ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কে জানত ধোনি আর আমার পৃথিবী বদলে যাবে

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ২ ডিসেম্বর ২০১৬

কে জানত ধোনি আর আমার পৃথিবী বদলে যাবে

অনলাইন ডেস্ক ॥ বলিউডের নতুন ‘হার্টথ্রব’। অঙ্গদ বেদী। অসংখ্য বান্ধবী। মুখে অবশ্য বলেন গার্লফ্রেন্ড নেই। শুনলাম আজকাল আপনার ফোনের স্পিড ডায়ালে প্রথম দু’টো নম্বর নাকি দুই সুপারস্টারের? (একটু ঘাবড়ে গিয়ে) কাদের কথা বলছেন বলুন তো? প্রথম জনের নাম অমিতাভ বচ্চন। আর... (থামিয়ে দিয়ে) শুনুন, দ্বিতীয় নম্বরটাও মিস্টার বচ্চনের। ‘পিঙ্ক’য়ের শ্যুটের আগে থেকেই ওঁর নম্বরগুলো স্পিড ডায়ালে রেখেছি। বেশ কয়েক বার বিনা কারণে ফোনও করেছি, জাস্ট গলাটা একবার শুনব বলে (হাসি)। তার পরের নম্বরটা অবশ্য আরেক স্পেশাল মানুষের... কার? শাহরুখ খান, না আলিয়া ভট্ট? না, না। ওঁরা নন। ভদ্রলোকের নাম বিষেণ সিংহ বেদী। ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেট ক্যাপ্টেন। এবং আমার ড্যাডি। সেকী! যে অঙ্গদ বেদীকে আজকাল পাড়ার সুপারস্টোরে সুন্দরী মহিলাদের কাছে মবড হতে হচ্ছে, তাঁর ফোনের স্পিড ডায়ালে কোনও মহিলার নম্বর নেই! কী আর করা যাবে বলুন! আমি তো এ রকম। যাঁরা ‘পিঙ্ক’ দেখে ভেবেছেন আমিও অনেকটা রাজবীর-য়ের মতো অ্যারোগ্যান্ট, উগ্র, তাঁরা বোধহয় ‘ডিয়ার জিন্দেগি’-র সিড-কে দেখে একটু হলেও বুঝবেন যে, আমি আসলে ছেলেটা খারাপ নই (হাসি)! ‘পিঙ্ক’য়ের কোর্টরুম দৃশ্যে আপনার ওই অ্যারোগ্যান্ট চেহারা দেখে তো লোকজন এত রেগে গিয়েছিলেন যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘উই হেট রাজবীর’ গ্রুপও তৈরি হয়ে গিয়েছিল... হুমম। তবে আমি কিন্তু মোটেও রাজবীরের মতো নই। বাড়িতে যদি কোনও দিন ওই ভাবে কারও সঙ্গে কথা বলতাম তা হলে ড্যাডি হয়তো বাড়ি থেকে বের করে দিত। সুতরাং, ওই রকম অ্যারোগ্যান্ট বখে যাওয়া ছেলের রোলটা করা ওয়াজ ডিফিকাল্ট। কিন্তু ‘পিঙ্ক’য়ের ওই চরিত্রটা করেছিলাম বলেই তো আজকাল কিছু লোক শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন (হাসি)। আর একটা কথা বলি? শিওর, বলুন... ‘পিঙ্ক’য়ের পর ‘ডিয়ার জিন্দেগি’তে সিড-য়ের ক্যামিওটা দেখে অনেকেই বলছেন, ‘এত ছোট চরিত্র নিলে কেন?’ কিন্তু আমার কাছে এই স্টেপটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মিস্টার বচ্চনের পর আলিয়া ভট্ট, শাহরুখ খানের সঙ্গে ছবি কেউ হাতছাড়়া করে? অ্যাট লিস্ট এখন তো শাহরুখ আমায় নামে চেনেন। জানেন, আমি কী রকম কাজ করি। আমি ঠিক এটাই চেয়েছিলাম। সেই জন্যই ‘ডিয়ার জিন্দেগি’। আরে ভাই! এই ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে হলে, পাঁচ মিনিটের রোলেও নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। এ রকম ইমোশনাল, চার্মিং একটা চরিত্র ছাড়়তে চাইনি। ইন্ডাস্ট্রির লোকজন তো মনে করেন, যে বাস্তবেও অঙ্গদ বেদী অনেকটা সিড-য়ের মতোই। মহিলাদের কাছে প্রিন্স চার্মিং... (হেসে) আই ডোন্ট ডিনাই দ্যাট। তবে হ্যাঁ, পুরোটাও সিড নই। আমি কেয়ারিং, আন্ডারস্ট্যান্ডিং, এবং... (একটু থেমে) ইয়েস, কিছুটা চার্মিং-ও হয়তো! আমরা একটু অন্য কথা বলি? আসলে নিজের ব্যাপারে এত কথা বলিনি তো আগে। তাই কী রকম একটা লাগছে... জানেন, আপনাকে ইন্টারভিউ করার আগে বহু পুরোনো একটা ক্রিকেট ম্যাচের স্কোরবোর্ড চোখে পড়ল। দিল্লি বনাম বিহার অনূর্ধ্ব ১৯ দলের কোচবিহার ট্রফির সেমিফাইনাল। বিহারের হয়ে সেই টুর্নামেন্টে অভিষেক হয়েছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনি নামে এক যুবকের। আর সেই ম্যাচেই দিল্লির উদীয়মান এক বোলার মোট একতিরিশ ওভার বল করে বাহাত্তর রানে এক উইকেট পেয়েছিলেন... (থামিয়ে দিয়ে) ওই বোলারটাই তো আমি। (কিছুটা উত্তেজিত হয়ে) আপনি কোথা থেকে খুঁজে পেলেন ওই স্কোরবোর্ডটা? আমার তো খেয়ালই ছিল না ম্যাচটার কথা। হঠাৎ কত স্মৃতি মনে পড়ে গেল। ক্রিকেটের দিনগুলো, কিট ব্যাগ কাঁধে ট্রেনিং করতে যাওয়া...কত কত স্মৃতি। জানেন, ওই ম্যাচে যখন মাহির হাতে মার খাচ্ছি, মনে হয়েছিল এই নতুন ছেলেটাকে পরের বার পেলে দেখিয়ে দেব। আর আজ দেখুন, সেই ছেলেটাই ভারতের সফলতম অধিনায়ক। আর সে দিনের সেই রক্তাক্ত বোলার বাইশ গজ থেকে বহু দূরে... হ্যাঁ। আসলে এটাই জীবন। জামশেদপুরের কিনান স্টেডিয়ামে সেই দুপুরে তো দু’জনের কেউই ভাবিনি যে, পরের সতেরো বছরে এভাবে বদলে যাবে আমাদের পৃথিবী। তবে আমি আজও কিন্তু নিয়মিত ক্রিকেট দেখি জানেন! ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজের খবর রাখি। মুম্বইয়ে চতুর্থ টেস্টটা দেখারও ইচ্ছে আছে। সচিন-সৌরভ-রাহুলদের পরে বিরাট-পূজারা-অশ্বিনরা যে ভাবে নিজেদের ইভলভ করেছে সেটা জাস্ট ভাবা যায় না। তবে জানেন, সে দিন মাহি যেমন ভাবেনি যে, ও একদিন দেশের হয়ে অধিনায়কত্ব করবে, আমিও তো স্বপ্নে ভাবিনি যে, কোনও একদিন সেটে আমার পিঠ চাপড়ে দেবেন অমিতাভ বচ্চন। মাঝে মাঝে কী মনে হয় জানেন? কী? ধোনি আর আমি বোধহয় সত্যি ভাগ্যবান। নইলে দেখুন না, দু’জনেই কি আর নিজেদের পছন্দের রাস্তায় হাঁটতে পারতাম! ছোটবেলায় যে অমিতাভ বচ্চনের ছবি লুকিয়ে রাখতাম কিট ব্যাগে, তার সঙ্গেই কিনা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিহার্সাল করছি, ভাবলেই কী রকম অবাক লাগে! ওই দিনগুলোই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত। মাঠে নেমে উইকেট পেয়েও বোধহয় কোনও দিন এত খুশি হইনি। তবে এসবের জন্য আমি পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী-র কাছে কৃতজ্ঞ। ওঁরা তো প্রাথমিক ভাবে অন্য কাউকে নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন, কিন্তু দিল্লিতে একদিন অনিরুদ্ধ-র সঙ্গে দেখা হওয়ার পরই, ওঁরা ডাকলেন। আমি আসলে টেস্ট ক্রিকেটের বড় সমর্থক এবং ‘সবুরে মেওয়া ফলে’তে বিশ্বাসী। তাই টি-টোয়েন্টির মতো ছুটকো সাফল্যে বিশ্বাস করি না। যতই টেস্ট ক্রিকেট, টেস্ট ক্রিকেট করুন, আপনার টেলিভিশনে আত্মপ্রকাশ তো সেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের হাত ধরেই। আইপিএল না থাকলে তো... (থামিয়ে) হ্যাঁ, আইপিএলের শোগুলো হোস্ট না করলে হয়তো আমার বলিউডে পা রাখা হতো না। ওই শোগুলোর পরেই প্রথম ছবি ‘ফালতু’র অফার পাই। আর তার পর এত কিছু। আপনার আর কোনও প্রশ্ন আছে? ‘ডিয়ার জিন্দেগি’ দেখে অনেকের মনে হয়েছে যে, একটা ছবিতে এতজন সুদর্শন পুরুষকে কাস্ট করে আসলে যুবতীদের কনফিউজ করে দিয়েছেন পরিচালক গৌরী শিন্ডে... (প্রচণ্ড হেসে) ভাল দেখতে মানেই কিন্তু ভাল অভিনেতা নয়। টিকে থাকতে হলে শুধু লুকস দিয়ে কিছু হবে না। অভিনয়টা জানতে হবে। আর শুনুন ভাই, আজও ইন্ডাস্ট্রিতে শাহরুখ, সলমন, আমির এবং মিস্টার বচ্চন ছাড়া কেউ আপনাকে বক্স অফিসে গ্যারান্টি দিতে পারবেন না। আমাদের প্রজন্মে অনেকেরই সেই ক্যালিবার নেই। কী বলছেন! রণবীর কপূরও নন? না। দেখুন রণবীর বা বাকিরা নিঃসন্দেহে ভাল অভিনেতা। কিন্তু নিজের কাঁধে একটা ছবিকে বক্স অফিস হিট করাতে পারেন কি? আমার তো মনে হয় না। আপনার সঙ্গে কথা বলতে বলতে মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে যেন ফোনের ও পারে কথা বলছেন বিষেণ সিংহ বেদী, যিনি সোজাসাপ্টা কথা বলায় বিশ্বাসী... (হেসে) আমিও কিন্তু ওই রকমই। মনে আছে, কোচবিহার ট্রফির ওই ম্যাচটার পর টিম হোটেলে ফিরে মনে হয়েছিল আর ক্রিকেট খেলব না। কারণ তার কয়েক দিন আগে ড্যাডি বলেছিল, ‘‘২০ বছরে যখন জাতীয় দলের কাছাকাছি পৌঁছতে পারলে না তখন আর নাই বা খেললে।’’ ড্যাডি বরাবরই এ রকম। যাকে যেটা বলার সেটা স্পষ্ট বলে দেয়। তা সে স্ত্রী হোক বা ছেলে। প্রথম যখন মুম্বই আসি, ড্যাডি কয়েক দিন ভাল করে কথা বলেনি। বিষেণ সিংহ বেদীর ছেলে অভিনয় করবে সেটা মেনে নিতে পারেনি। তবে সেই মানুষটাই সতেরো বছর পর মিস্টার বচ্চনের পাশে বসে ‘পিঙ্ক’ দেখে বলেছিল, ‘‘তু তো ছা গ্যয়া পুত্তর।’’ এ সব শুনলে দায়িত্ব বেড়ে যায়। ও, আপনাকে আরও একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। কী? ‘পিঙ্ক’য়ের পর মিস্টার বচ্চন আমাকে তাঁর জুতো গিফট করেছিলেন। আমাদের দু’জনের পায়ের সাইজ এক, নামের ইনিশিয়ালস এক। উনিও এবি, আমিও এবি। ভাবা যায় (প্রচণ্ড হাসি)! তবে আপনাকে নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির অদ্ভুত একটা ধারণা আছে। আপনি নাকি পার্টি অ্যানিম্যাল, বান্ধবীর সংখ্যা প্রচুর এবং নাকি অসম্ভব মুডি... কারা এ সব বলে বলুন তো? আমি আজকাল ফিটনেস ফ্রিক। পার্টিতে যাই না বললেই চলে। বান্ধবীর সংখ্যাও হাতে গোনা। ‘ডিয়ার জিন্দেগি’র শ্যুটিংয়ের সময় আমি আর আলিয়া এই নিয়ে প্রচুর ইয়ার্কি মারতাম। এক দিকে আলিয়া, অন্য দিকে তাপসী পান্নু-কীর্তি কুলহারি... এত সুন্দরীদের ‘প্রিন্স চার্মিং’ সামলাতেন কী ভাবে? (হেসে) আলিয়া যেমন ভাল অভিনেত্রী তেমনই ভাল মানুষ। ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব হতে সময় লেগেছিল কয়েক মিনিট। বরং তাপসী আর কীর্তির সঙ্গে আমি শুরুর দিকে চুপচাপ থাকতাম। পর্দায় যে ভিলেন সে কখনও হিরোইনদের সঙ্গে হেসে গল্প করতে পারে! কিন্তু শ্যুটিং শুরুর পর তাপসী ও আমি দু’জনে ভাল বন্ধু হয়ে গিয়েছি। আসলে ও দিল্লির মেয়ে, আমিও দিল্লির ছেলে। আমার অবশ্য বন্ধুত্ব করতে খুব বেশি সময় লাগে না। কিন্তু আজও তো আপনার অধিকাংশ বন্ধুই ক্রিকেট জগতের... হ্যাঁ, তা ঠিকই। ইন্ডাস্ট্রির চেয়ে আমার খেলার মাঠের বন্ধু অনেক বেশি। যেহেতু সার্কেলটা বড় সে জন্য পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারতে বেশ ভাল লাগে। ক্রিকেট থেকে দূরে থেকেও বেশ একটা ‘ক্রিকেট ক্রিকেট’ ফিলিং নিয়ে বাড়ি ফেরা যায়। এবং, সেই জন্যই বোধহয় যুবরাজ সিংহ-র ব্যাচেলর পার্টিতে আপনি আর জাহির খান পৌঁছে যান দুবাই... (প্রচণ্ড অবাক হয়ে) এই খবরটাও আপনারা জানেন? তাও আবার কলকাতায় বসে! তবে ওটা কিন্তু যুবির ব্যাচেলর পার্টি ছিল না। ও তখন ব্যক্তিগত কাজে দুবাইতে ছিল এবং আমিও তখন শো-য়ের জন্য ওখানে। তাই আমরা একটু পার্টি করেছিলাম। কিন্তু আপনি কোথা থেকে জানলেন বলুন তো? আমি তো ইন্সটাগ্রামে ছবি আপলোড করিনি। (একটু থেমে) আর কী জানতে চান বলুন। লাস্ট কোয়েশ্চন কিন্তু। আপনার মহিলা ফ্যানরা জানতে চান, অঙ্গদ বেদী কি এখনও সিঙ্গল? (জোরে হেসে) না। আমি আমার কাজের সঙ্গে বিয়ে করেছি। অন আ সিরিয়াস নোট, ‘আমি সিঙ্গল।’ এখন ফোকাস শুধু কাজে। এর পর ফারহান আখতারের ছবি ‘পাওয়ার প্লে’তে কাজ করছি। ছবিতে আমি এক ক্রিকেটারের ভূমিকায়। এ সবের মধ্যে, আর কিছু নিয়ে ভাবার সময় নেই। ড্যাডি আমাকে এখুনি বিয়ে-টিয়ে নিয়ে ভাবতে বারণ করেছে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘‘তুমি তো বিয়ে করেও ১৬-১৭ বছর ভারতের হয়ে খেলেছ। তা হলে আমায় বারণ করছ কেন?’’ ড্যাডি একটু হেসে বলল, ‘‘পুত্তর! আমি সব কিছুই করেছি বিয়ের আগে।’’ আমার উত্তরটাও দিয়ে দিয়েছি, বাকিটা পাঠক বুঝে নেবেন... সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×