ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মা সেতুর চতুর্থ স্প্যান আসছে আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬

পদ্মা সেতুর চতুর্থ স্প্যান আসছে আজ

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর কাজ ক্রমেই এগিয়ে চলেছে। চীন থেকে পদ্মা সেতুর চতুর্থ স্প্যান (১৫০ মিটার সুপার স্ট্রাকচার) শুক্রবার রাতে কুতুবদিয়া চ্যানেলে পৌঁছাবে। গত ১৩ নবেম্বর মাদার ভেসেলে করে চীন থেকে এটি সমুদ্র পথে রওনা হয়। বাকি স্প্যান তৈরির কাজও পুরোদমে চলছে চীনে। আর মাওয়ায় আসা তিনটি স্প্যান ফিটিংয়েও অগ্রগতি রয়েছে। প্রথমটির ফিটিং সম্পন্ন হয়েছে। এখন লোড পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ এই টেস্ট শুরু হবে তার দিন-তারিখ এখনও নির্ধারণ হয়নি। আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্প্যানেরও ফিটিং চলছে মাওয়ার কুমারভোগস্থ বিশেষ ওয়ার্কশপে। জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সেতুর ২৭টি পাইল স্থাপন হয়েছে। আর নদীতেও সমান তালে চলছে সেতুর ভীত তৈরির কাজ। এখন সকলের নজর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর। ৩৭ নম্বর পিলারের পাশাপাশি ৩৮ নম্বর পিলারেও ৬টি পাইল স্থাপন হয়ে গেছে। শুক্রবার রাতে দায়িত্বশীল এক প্রকৌশলী জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, এখন পাইলের ভেতরের মাটি সরানো হচ্ছে আধুনিক প্রক্রিয়ায়। এরপরই কংক্রিটিং হবে। আর ৩৭ নম্বর পিলারও কংক্রিটিংয়ের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এরপরই বসবে পিলার। এরপর সদ্য আসা ৩ হাজার ৬ শ’ টন ক্ষমতার ভাসমান ক্রেন দিয়ে প্রথম স্প্যানটি বসিয়ে দেয়া হবে। সেই লক্ষ্যেই এখন কাজ চলছে। আর পাশাপাশি অন্য স্প্যানগুলো বসানোর প্রস্তুতি নিয়েও কর্মতৎপরতা চলছে পুরো প্রকল্পজুড়ে। এদিকে নদী শাসনের কাজেও রয়েছে অগ্রগতি। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে পুরোদমে কাজ চলছে। মাওয়ায় উচ্চ ক্ষমতার ড্রেজার দিয়ে নদী তলদেশ প্রস্তুত করা হচ্ছে। এরপরই বস্তা ফেলা ও ব্লক ফেলা এবং তীরে ব্লক বসানো হবে। এই শুষ্ক মৌসুমে নদী শাসনের অনেক অগ্রগতি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। রাতে সর্বশেষ অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা বলেন, মূল নদী শাসনের কাজ করছে চীনা ঠিকাদার সিনো হাইড্রো। আর মাওয়া প্রান্তের উজানে নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে জসলদিয়া এলাকায় ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার এলাকায় নদী শাসনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ প্রায় ৪শ’ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে উজানের নদী ভাঙ্গন বন্ধসহ সেতুর ঝুঁকি কমবে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই কাজ শুরু হওয়ার কথা। দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, ২-৪ দিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে। জানুয়ারি থেকে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি ফেরিঘাট শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি হচ্ছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের এ্যাপ্রোচ সড়কও প্রস্তুত। পাচ্চর থেকে কাঁঠালবাড়ি পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এ্যাপ্রোচ সড়ক পুরোপুরি প্রস্তুত। এ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ চলছে এখন টোল প্লাজার কাছাকাছি। জাজিরা প্রান্তের এ্যাপ্রোচ সড়কের ৮৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আর টোল প্লাজার কাজও শেষ পর্যায়ের। মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজা এবং এ্যাপ্রোচ সড়ক দুটিই শেষ পর্যায়ে। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের রাতে জানান, ইতোমধ্যে প্রথম স্প্যান পরিমাণ সুপার স্ট্রাকচার পুরোপুরি জোড়া লাগানো হয়েছে। দ্বিতীয় স্প্যানটির জোড়া লাগানো কাজ প্রায় শেষের দিকে। প্রথম স্প্যানটির সুপার সট্রাকচার জোড়া লাগানোর পর এখন চলছে লোড পরীক্ষার প্রস্তুতি। সাধারণত এই ব্রিজে মালামাল ও যানবাহনসহ ওজন ধারণক্ষমতা ৮শ’ ৯৬ টন। এই পরিমাণ ওজনের কোন কিছু সেতুর ওপর দিয়ে গেলেও ব্রিজের কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং হিসেবে অনুযায়ী এর দেড়গুণ অর্থাৎ ১ হাজার ৩ শ’ ৪৪ টন লোড দিয়ে এর পরীক্ষা করা হবে। এই পরীক্ষার জন্য মাওয়া প্রান্তে লৌহজংয়ের কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে তৈরি করা হয়েছে ব্রিজের বিশেষ প্লাটফর্ম। করা হয়েছে পাইল ক্যাপ। এর ওপর বসিয়ে দেয়া হয়েছে সুপার স্ট্রাকচারের একটি স্প্যান। সোমবার থেকে এই সুপার স্ট্রাকচারের ওপর দেয়া হচ্ছে লোড। ১৩৪৪ টন ওজনের স্টিলের প্লেট লোড বা ওজন হিসেবে বসানো হচ্ছে। এই লোড টেস্ট সফল হলে এক স্প্যান পরিমাণ এই সুপার স্ট্রাকচার আগামী নতুন বছরের ফ্রেব্রুয়ারি নাগাদ বসিয়ে দেয়া হবে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৩৭ ও ৩৮নং পিলারে বসবে প্রথমটি। আর দ্বিতীয় স্প্যানটি বসবে ৩৮ ও ৩৯নং পিলালের ওপর এটির কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। দুই সপ্তাহ আগে থেকে জাজিরা প্রান্তে ৮শ’ কেজির প্লাস্টিক বস্তা ফেলা শুরু হয়েছে। মাওয়া প্রান্তেও নদী শাসনের জন্য ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে। উচ্চ ক্ষমতার এই ড্রেজার ঘণ্টায় ৪-৫ হাজার মিটার কিউবিক মাটি অপসারণ করছে। ড্রেজিং সম্পন্ন হলেই ফেলা হবে কয়েক ধাপে বালুর বস্তা। পাঁচ লেয়ারে ৮শ’ কেজির বস্তা ফেলা হবে সেখানে।
×