ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রচারে অংশ নেবেন খালেদাও

নাসিক নির্বাচনে বিজয়ী হতে বিএনপির নানামুখী কৌশল

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬

নাসিক নির্বাচনে বিজয়ী হতে বিএনপির নানামুখী কৌশল

শরীফুল ইসলাম ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হতে মরিয়া বিএনপি। এ নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হতে চায় বিএনপি। আর এ জন্যই নির্বাচনে বিজয়ের লক্ষ্যে নানামুখী কৌশল গ্রহণ করেছে দলটি। ইতোমধ্যেই দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী প্রচারে সরব হয়ে উঠেছেন। নির্বাচনের আগে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও প্রচারে অংশ নেবেন। সূত্রমতে, রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় থাকা বিএনপি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চায়। তাই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের চ্যালেঞ্জ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বিএনপি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থীসহ অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থী যাতে বিজয়ী হন সেভাবেই প্রস্তুতি জোরদার করছে। তবে এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আগে এটিকে একটি বড় ইস্যু করে রাজপথ উত্তপ্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে বিএনপির। নারায়ণগঞ্জ সিটি করর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যেই দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির প্রধান সমন্বয়ক করা হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে। আর দলের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এ সমন্বয় কমিটির সদস্য হিসেবে যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা হলেনÑ দলের যুগ্মমহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবীর খোকন, ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ ও শহীদুল ইসলাম বাবুল। এছাড়া বিএনপির সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ কমিটির সদস্য। সমন্বয় কমিটি ইতোমধ্যেই নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় নেতাদের সহযোগিতা নিয়ে জোরেশোরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, সমন্বয় কমিটি ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ের টার্গেট নিয়ে আরও অর্ধশতাধিক কেন্দ্রীয় নেতাকে প্রচারে অংশ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। লন্ডন থেকে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এ নির্বাচনের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন। সকল স্তরের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি ভোটের দিন ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত মাঠে সক্রিয় থাকতে হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ের লক্ষ্যেই এবার মেয়র পদে ক্লিন ইমেজের নেতা নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে মনোনয়ন দিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে বিএনপি। কাউন্সিলর পদেও ভাল প্রার্থী দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে যাদের মনোনয়ন দেয়া হয়নি তাদেরও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়। গণসংযোগসহ এখন প্রার্থীদের পক্ষে শুরু হয়েছে জোরেশোরে প্রচার। এ প্রচারে বিএনপির নেতাকর্মীসহ দল সমর্থক বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষও যোগ দিয়েছে। এর ফলে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ৪ বছর আগের নির্বাচনের মতো বিএনপি এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন বর্জন করবে না বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। আগের নির্বাচনে বিএনপি মেয়র পদে মনোনয়ন দেয় কেন্দ্রীয় নেতা তৈমুর আলম খন্দকারকে। কিন্তু তৈমুর আলম খন্দকার থাকলে আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান বিজয়ী হতে পারেÑ এমন আশঙ্কা থেকে একেবারে শেষ মুহূর্তে কেন্দ্র থেকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়। নির্বাচন বর্জনের এ ঘোষণা শুনে তৈমুর আলম খন্দকার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি সবার কাছে বলতে থাকেন বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা না দিলে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হতেন। রাগে ক্ষোভে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার কথাও বলেন। অনেক দিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর আবার দলে সক্রিয় হলে এ বছর বিএনপির নতুন কমিটিতে তাকে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টার পদ দেয়া হয়। এবার তিনি তার অনুসারীদের নিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে সক্রিয় রয়েছেন। জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি এবার প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে কেন্দ্রীয় নেতাকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে সক্রিয় থাকার দায়িত্ব দিয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ কিছু সিনিয়র নেতাকে দিয়ে একটি সমন্বয় কমিটি করা হলেও এর বাইরে এ নির্বাচন মনিটর করার জন্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতাকেও দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা খালেদা জিয়ার পরামর্শ নিয়ে মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করা নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্বাচন পরিচালনা কাজে গতি আনবেন। প্রদত্ত তফসিল অনুসারে ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতা চেয়েছেন। এছাড়া তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। আরও কয়েক দফা নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। ইতোমধ্যেই বিএনপির সিনিয়র নেতারা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে অংশ নেয়া সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, এ নির্বাচন বিএনপির সর্বশেষ টেস্ট কেইস। তারা সরকার ও নির্বাচন কশিমনকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তা না হলে আন্দোলন হবে। এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ের লক্ষ্যে দলের সমন্বয় কমিটিসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এ নির্বাচনের ফল বিএনপির পক্ষে আসবে। আর এটা টের পেয়ে সরকারী দল নানামুখী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তবুও আমরা আশা করছি গণতন্ত্রের স্বার্থে সরকার ও নির্বাচন কমিশন এ নির্বাচনকে বিতর্কিত করবে না। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে। তা না হলে সরকার ও নির্বাচন কমিশন নানামুখী প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। আর এটা কারও জন্যই মঙ্গলজনক হবে না।
×