ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উপকূলে স্ট্রবেরি চাষে সাফল্য

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬

উপকূলে স্ট্রবেরি চাষে সাফল্য

দুই বছরের অব্যাহত চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত বিদেশী ফল স্ট্রবেরি চাষে সফল হলেন চাষী মজিবর রহমান গাজী ও তাঁর ভাই রেজাউল করিম। কিসমত হরিদেবপুর গ্রামে মাত্র ৬ শতক জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করে তারা আশাতীত সাফল্য অর্জন করেছেন। একই সঙ্গে তারা প্রমাণ করে দিয়েছেন চরাঞ্চল প্রধান পটুয়াখালীর মাটি এখন আর ততটা অনুর্বর নয়। একাগ্রতা, পরিশ্রম এবং অব্যাহত প্রচেষ্টায় এখানকার মাটিতেও স্ট্রবেরির মতো ফলের চাষ সম্ভব। এটি হতে পারে উপকূলের সম্ভাবনাময় নতুন ফল। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার রামনাবাদ নদী পার হয়ে দু’কিলোমিটার দক্ষিণে গেলেই চোখে পড়ে সবুজে ছাওয়া গ্রাম কিসমত হরিদেবপুর। গ্রামটির চারদিকের ভরা শস্যের ক্ষেত যে কারও দৃষ্টি কাড়ে। এখানেই মজিবর রহমান গাজীর বাড়ি। বয়স তাঁর ষাটের কোটায়। ছোটভাই রেজাউল করিমকে নিয়ে প্রায় সাত একর আয়তনের বাড়িটিকে তিনি শস্য এবং ফলের খামার হিসেবে গড়ে তুলেছেন। কী নেই বাড়িতে! এমন প্রশ্নের উত্তর মিলবে বাড়ির চারপাশ একবার চক্কর দিলেই। বেশ বড় আকারের পুকুর। আম্রপালি, ল্যাংড়া, ফজলিসহ বেশ কয়েক প্রজাতির আমগাছ আছে শ’ খানেক। আছে কাঁঠাল, কলা, জাম্বুরা, লেবু, পেয়ারা ও লিচুর বাগান। এমন অসংখ্য জাতের ফলের বাগান তারা গড়ে তুলেছেন বাড়িতে। সে সঙ্গে আছে নানান ধরনের শাকসবজির ক্ষেত। মজিবর রহমান গাজী জানালেন, গত ৩০/৩৫ বছর ধরে ফলমূল আর শাকসবজির আবাদ করেই তাদের দু’ভাইয়ের সংসার চলছে। তাদের তেমন কোন ধানী জমি নেই। কেবলমাত্র পুকুরে মাছ চাষ করেই বছরে তাদের আয় আড়াই/তিন লাখ টাকা। সে সঙ্গে আছে ফল-ফলাদি আর শাকসবজির আয়। ছোট ভাই রেজাউল করিম জানান, তাদের উৎপাদিত ফলমূল, শাকসবজি বা মাছ কোনটাই বিক্রি করতে শহরে যেতে হয় না। পাইকাররা বাড়িতে এসে কিনে নিয়ে যায়। গ্রামসহ আশপাশের গাঁয়ের গৃহস্থরাও সরাসরি বাড়িতে আসে। মজিবর রহমান গাজী আকস্মিক শীতপ্রধান দেশের ফল স্ট্রবেরি চাষে ঝুঁকে পড়েন। মূলত স্ট্রবেরি কোন ফল নয়। এটি এক ধরনের ফ্র্যাগারিয়া জাতীয় উদ্ভিদ। তবে এখন এটি ফল হিসেবেই বেশি পরিচিত। ১৭৪০ সালে ফ্রান্সে এর প্রথম চাষ হয়। পরে পৃথিবীর নানা প্রান্তে তা ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে শীতপ্রধান দেশগুলোতে এর আবাদ ব্যাপক। স্ট্রবেরির স্বাদ, গন্ধ ও বর্ণ অত্যন্ত আকর্ষণীয়। স্ট্রবেরি ফলের রসে জ্যাম, আইসক্রিমসহ দামী খাবার তৈরি হয়। গরমের দেশগুলোতে এর চাষ যথেষ্ট পরিশ্রমের। গরমের দেশে গাছ হয়। কিন্তু ফলন তেমন হতে চায় না। বিরূপ প্রকৃতির দিক থেকে বিচার করলে পটুয়াখালীতে এর চাষ আরও দুঃসাধ্য। মজিবর রহমান গাজী জানান, চট্টগ্রামের এক চাষী বিদেশি এ ফলের চাষ করে সফল হয়েছে, সংবাদপত্রের পাতায় এ খবর দেখে আগ্রহী হন। যা এক ধরণের জেদে পরিণত হয়। পরিবারের সবার অনিচ্ছা উপেক্ষা করে তিনি ছুটে যান সাভার খামারবাড়ি এবং ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে চাষাবাদ পদ্ধতি জেনে আসেন। বাড়িতে এসে প্রথম বছরেই বড় আকারের খামার গড়ে তোলেন। পাঁচ বিঘা অর্থাৎ ৬৬ শতক জমিতে পাঁচ লাখ টাকা পুঁজি খাটিয়ে স্ট্রবেরি চাষ করেন। কিন্তু জাত নির্ণয়ে ভুল করার কারণে ফলনে মার খান। দমে যাননি তিনি। আবার নতুন করে শুরু করেন। বাড়ির পাশের মাত্র ৬ শতক জমিতে মজিবর রহমান গাজী ও রেজাউল করিম স্ট্রবেরি চাষ করেছেন। এতে আশাতীত সাফল্য লাভ করেছেন। রেজাউল করিম জানান, স্ট্রবেরি বিক্রি করতে তাদের শহরে যেতে হচ্ছে না। লোকজনরা বাড়ি থেকে এসে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতি কেজি স্ট্রবেরি তারা তিন-চার শ’ টাকা দরে বিক্রি করছেন। মজিবর রহমান গাজী জানান, স্থানীয় কৃষি বিভাগ তাদের নিয়মিত সহায়তা করছে। কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজও তাদের উৎসাহ দিয়েছেন। তারা জানান, স্ট্রবেরি চাষে অন্যান্য ফসলের তুলনায় পরিশ্রম কম। তবে চারাগাছে প্রচুর যতœ নিতে হয়। কার্তিক মাসে চারা রোপণ করতে হয়। চারা রোপণের ২০-২৫ দিনের মধ্যে ফলন আসে। প্রতিদিন সকাল-বিকাল দু’বেলা স্ট্রবেরি গাছ থেকে তুলতে হয়। তা না হলে পচে যায়। -শংকর লাল দাশ, গলাচিপা থেকে
×