ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র

সিংহশয্যার বুদ্ধমূর্তি বিমোহিত করে পর্যটকদের

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬

সিংহশয্যার বুদ্ধমূর্তি বিমোহিত করে পর্যটকদের

রাজুমোস্তাফিজ, কক্সবাজারের রামু থেকে ফিরে ॥ জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক...। মহামতি গৌতম বুদ্ধের এই অমর বাণী লেখা সাইনবোডের্র কিছু পরেই রামুর মন্দির চত্ব¡রে শোভা পাচ্ছে সিংহ শয্যার গৌতম বুদ্ধর মূর্তি। কক্সবাজারের রামু উপজেলার উত্তর মিথাছড়ি, বড়ুয়াপাড়া পাহাড়ের কোলে বিশাল এক সাইনবোর্ড। এখানে গাছ-গাছালিতে ভরা পাহাড়ের উপর নির্জন এক জায়গায় গড়ে উঠেছে বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা ও ভুবন শান্তি কেন্দ্র। আর আছে ১শ’ ফুট সিংহ শয্যার গৌতম বুদ্ধ মূর্তি। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা প্রতিদিন আসে এখানে প্রার্থনা করতে। প্রার্থনা করে নীরবে চলে যায়। শুধু বৌদ্ধ ধর্মের মানুষ এখানে আসে তা নয়, পর্যটকরা কক্সবাজার এলেই রামুর এই মন্দিরে একবার বেড়াতে আসেন। তারা দিনভর এখানে কাটান। ছবি তোলেন বিশাল সিংহ শয্যা গৌতম বুদ্ধ মূর্তির কাছে। ঘুরে ঘুরে দেখেন বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র। জানা-অজানা বিভিন্ন পাখির কলতান পর্যটকদের বিমোহিত করে। কারও যেতে মন চায় না। মনে হয় আরও কিছুক্ষণ সময় কাটাই এখানে। কুড়িগ্রামের মজিদা কলেজের প্রভাষক লাইনুুন নাহার তার পুরো পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছেন এই বৌদ্ধ মন্দিরে। তিনি জানান, এক দশক আগেও এখানে এসেছিলাম। এত সুন্দর চত্বর ছিল না এটি। সময়ের সাথে প্রচুর সংস্কার করা হয়েছে। আগে কাঠের দোতলা ছিল, এখন কয়েক তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। পাহাড়ের উপর এত মনোরম পরিবেশ যা সত্যিই অতুলনীয়। এই মন্দিরের আশপাশের মানুষ আজও ভুলতে পারেনি তাদের সেই ভয়াল রাতের স্মৃতির কথা। কোরান শরীফ অবমাননাকর জঘন্য ছবির একটি ঘটনা নিয়ে রামুর এই মন্দির জ্বালিয়ে দেয় দুষ্কৃতকারীরা। লুটপাট করে মন্দিরের সব জিনিস। শুধু মন্দির নয়, বড়ুয়াপাড়ার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকার মানুষের বাড়িও জ্বালিয়ে দেয় তারা। পরর্বতীতে সরকারের কঠোর পদক্ষেপে শান্তি ফিরে আসে পুরো এলাকায়। নতুনভাবে তৈরি হয় পুরো ভবন। বিশাল সিংহ শয্যার গৌতম বুদ্ধের মূর্তি। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্দিরটি উদ্ধোধন করেন। সম্প্রীতির বন্ধন আবারও ফিরে এসেছে এখানে। মন্দিরে বেড়াতে আসা স্থানীয় কয়েকজন পুরুষ মহিলা জানান, এ বিহারে মানুষ প্রাণের টানে আসে। সারাদিন সবাই ঘুরে বেড়ায়, সন্ধ্যায় আবার ফিরে যায়। এটি এখন দর্শনার্থীদের মিলন কেন্দ্র হয়েছে। সারা দেশের মানুষ এই বৌদ্ধ বিহার দেখতে আসেন। রামুর এ বৌদ্ধ বিহারে এখন মানুষের প্রাণচাঞ্চল্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্দিরের এক ভিক্ষু জানান, অনেক পুরাতন এই মন্দির। কয়েক শ’ ছোট-বড় মূর্তি ছিল এখানে। দুষ্কৃতকারীরা আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার সময় বেশ কিছু মূর্তি নষ্ট হলেও আবারও সরকারের সহয়োগিতায় সংগ্রহ করা হয়েছে। থাইল্যান্ড, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক মূর্তি উপহার পাওয়া গেছে। গৌতম বুদ্ধের অনেক নির্দশন পুনরায় সংগ্রহ করা হয়েছে। এ জন্য বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি। প্রতিদিন প্রচুর পর্যটক আসে সারা দেশ থেকে। এ ছাড়া বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা প্রতিদিন প্রার্থনা করতে আসেন। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র’ উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ভাবনা কেন্দ্র ও ভুবন শান্তি ১শ’ ফুট সিংহ শয্যার নৈসর্গিক শোভাম-িত দৃষ্টিনন্দন গৌতম বুদ্ধমূর্তি নতুন করে নির্মাণ করা হয়। মূর্তিটি নির্মাণ কাজ পরিচালনা করেন থাইল্যান্ডের খ্যাতিসম্পন্ন বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ কৌশল বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত বৌদ্ধ রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় আরও মহিমান্বি^ত রূপলাভ করে। অতীতের যে বৌদ্ধ স্থাপত্য ও ভাস্কর্য যেমন আমাদের অহংকার তেমনি আধুনিক কালের ইতিহাস ও জনমানসের সমাজে ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহারে বৌদ্ধ ভাস্কর্যের এ সংযোজন সে ঐতিহ্যের ধারা। এ নিছক বৌদ্ধমূর্তি নয় মৈত্রী করুণার এক প্রতিচ্ছবি। এ যেন স্বর্গ থেকে অবতরণের পর মর্তের ভক্ত নরনারীদের উদ্দেশে বুদ্ধের আহ্বান এসো কল্যাণের জন্য, এসো বহুজনের হিত ও মঙ্গলের জন্য। স্থানীয়রা মনে করেন ১শ’ ফুট সিংহ শয্যার গৌতম বুদ্ধমূতি শুধু জনবন্দনার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে শান্তি ও সম্প্রীতিময় শুদ্ধচিত্ত ও মুক্ত চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার অনন্য অবলম্বনও এটি।
×