ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হালদা বিশেষ নদী, জাতীয় স্বার্থে এটি রক্ষা করতে হবে ॥ মন্ত্রী ছায়েদুল

প্রকাশিত: ০১:৪৩, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬

হালদা বিশেষ নদী, জাতীয় স্বার্থে এটি রক্ষা করতে হবে ॥ মন্ত্রী ছায়েদুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদা নদী রক্ষায় নদী সংলগ্ন রাবার ড্যাম ও স্লুইসগেটগুলো প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদমন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক। তিনি বলেছেন, আমাদের পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রক্ষ্মপুত্রের মতো বড় বড় নদী আছে। কিন্তু রুই, কাতলাসহ কার্প জাতীয় মাছের রেণু পাওয়া যায় কেবল হালদায়। অর্থাৎ হালদা একটি বিশেষ নদী। জাতীয় স্বার্থে এই নদী রক্ষা করতে হবে। শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট অব আপস্ট্রিম ওয়াটার উইথড্রয়াল টু কনজার্ভ ন্যাচারাল ব্রিডিং হ্যাবিট্যাট অব মেজর কার্পস ইন দ্য রিভার হালদা’ শীর্ষক জাতীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এ কর্মশালার আয়োজন করে। মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাকসুদুল হাসান খানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মৎস্য প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। কর্মশালায় প্রধান আলোচক ছিলেন আন্তর্জাতিক নদী বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরেটাস ড. আইনুন নিশাত। মূল আলোচনায় ড. আইনুন নিশাত বলেন, নদী রক্ষায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বদলি হয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে গেলে দেখা যাবে, তিনি তখন রাবার ড্যামের পক্ষে কথা বলবেন। কারণ এটা কৃষির জন্য সুবিধাজনক। এটাই বাস্তবতা। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। হালদা রক্ষায় তিনি কৃষির পরিবর্তে মাছের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়াসহ গবেষণার ভিত্তিতে ২৯টি পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, মাছের জন্য যে পরিমাণ পানি দরকার তা দিতে হবে। কৃষির ক্ষেত্রে কেবল ধান চাষের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। যে সব শস্য উৎপাদনে পানির চাহিদা কম সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। বোরো ধানের পরিবর্তে ভুট্টা, গম বা অন্য ফসল উৎপাদন করা যেতে পারে। এছাড়া হালদার স্বাভাবিকতা রক্ষার জন্য আইনুন নিশাত বিদ্যমান সøুইস গেটের নকশা পরিবর্তন, নদী সংলগ্ন দুইটা রাবার ড্যাম প্রত্যাহার, অন্য ড্যামগুলোর উপযোগীতা আরও গভীরভাবে যাচাই করা, বালু সংগ্রহ বন্ধ করা এবং তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করার ব্যাপারে পরামর্শ দেন। এসময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিস্তার চেয়ে হালদা নদীর সঙ্কট মোকাবেলা করা তুলনামূলকভাবে সহজ হওয়ার কথা। হালদার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো- এর উজানে কোন মমতা ব্যানার্জি নাই! অনুষ্ঠানে হালদা নদী এলাকার সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদমন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, সারা বাংলাদেশে মিঠা পানির মাছ প্রজননের ৭০ শতাংশের বেশি প্রাকৃতিকভাবে হয়। এর অধিকাংশই আবার হালদা নদী ভিত্তিক। তাই হালদার গুরুত্ব জাতীয়ভাবে দেখতে হবে। হালদা নদীর উপকারভোগী সব শ্রেণি পেশার মানুষের স্বার্থের বিষয়টি সমন্বিতভাবে দেখতে হবে। তিনিও পানির প্রয়োজন কম হয় এমন ফসল উৎপাদনের ওপর হালদা তীরবর্তী কৃষকদের গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান। এর আগে হালদা নদীর ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন ও চারটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এসব গবেষণা প্রতিবেদনে হালদা নদীর পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- নদী সংলগ্ন পুরনো খাল পুন:খনন করা, রাবার ড্যাম ও স্লুইসগেটগুলোর উপযোগীতা পুনরায় যাচাই করা, ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যেকটির নিজস্ব ইটিপি স্থাপন নিশ্চিত করা, নদীর পানি ব্যবহার করে বোরো ধান চাষ বন্ধ করা, এর পরিবর্তে আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, টমেটো, মূলা ইত্যাদি চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা, সংলগ্ন চা বাগানগুলোতে নদীর পানি সরবরাহ বন্ধ করা, ইট ভাঁটিগুলো আরও দূরে সরিয়ে নেয়া, নদীর পানি সেচ প্রকল্পে ব্যবহার না করা ইত্যাদি।
×