তা কখনই লুপ্ত হওয়ার নয়। অভিযোগগুলো পুরনো হলেও তা দূরীকরণে আগ্রহী নয় কর্তৃপক্ষ এই কারণে যে, প্রতিষ্ঠান লোকসানি হলেও কর্তাদের পকেট আর ব্যাংক ব্যালান্স বাড়াতে তা যথেষ্ট সহায়ক। আর সম্ভবত এসব কারণে লাভের মুখ দেখার সুযোগ আর হয় না। বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং, কেনাকাটা, খাবার সরবরাহ, লোক নিয়োগ তথা সব শাখায়ই রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। রয়েছে তেল পাচারসহ নানা রকম চুরির জনবল। এসব সিন্ডিকেটের ভয়াবহ অপরাধ চিত্র প্রকাশিত হয় মাঝে মধ্যেই। কিন্তু তাতে নড়ে না টনক কারও। কর্মকর্তারা যেন অতি আগ্রহী প্রতিষ্ঠানটিকে বিষে বিষে জর্জরিত করে তোলে। মৃত্যুর মোহনায় এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। ইয়াজউদ্দিন-ফখরুদ্দিন শাসনকালে বিমান কর্পোরেশনকে কোম্পানিতে রূপান্তর করা হলেও, তা ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। কোম্পানি আইন অনুযায়ী এর কার্যক্রম চলছে না, অন্য কোন আইনেও নয়। বরং স্বেচ্ছাচারিতায় পরিচালিত হতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছে বিমান। প্রায় একযুগ অতিবাহিত হলেও বাজারে শেয়ার ছাড়া যায়নি। মন্ত্রণালয়েরও বুঝিবা কার্যত কোন কর্তৃত্ব নেই বিমানের ওপর। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ভিআইপি বিমান রাঙা প্রভাত বুদাপেস্ট যাওয়ার পথে যেভাবে ঝুঁকিতে যাচ্ছিল তা ভাবলে যে কেউ শিউরে উঠবে। নাট-বল্টুর সমস্যা নিয়ে আকাশে উড্ডীয়মান বিমানটির পাইলটের বুদ্ধিমত্তার কারণে এ যাত্রায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিমানের এহেন অবস্থার পরিবর্তন জরুরী। তাহলেই আকাশে খুঁজে পাওয়া যাবে শান্তির নীড়। জনগণ এই প্রত্যাশাই করে।
×