ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেট বাস্তবায়নের গতি বাড়ানোর উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬

বাজেট বাস্তবায়নের গতি বাড়ানোর উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। রূপকল্প-২১ সামনে রেখে সরকারের চলতি মেয়াদের আগাম তিনটি অর্থবছরের জন্য ইতোমধ্যে বাজেট পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এই পরিকল্পনার আওতায় বাজেট বাস্তবায়নে তিন খাত থেকে অর্থ সংগ্রহে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এগুলো হচ্ছে- রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, বৈদেশিক সহায়তার হার বৃদ্ধি এবং স্বশাসিত সংস্থাগুলো থেকে অতিরিক্ত উদ্বৃত্ত আদায় করা। প্রবৃদ্ধি সঞ্চারী অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল সম্পদ বিনিয়োগের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পদ্মা সেতুসহ ১০টি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্প যাতে দ্রুত ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়িত হতে পারে সেই কৌশল গ্রহণ করতে যাচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২০১৯ সালে। ওই সময়ের মধ্যে আরও দুটি বাজেট প্রণয়নের সুযোগ রয়েছে সরকারের। রূপকল্প-২১ বাস্তবায়ন, সপ্তম পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনা এগিয়ে নেয়া, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়া এবং দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বাজেটের আকার বাড়ানোর পাশাপাশি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। চলতি বাজেটের মধ্যে রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা থাকছে। এ লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরের ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকার বাজেট দেয়ার একটি পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এদিকে, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ থাকলেও শতভাগ বাজেট বাস্তবায়ন হচ্ছে না। প্রতিবছরই বাজেটে উন্নয়ন ও অনুন্নয় ব্যয় বাড়ছে। তবে ঘোষিত বাজেটের বাস্তবায়ন নিয়ে সব সময়ই সংশয় প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে তাতে কোন কর্ণপাত করেন না অর্থমন্ত্রী। তিনি প্রতিবছর বিশাল আকারের বাজেট ঘোষণা করছেন। তবে অর্থবছরের শেষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা একদিকে যেমন টাকা খরচ করতে পারে না, অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। কোন কোন বছর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আয় হলেও সরকারের ব্যয়ের সক্ষমতা না থাকায় বাজেট বাস্তবায়ন হয় না। চলতি অর্থবছরেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অর্থ সংগ্রহ করতে পারছে না। ফলে তাদের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করতে হয়। খরচ করতে না পারায় এডিপির আকারও প্রতিবছর কমানো হচ্ছে। যদিও চলতি অর্থবছর অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় এখন বাজেট বাস্তবায়নে গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তবে রেমিটেন্স ও বিদেশী বিনিয়োগ, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি এবং এডিপি বাস্তবায়নে কিছুটা দুশ্চিন্তার ছায়া রয়েছে। এগুলোসহ চলতি এবং আগামী অর্থবছরের অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতি ঠিক করতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, বাজেট বাস্তবায়নে সরকার এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রতিদিন কতটুকু বাজেট বাজেট বাস্তবায়ন হচ্ছে সেই খবর আমরা রাখছি। এছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং প্রতিষ্ঠানগুলোও শতভাগ বাজেট বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়েছে। ইতোমধ্যে দ্রুত বাজেট বাস্তবায়নে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন এবং সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় চলতি বাজেটে বেশ কিছু কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। রূপকল্প-২১ সামনে রেখে এগুলো সঠিক সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুসহ মেগা দশটি প্রকল্প বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়ানো হচ্ছে। সরকারের শেষ মেয়াদে ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হবে। এদিকে, ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বিশাল ব্যয়ের বাজেট বাস্তবায়নে অর্থমন্ত্রীর প্রধান ভরসার খাত রাজস্ব আয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৯ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে এনবিআর। এ অঙ্ক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮৮ কোটি টাকা বা প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। আর জুলাই-আগস্ট মিলিয়ে রাজস্ব আয়ে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অর্থবছরের বাকি মাসগুলোতে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে ঘাটতি অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি মাথায় রেখে রাজস্ব আদায় আরও বাড়াতে চাইছেন অর্থমন্ত্রী। এ জন্য কর ফাঁকি বন্ধ, কর আদায় বাড়ানো এবং করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে চাইছেন তিনি। দেশে বর্তমানে জিডিপির মাত্র ১১ শতাংশ কর আদায় হয়। এ হার ১৪ থেকে ১৫ শতাংশে নিয়ে যেতে চাইছেন মন্ত্রী। জানা গেছে, আগামী দুই বছরের বাজেট প্রণয়নের বিষয়টি মাথায় রেখে ইতোমধ্যে সরকার উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই রূপরেখার মধ্যে আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের উচ্চতর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিরুপণ করা হয়েছে। ওই সময়ে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, শিল্পের প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ৫ শতাংশ ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।
×