ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ ও কাল বাছাই ॥ ১২ জেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হচ্ছেন

জেলা পরিষদ নির্বাচনে এক পদে ৩টির বেশি মনোনয়নপত্র জমা

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬

জেলা পরিষদ নির্বাচনে এক পদে ৩টির বেশি মনোনয়নপত্র জমা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য প্রতি পদের বিপরীতে গড়ে ৩ জনের বেশি প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ৬১ জেলা পরিষদে নির্বাচনের জন্য চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্যসহ মোট পদের সংখ্যা ১ হাজার ২৮১। এর বিপরীতে মোট মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৪ হাজার ৬৪৬ প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ৬১ পদের বিপরীতে ১৯০, সদস্য পদে ৯১৫টির বিপরীতে ৩ হাজার ৫৬১ এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ৩০৫টির বিপরীতে ৮৯৫ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। চেয়ারম্যান পদে ১২ জেলায় প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান পদে ৬১ জেলার মধ্যে ১২ জেলায় একক প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ফলে তারা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন। বাকি ৪৯ জেলায় এ পদে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করায় তাদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হতে হবে। ৪৯ জেলায় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি তাদের দলের বিদ্রোহী প্রার্থীও রয়েছে। যারা দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। জেলা পরিষদ নিরর্বাচনে প্রতি জেলায় একজন চেয়ারম্যান, ১৫ সদস্য ও ৫ সংরক্ষিত সদস্য পদসহ মোট একুশটি পদে নির্বাচনের জন্য ভোট গ্রহণ করা হবে। ৬১ জেলায় মোট পদের সংখ্যা ১ হাজার ২৮১। এ নির্বাচনে প্রতিপদের বিপরীতে গড়ে মোট প্রার্থী রয়েছেন ৩ জনের বেশি। আগামী ২৮ ডিসেম্বর দেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে যারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন আজ শনিবার ও আগামীকাল রবিবার দুদিন রিটার্নিং কর্মকর্তা তাদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করবেন। যাচাই-বাছাইয়ে যারা বাদ পড়বেন তারা ৫ থেকে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপীল করার সুযোগ পাবেন। ৮ থেকে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে আপীল নিষ্পত্তি করা হবে। এছাড়া ১১ডিসেম্বর প্রত্যাহার শেষে আগামী ১২ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে। ইতোমধ্যে এ নির্বাচনে প্রার্থীদের যোগ্যতা-অযোগ্য সম্পর্কে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে নির্দেশনা পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের উপসচিব ফরহাদ আহাম্মেদ খান স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দুই বছরের অধিক কারাদ-ে দ-িত হলে এবং তার মুক্তি লাভের সময় ৫ বছর অতিক্রান্ত না হলে তিনি এ নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। এছাড়া প্রার্থী সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার না হলে এবং স্থানীয় সরকার পরিষদের কোন পদে নির্বাচিত হলে সে পদ থেকে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। আইন অনুযায়ী জেলা পরিষদ নির্বাচন হবে নির্দলীয়ভাবে। স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা এতে ভোট প্রদান করবেন। নির্দলীয় ভোট হলেও আওয়ামী লীগ থেকে ইতোমধ্যে ৬১ জেলায় তাদের পৃথক প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। এর মধ্যে ১২ প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছে যেসব জেলায় চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ার পরই তাদের নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। তবে যাচাই-বাছাইয়ে তাদের প্রার্থিতা বাদ পড়ে গেলে তিনি নির্বাচিত হতে পারবেন না। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ নির্বাচন নির্দলীয় হওয়ায় প্রার্থীরা কোন দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবেন না। ইসি নির্ধারিত প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। ইতোমধ্যে জেলা পরিষদের নির্বাচনের জন্য চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদের জন্য আলাদা প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদের প্রতীকের মধ্যে রয়েছে আনারস, কাপ-পিরিচ, চিংড়ি, জিপগাড়ি, টেবিল ফ্যান, তালগাছ, প্রজাপতি, মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোন, হেলিকপ্টার। সদস্য পদের প্রার্থীদের প্রতীক Ñঅটোরিকশা, উটপাখি, ক্রিকেট ব্যাট, ঘুড়ি, টিউবওয়েল, টিফিন ক্যারিয়ার, ঢোল, তালা, বক, বেহালা, বৈদ্যুতিক পাখা, হাতি। সংরক্ষিত সদস্য পদের প্রতীক Ñকম্পিউটার, টেবিল ঘড়ি, টেলিফোন, ডিস এ্যান্টেনা, দোয়াত কলম, ফুটবল, বই, মাইক, লাটিম ও হরিণ। এছাড়া কমিশন জানিয়েছে প্রার্থী সংখ্যা এর বেশি হলেও সমস্যা হবে না। কারণ, ইতোমধ্যে অতিরিক্ত প্রতীক নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। কোন পদের বিপরীতে প্রার্থী সংখ্যা ১২ বেশি হলে তখন অতিরিক্ত থেকে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। এ জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে একটি নীতিমালা করা হয়েছে। নীতিমালা অনুসরণ করেই প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেবেন। বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমার শেষদিনে ৬১টির মধ্যে ১২ জেলা পরিষদে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। যেসব জেলায় চেয়ারম্যান পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থিতা নির্বাচিত হতে চলেছে তার মধ্যে রয়েছে ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, যশোর, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, ভোলা, নেত্রকোনা, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলায়। এসব জেলায় যারা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন নারায়ণঞ্জে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন, গাজীপুরে মোঃ আখতারুজ্জামান, ঠাকুরগাঁওয়ে সাদেক কোরাইশী, জয়পুরহাটে আরিফুর রহমান রকেট, নাটোরে সাজেদুর রহমান খাঁন, সিরাজগঞ্জে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, যশোরে শাহ হাদিউজ্জামান, বাগেরহাটে শেখ কামরুজ্জামান টুকু, ঝালকাঠিতে সরদার শাহ আলম, ভোলায় আব্দুল মোমিন টুলু, নেত্রকোনায় প্রশান্ত কুমার রায় ও মুন্সীগঞ্জে মোঃ মহিউদ্দিন। ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ার পর যাচাই-বাছাইয়ে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
×