ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াসার মেগা প্রকল্প

রাজশাহীতে পানির লাইনে মিটার বসানোর উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬

রাজশাহীতে পানির লাইনে মিটার বসানোর উদ্যোগ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী নগরীর পানির পাইপলাইনে এবার মিটার বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। আগামী দুই বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নগরীতে গ্রাহক পর্যায়ে ১৬ হাজার ৩৬৫টি মিটার বসানো হবে। রাজশাহী ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানায়, নগরীতে বেশি পানি ব্যবহার করেন এমন গ্রাহকদের বাছাই করে বসানো হবে এসব মিটার। পর্যায়ক্রমে সব গ্রাহককেই নেয়া হবে মিটারের অওতায়। পানির অপচয় কমতে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পে দরপত্র আহ্বান করাও হয়েছে। রাজশাহী ওয়াসা সূত্র জানায়, মিটার সংযোজন ছাড়াও নগরীর ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদা মেটাতে বসানো হবে আরো ২২ নতুন উৎপাদক পাম্প। এছাড়া বন্ধ হতে বসা আরো ৪০টি উৎপাদক পাম্প রিজেনারেশন করা হবে। পুরাতন লাইন সংস্কার ও নতুন লাইন স্থাপন করা হবে আরো ৮০ কিলোমিটার। এছাড়া আধুনিকায়ন করা হবে পানি শোধনাগার। রাজশাহী মহানগরীর পানি সরবরাহ ব্যবস্থার পুনঃসংস্কারের ওই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭ কোটি ৫০ লাখ। ওয়াসা সূত্র জানায়, গত ১৩ অক্টোবর ওই প্রকল্পের ১৬টি প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত ১৭ নবেম্বর ছিল জমা দেয়ার শেষ দিন। ১২ কোটি টাকার এ দফার কাজ পেতে প্রায় ৮৬টি দরপত্র জমা পড়েছে বলেও জানা গেছে। রাজশাহী ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক পারভেজ মামুদ বলেন, ১৬টি প্যাকেজের দরপত্রে অংশ নিতে প্রায় ৮৫টির মতো শিডিউল জমা পড়েছে। দরপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বিধি অনুযায়ী কার্যাদেশ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজাহার আলী বলেন, রাজশাহী নগরীতে হোল্ডিং রয়েছে ৫৮ হাজারের মতো। তবে এর অর্ধেক অর্থাৎ ৩৫ হাজার হোল্ডিংয়ে বৈধ্য সংযোগ রয়েছে ওয়াসার। অন্যগুলো অবৈধ সংযোগ। মূলত পানির অপচয় রোধে মিটার বসানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এছাড়া অবৈধ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্নকরণসহ আইনত ব্যবস্থা নিচ্ছে ওয়াসা। ভূগর্ভস্থ পানি নির্ভরতা কমাতে ভূ-উপরিস্থ পানি কেন্দ্রিক বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে ওয়াসা। এদিকে রাজশাহী নগরবাসীর জন্য সুপেয় পানি সরবরাহে মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে রাজশাহী ওয়াসা। পদ্মা থেকে পানি এনে শোধন করে পাইপ লাইনে পৌঁছে দেয়া হবে ঘরে ঘরে। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। গত ১৪ অক্টোবর চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে এ নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর আগে সম্ভাব্যতা যাচাই করে গত বছর এ প্রকল্পের খসড়া সম্পন্ন করে ওয়াসা। প্রথমে এ প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় চার হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছিল। রাজশাহী ওয়াসা সূত্র জানায়, চীন সরকারের ঋণে এ পানি শোধনাগার নির্মাণ করবে রাজশাহী ওয়াসা। সেটি স্থাপন করা হবে নগরী থেকে প্রায় ২৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দূরে গোদাগাড়ী উপজেলার ফরহাদপুরে। এছাড়াও বিকল্প স্থান হিসেবে পবার হরিপুর ও চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর রয়েছে। ২০১১ সালে রাজশাহী ওয়াসা প্রতিষ্ঠার আগে সিটি কর্পোরেশন এ মেগা পরিকল্পনা হাতে নেয়। দীর্ঘমেয়াদী টেকশই পানি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতেই নেয়া হয় এ উদ্যোগ। সিটি কর্পোরেশন ছাড়াও এ শোধনাগার থেকে পানি সরবরাহের এলাকা ধরা হয়েছে নগরীর উপকণ্ঠ কাটাখালি ও নওহাটা পৌরসভা। রয়েছে এর আশপাশের ১১টি ইউনিয়নও। আর গোদাগাড়ীতে প্রকল্পটি স্থাপন করা হলে গোদাগাড়ী পৌরসভাও পানি সরবরাহের আওতায় আসবে। জানা গেছে, এর আগে পরিকল্পনা ছাড়াই নগরীতে চারটি পানি শোধনাগার নির্মাণ করা হয়। ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা এসব শোধনাগার বছরের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ ২০১১ সালে ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর শ্যামপুরে পদ্মা নদীর কোলঘেঁষে স্থাপন করা হয় শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান পানি শোধনাগার। কিন্তু পদ্মায় চর পড়ে যাওয়ায় পানির অভাবে এক বছরের মাথায় ওই শোধনাগারটিও বন্ধ হয়ে যায়। তবে পদ্মার এখানে পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে ড্রেজিং করা জরুরী হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজাহার আলী। তিনি বলেন, নদী ড্রেজিং করে এ শোধনাগারটি সচল করা যাবে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কেবল চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে জি-টু-জি চুক্তি হয়েছে। এরপর ব্যবসায়িক চুক্তি হবে। রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, অনেক চেষ্টা করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনের অর্থ সহায়তা নিশ্চিত করা গেছে। গত ১৪ অক্টোবর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরে এলে দুদেশের মধ্যে ২৬টি বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে। এরমধ্যে এ প্রকল্পটিও রয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নগরবাসী সুপেয় পানি পান করতে পারবে।
×