ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পরিচর্চার অভাবে গাছ শুকিয়ে মারা যাচ্ছে

চাঁপাই কালেক্টরেট চত্বরের বিশাল আমবাগান

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬

চাঁপাই কালেক্টরেট চত্বরের বিশাল আমবাগান

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ চেম্বার থেকে মাত্র শত গজ দূরে বিশাল আমগাছটির অবস্থান। কিন্তু গাছটি মরেছে বছরখানেক আগে। পুরো গাছের পাতা ঝরে গেছে। শুকনো ডালপালাও ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে একশ্রেণীর মানুষ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য। এদের মধ্যে কিশোর ও যুবক বয়সের লোক বেশি। অথচও সময়মতো শুকনো আমগাছটি বিক্রি করতে চাইলেই পারবে না। নানান কমিটি গঠন ও রিপোর্ট পেশ করতে করতেই ছয় মাস পেরিয়ে যায়। এ চেম্বারটি জেলার প্রধান কর্মকর্তা ও সরকারের একান্ত নিজস্ব প্রতিনিধি জেলা প্রশাসকের। শহরের অন্যতম প্রাণকেন্দ্রে বাগানের অবস্থান। অর্থাৎ কালেক্টরেট চত্বরের মধ্যে। এখানে কারেক্টরেট ভবন ছাড়াও রয়েছে একাধিক সরকারী ভবন ও জেলা জজকোর্ট। তাদের বাসভবনও একই চত্বরে। সিভিল সার্জন অফিস ও সিভিল সার্জনের বাসভবন, এছাড়াও রয়েছে পুলিশ সুপার, নির্বাচন অফিস, গণপূর্ত অফিস। একটি মাধ্যমিক স্কুলও রয়েছে এ চত্বরে। এক কথায় শত একর আমবাগানের নিচে এই কালেক্টরেট চত্বর ও সার্কিট হাউস রয়েছে। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে এই চত্বরে আমগাছের সংখ্যা ছিল প্রায় পাঁচ শত। এখন রয়েছে ৩৮২ আমগাছ। এর বাইরেও শতাধিক গাছ রয়েছে সরকারী কর্মকর্তাদের বাসভবন ও অফিস চত্বরে। এসব গাছ ভোগদখল করে থাকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পাশাপাশি আমবাগানের ফলকর ইজারা বিজ্ঞপ্তি হতে জানা গেছে ৩৮২ আমগাছ বর্তমানে রয়েছে। এসব গাছের ফলকর বিক্রি হয়ে থাকে ১৮ লাখ থেকে ৩০ লাখের মধ্যে। এই অর্থ সরকারী ট্রেজারিতে জমা হয়ে থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য এ বিশাল সরকারী আমবাগান গত ৪০ বছরেও কোন ধরনের পরিচর্যা হয়নি। যারা বাগান ইজারা নিয়ে থাকে তারা নিজ স্বার্থেই অধিক উৎপাদনের আসায় কিছু পরিচর্যা করে থাকে। কিন্তু জেলা প্রশাসন কোন ধরনের পরিচর্যা করে না। যার কারণে গত ১৫ বছরে প্রায় ১২টি বিশাল আকারের আমগাছ শুকিয়ে মারা গেছে। একইভাবে প্রায় ডজনের অধিক গাছ নতুন করে শুকিয়ে যাওয়ার মুখে রয়েছে। পাশাপাশি ৩৮২ আমগাছের সিংহভাগ বা অধিকাংশ পরিচর্যার অভাবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন হচ্ছে না। এর বাইরে যেসব আমগাছ বিভিন্ন চত্বরে (প্রাচীর দেয়া সরকারী অফিস) রয়েছে বা সরকারী বাসভবনের প্রাচীর ঘেরা এলাকার মধ্যে রয়েছে বা প্রাচীরের বাইরে রয়েছে সেগুলো গাছও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে সংশ্লিষ্ট অফিস ও তার কর্মকর্তারা। সব মিলিয়ে প্রতিবছর সরকার প্রায় ৫০ লাখ টাকার রাজস্ব হতে বঞ্চিত হচ্ছে এসব কারণে। তবে পুরো চত্বরটির নিয়ন্ত্রণভার জেলা প্রশাসকের রাজস্ব শাখার। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বুঝে নিয়ে যেসব অফিস বা সরকারী বাসভবন সংলগ্ন প্রাচীরের বাইরের আমগাছও তারা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাই আমবাগান ফলকর ইজারাদানকারী রাজস্ব বিভাগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় শর্তজুড়ে দিয়ে উল্লেখ করে যে কোন বাসভবন কিংবা অফিসের বাইরে প্রাচীর সংলগ্ন আমগাছ ইজারার বাইরে থাকবে। অধিকাংশ কর্মকর্তার বাসভবন চত্বরের নির্ধারিত জমির বাইরেও অধিক পরিমাণে জমি দখল নিয়ে রেখেছে। একাধিক আমগাছের লোভে এই নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু মজার ব্যাপার কোন পক্ষই গাছের ফলকর নিংড়িয়ে পান করলেও কোন দিন এসব গাছের তত্ত্বাবধান করে না। ফলে পুরো কোর্টের আমবাগান বিরাণ হতে চলেছে। গাছ শুকিয়ে মারা যাচ্ছে ও অধিকাংশ গাছ সার-সেচের অভাবে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এভাবে যুগের পর যুগ অতিবাহিত হওয়ার কারণে প্রতিবছর গাছের সংখ্যা কমে আসছে। নানান রোগ ব্যাধিতে শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন চোখ তুলেও দেখছে না। যার কারণে শহরের মধ্যে কোর্ট চত্বরের বিশাল আমবাগান ভবিষ্যতে গাছশূন্য হয়ে পড়লে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।
×