ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মানিক সাহা হত্যা মামলার আরও তদন্ত দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬

মানিক সাহা হত্যা  মামলার আরও  তদন্ত দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যা মামলার অধিকতর তদন্ত দাবি জানিয়েছে সাংবাদিক সমাজ। তারা বলেছেন, দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এ ঘটনার পরিকল্পনাকারী, অর্থদাতা ও পৃষ্ঠপোষকদের মুখোশ উন্মোচন করতে চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির অধিকতর তদন্ত প্রয়োজন। একই সঙ্গে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে বিচারিক আদালতের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ তথা সরকারকে উচ্চ আদালতে আপীল করতে হবে। শুক্রবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে কমরেড মনিসিংহ সড়কের মুক্তি ভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই দাবি জানান। সম্প্রতি ৯ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়ে খুলনার বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে ‘সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যার বিচারপ্রত্যাশী সংক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজ’ এর ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী সাকিলা রুমা। সিনিয়র সাংবাদিক আশীষ কুমার দে’র সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক মহাসচিব আব্দুল জলিল ভূঁইয়া, মানিক সাহার ঘনিষ্ট সহকর্মী ও সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, চ্যানেল ২৪ এর কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স এডিটর রাহুল রাহা, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, কালের কণ্ঠের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নিখিল ভদ্র, বিএফইউজের সাবেক নির্বাহী সদস্য রফিকুল ইসলাম সবুজ, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের আঞ্চলিক সমন্বয়ক মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল প্রমুখ। বিচারিক আদালতের রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিচারক নিজেই তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছেন- তদন্তে ত্রুটি ও দুর্বলতা এবং পর্যাপ্ত সাক্ষ্য না পাওয়ার কারণে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া গেল না। এছাড়া একই ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক মামলায় সকলকে খালাস দিতে হলো। অথচ হত্যা মামলার চার্জশীটের পর থেকে মামলাটি পুনঃতদন্তের দাবি জানানো হলেও তা আমলে নেয়া হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, মানিক সাহা হত্যাকা-ের পর তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোটের যশোর, খুলনা ও বাগেরহাট অঞ্চলের কয়েকজন মন্ত্রী ও সাংসদসহ রাষ্ট্রীয় একটি সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও তাঁদের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। মামলার অভিযোগপত্রে মানিক সাহার অনেক ঘনিষ্ঠজনকে সাক্ষী করা হয়নি, এমনকি এ বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য নেয়নি তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ। যে কারণে বর্বরোচিত এ হত্যাকা-ের পরিকল্পনাকারী, অর্থদাতা ও পৃষ্ঠপোষকরা পর্দার আড়ালে রয়ে গেছে। এই অবস্থায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দ্রুত আপীল ও প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করতে অধিকতর তদন্তের উদ্যোগ নিতে রাষ্ট্রপক্ষকে আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে চার দফা দাবি তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যার পরিকল্পনাকারী, অর্থদাতা ও পৃষ্ঠপোষকদের মুখোশ উন্মোচন করতে রাষ্ট্র তথা সরকারকে অধিকতর তদন্তের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পৈশাচিক ও বর্বরোচিত এই হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সকলের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে উচ্চ আদালতে আপীলের উদ্যোগ নিতে হবে। স্বাধীনতা-পরবর্তী ৪৫ বছরে সকল সাংবাদিক হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে ঢাকা ও খুলনাসহ সারাদেশে সকল পেশাদার সাংবাদিক ও তাঁদের জানমালের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান। উল্লেখ্য, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অকুতোভয় সাংবাদিক, মানবাধিকার ও পরিবেশকর্মী, সামরিক-স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে একাধিকবার কারা নির্যাতিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক সাহা ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের অদূরে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় নৃশংসভাবে নিহত হন। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত দৈনিক সংবাদ ও নিউএজ পত্রিকার খুলনাস্থ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও বিবিসি বাংলার খ-কালীন সংবাদদাতা ছিলেন তিনি।
×