ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রসরাজকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান বাবা-মার

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬

রসরাজকে মুক্তি  দেয়ার আহ্বান বাবা-মার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘ধর্মীয় অবমাননার’ অভিযোগে গ্রেফতার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের জেলে রসরাজকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তার বাবা-মা। শুক্রবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার ছেলেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করে তারা বলেন, রসরাজ লেখাপড়া জানে না। অশিক্ষিত। তার পক্ষে ফেসবুকে কোন কিছু লেখাও সম্ভব না। ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ১৭টি মন্দির ও হিন্দুদের দেড় শতাধিক ঘরে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন রসরাজের পরিবারের সবাই। এর মধ্যে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত রসরাজকে। একমাস পর জনসম্মুখে আসলেন পরিবারের সদস্যরা। তবে এখন নিরাপত্তার অভাবে তারা বাড়ি ফিরে যাননি। জানা গেছে, রসরাজের কাকাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের অনেকেই এখনও পলাতক। ২৮ অক্টোবর নাসিরনগরের আগে হরিণবেড় বাজারের পাশে দাশপাড়া গ্রামের ৩০ বছর বয়সী রসরাজ দাসের ফেসবুক পাতায় ‘ইসলাম অবমাননার’ ছবি পোস্ট করার অভিযোগ উঠলে পুলিশ তাকে আটক করে পাঁচ দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার পর থেকেই তিনি কারাগারে ছিলেন। তার পক্ষে কোন আইনজীবীকে দাঁড়াতে দেয়া হয়নি। এমনি বিচারক আসামিকে অভিযোগের ব্যাপারে কোন কিছুই জিজ্ঞাসা না করেই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। লেখাপড়া না জানা মাছ বিক্রেতা রসরাজের পক্ষে ‘অবমাননাকর’ ছবি তৈরি করে ফেসবুকে পোস্ট করা সম্ভব কিনা সে বিষয়টি তখনই আলোচনায় আসে। তদন্তে নেমে পুলিশ স্থানীয় এক সাইবার ক্যাফের মালিককে ওই ছবি পোস্ট করার অভিযোগে গ্রেফতার করে। ইতোমধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে রসরাজ নির্দোষ বলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ তার মোবাইল থেকে ধর্মীয় অবমাননার ছবি পোস্ট করা হয়নি। এ ব্যাপারে সে জড়িত নয় বলেও বলছে পুলিশ। প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়ারও প্রক্রিয়া চলছে। আলামিন সাইবার পয়েন্টের মালিক জাহাঙ্গীর আলম (৩০) নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর গত ২৯ নবেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইকবাল হোসাইন বলেন, জাহাঙ্গীর আলম হরিণবেড় বাজারের আল আমিন সাইবার ক্যাফের স্বত্বাধিকারী। পুলিশের ধারণা, জাহাঙ্গীরই রসরাজের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ‘ধর্মীয় অবমাননার’ ছবিটি পোস্ট করেন। তারপরও কেন রসরাজকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নেতারা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই জোটের আয়োজনেই শুক্রবার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসে রসরাজের পরিবারের সদস্যরা। নমিতা রানী দাস জানান, তার তিন ছেলের মধ্যে রসরাজ দ্বিতীয়। তিনি বলেন, আমার ছেলে পড়াশুনা জানে না। কোনদিন স্কুলে যায়নি। বড় ভাই আর বাবার সঙ্গে বালিঙা বিলে মাছ ধরত। নাসিরনগরের ঘটনায় দায়ীদের শাস্তি ও হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ারও আহ্বান জানান তিনি। রসরাজের ভাই দয়াময় বলেন, তাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে কেবল ছোটভাই পলাশ স্কুলে গিয়েছিল। আমরা দুই জন নামও লিখতে পারি না। খালি পলাশ দুই তিন ক্লাস পড়ছে। হামলার দিন কোথায় ছিলেন জানতে চাইলে দয়াময় বলেন, গ্রামের মানুষ তাদের আগেই সতর্ক করায় বাড়ি থেকে পালিয়ে অন্য এক জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা। তার বোনজামাই নেপাল জানান, দুই মাস আগে রসরাজ ২ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে পুরানো একটি মোবাইল ফোন কেনেন। তবে তার পক্ষে ফেসবুক চালানো সম্ভব ছিল না। রসরাজের পরিবার ভারতে পালিয়ে গেছে’- এমন প্রচারের প্রতিবাদ জানান রসরাজের বাবা জগন্নাথ চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, আমরা কেউ ভারতে যাইনি। আত্মী-স্বজনের বাসায় থাকছি। রসরাজের মামলার দিন আদালতেও যাচ্ছি। ফেসবুকে ইসলাম অবমাননার ঘটনা ‘সাজিয়ে’ কেউ পরিকল্পিতভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ও মন্দিরে হামলা চালিয়েছে বলে তার ধারণা। নির্দোষ ছেলের মুক্তি এবং মন্দির ও বাড়িঘরে হামলাকারী দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান এই বাবা। অন্যদের মধ্যে হিন্দু মহাজোটের সভাপতি ড. প্রভাস চন্দ্র রায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
×