ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বাস ও আস্থা হারিয়েছি : সন্তু লারমা

প্রকাশিত: ০২:১২, ২ ডিসেম্বর ২০১৬

বিশ্বাস ও আস্থা হারিয়েছি : সন্তু লারমা

অনলাইন ডেস্ক ॥ দীর্ঘ ১৯ বছরেও পার্বত্য শান্তিচুক্তি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় আরো একবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। তিনি বলেছেন, চুক্তির পর ১৯ বছর অতিবাহিত হলো। আমি মনে করি না, সরকার এটি আর বাস্তবায়ন করবে। এখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এসেও যদি পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়নের কথা বলেন, আমি তার কথা বিশ্বাস রাখতে পারি না। কারণ সেই বিশ্বাস ও আস্থা হারিয়ে ফেলেছি। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ১৯তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। জেএসএস এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। দশ দফা দাবিতে জনসংহতি সমিতির অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন পাহাড়িদের এই নেতা। তিনি বলেন, আমরা আমাদের দাবি আদায়ে কাজ করব। সরকার যদি অস্ত্রের ভাষা ব্যবহার করে, অবদমনে তৎপর থাকে, তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থা এভাবে থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। কয়েক দশকের সশস্ত্র সংঘাতের পর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে সন্তু লারমার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। সরকার ওই চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি সম্পূর্ণ এবং ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়নের কথা বললেও জনসংহতি সমিতি তাকে ‘অসত্য প্রচার’ বলে আসছে। তাদের ভাষ্য, বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র ২৫টি ধারা। ঢাকার সুন্দরবন হোটেলে আয়োজিত আলোচনা সভায় সন্তু লারমা অভিযোগ করেন, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘দলীয়করণের নগ্ন প্রতিফলন’ ঘটেছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলাসহ সব কর্মকাণ্ড চালায় সেনাবাহিনী। তারপরে আছেন জেলা প্রশাসক, এসপি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। প্রশাসনে একজন কর্মকর্তাও নেই যারা শান্তিচুক্তির প্রতি সংবেদশীলন। সন্তু লারমা বলেন, পাহাড়ে ‘আদিবাসীরা’ ক্রমান্বয়ে ‘নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে’। প্রশাসন ও সরকার নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে জানান দিচ্ছে, ‘হয় দেশ ছেড়ে চলে যাও, নয়তো নতজানু হয়ে থাকো’। শান্তিচুক্তির বার্ষিকীতে পত্রিকায় প্রকাশিত বিশেষ ক্রোড়পত্রে চুক্তির পক্ষ হিসেবে জনসংহতি সমিতির কোনো অংশগ্রহণ না থাকার কারণেও সরকারের সমালোচনা করেন সন্তু লারমা। তিনি বলেন, সত্যকে গোপন করে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে এখানে। যাতে এই ক্রোড়পত্র যারা পড়বেন, তারা ভাববেন- সবইতো ঠিকমতো হচ্ছে। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে শেখ হাসিনার উদ্যেগেই পরের বছর শান্তিচুক্তি হয়। জনসংহতি সমিতির পক্ষে তাতে সই করেছিলেন সন্তু লারমা। সে সময় যে ‘আবেগ ও অনুভূতির আবেশ’ ছিল ১৯ বছর পর এসে তা ‘নিঃশেষ’ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন এই পাহাড়ি নেতা। ঐক্যন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য আলোচনা সভায় বলেন, আজকের এই আলোচনা সভা রাষ্ট্রীয় প্রতারণাবিরোধী সমাবেশ, শোকের উৎসব এবং জাতীয় মিথ্যাচারের প্রতিবাদ বলে আমি মনে করি। ক্রোড়পত্রের মাধ্যমে সরকারের চুক্তিবিরোধী প্রতারণা বড় রকমভাবে প্রকাশ পেয়েছে। এতে বর্ণবাদী ও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে। সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিকল্পিতভাবে ‍সেটেলার বাঙালিদের সংখ্যাগুরু বানানোর কাজ অব্যাহত রয়েছে। এর মাধ্যমে পরিস্থিতি এক ধরনের এথনিক ক্লিনজিংয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যেটা বিশ্বব্যাপী অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অন্যদের মধ্যে জাসদ সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য নূর আহম্মেদ বকুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ও আইনজীবী প্রকাশ বিশ্বাস আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।
×