ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যাভোকেডো চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬

এ্যাভোকেডো চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা

রংপুর-হারাগাছ রোডে তিন কিলোমিটার এগিয়ে রংপুর সিটি কর্পোরেনের ৯ নং ওয়ার্ডের রাস্তার পাশেই চোখে পড়ে ইটের দেয়াল ঘেরা ফলের বাগান। এক একর জায়গাজুড়ে এ বাগানে রয়েছে দেশী-বিদেশী বিচিত্র ফলের গাছ। তার মধ্যে বিদেশী ফলের গাছই বেশি। বিদেশী গাছের মধ্যে রয়েছে পিচ ফল, এ্যাভোকেডো, ড্রাগন, আলু বোখারা, কমলা, আপেল, কেরালা নারকেল, ভিয়েতনামী নারকেল ইত্যাদি। গাছগুলোর বয়স দু’বছরের কাছাকাছি। এখনও ফল ধরেনি, তবে কিছু কিছু গাছে ফল ধরার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে জানালেন বাগান পরিচর্যার দায়িত্বে নিয়োজিত সেলিম মিয়া। তিনি জানালেন, রংপুর অঞ্চলে বিদেশী ফলের চাষ সম্ভব কি-না সেটা দেখার জন্য সখের বসে বিদেশী ফলের এ বাগানটি করেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি এটিএম সাইফুর রহমান। রংপুর শহরের শালবনে তার পৈত্রিক বাড়ি। তবে গাছের বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য দেখে মনে হচ্ছে রংপুরের আবহাওয়ায় ভাল হবে। আরও কিছু বিদেশী গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্যান তত্ত্ব বিশেষজ্ঞ মেজবাহুল ইসলাম বলেন, রংপুর জেলায় এ পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে বিদেশী ফলের চাষ শুরু হয়নি। দু’চারজন নিজের বাড়ির ছাদে বা আঙ্গিনায় ছোট আকারে সখের বাগান করেছে। তিনি বলেন, হিমালয়ের কাছাকাছি রংপুরের অবস্থান হওয়ায় ভৌগোলিক কারণে এ এলাকায় কমলা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষে কৃষক সফলতা পেতে পারে। তবে রংপুরের মাটি এবং আবহাওয়া বাণিজ্যিকভাবে আপেল চাষের জন্য তেমন উপযোগী নয়। আপেল পুরোপুরি শীতপ্রধান অঞ্চলের ফল। বর্তমানে চট্টগ্রাম এবং বান্দরবান জেলায় সীমিত আকারে এ্যাভোকেডো চাষ হচ্ছে। রংপুরেও এ ফলের চাষ সম্ভব। এ ফলের আদি জন্মস্থান মধ্য আমেরিকা। বর্তমানে উষ্ণ ও অব-উষ্ণম-লের বিভিন্ন দেশে এ ফলের চাষ বিস্তার লাভ করেছে। শীতের শেষভাগে এ্যাভোকেডো গাছে ফুল আসে এবং বর্ষা শেষে ফল পাকতে শুরু করে। জাতভেদে গাছপ্রতি ১০০/৫০০টি পর্যন্ত ফল হতে পারে। কলম থেকে উৎপাদিত গাছের বয়স দু’ বছর হলেই সে গাছে ফুল ও ফল আসে। আর বীজ থেকে উৎপাদিত গাছে ফল আসে তিন/চার বছর পর। এ্যাভোকেডো গাছ ২০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। পুষ্টিমানের দিক থেকে এ্যাভোকেডোর স্থান অনেক উঁচুতে। এ ফলে শর্করার পরিমাণ কম থাকায় এটিকে বহুমূত্র রোগীর জন্য উত্তম খাদ্য হিসেবে গণ্য করা হয়। ফল সাধারণত টাটকা অবস্থায় খাওয়া হয়। সালাদ হিসেবেও এর প্রচলন আছে। এর তেল বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী তৈরির প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রংপুরের মাটি ও আবহাওয়াতে এ্যাভোকেডো চাষ লাভজনক হবে। তিনি আরও জানান, সাভার, গাজীপুর, সৈয়দপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম ইত্যাদি এলাকায় পিচ ফলের চাষ হচ্ছে। তবে প্রকৃতপক্ষে ফলটি শীতপ্রধান এলাকায় ভাল জন্মে। ভারতের সিমলায় চাষ হয় পিচ ফলের। যেহেতু নীলফামারীতে পিচ ফল চাষ হচ্ছে, কাজেই রংপুরে না হওয়ার কোন কারণ নেই। তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব খামারে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু কিছু বিদেশী ফলের গাছ লাগানো হয়েছে। ফল দেখতে ডিম্বাকার তবে মুখটা আমের মতো বাঁকানো ও সুঁচালো। কাঁচা ফলের রং সবুজ, পাকলে হালকা হলুদের ওপর লাল আভা সৃষ্টি হয়। কাঁচা ফল শক্ত, খোসা খসখসে। কিন্তু পাকলে নরম হয়ে যায় ও টিপ দিলে সহজে ভেঙে যায়। পাকা ফলের রসালো শাঁস হালকা হলুদ ও ভেতরের দিকে লাল, শাঁসের স্বাদ টক। ফলের মধ্যে খয়েরি রঙের শক্ত বিচি থাকে। পিচ ফল পাকে মে/জুন মাসে। এক কেজি ফল থেকে ৪৭০ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। চোখ কলম করে পিচ ফলের বংশবৃদ্ধি সম্ভব। -আব্দুর রউফ সরকার রংপুর থেকে
×