ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ২ ডিসেম্বর ২০১৬

কবিতা

একজন সাহানার দিনযাপন জাহিদ হায়দার সাজানো ছিল সব এখনো পরিপাটি, উপমা নিখুঁতের এবং থাকবে কালকেও। তোমার হাত থেকে শস্য খেয়ে যায় পাখিরা। লোকেরা নাম বলে অতিথি-সেবাতে তোমারই। বন্ধু কুকুরের সঙ্গ ভালো লাগে, স্বামী কন্যা মানবিক। তোড়ার ফুলগুলি দেয়ালে সুলতান সজীব বনসাই গোছানো বইগুলি কাচের কাকাতুয়া যথাযথ স্পর্শে পরিমিত, মান্য। ‘যাচ্ছো ঘরে ফিরে দাঁড়াও কিছুক্ষণ।’ বৃষ্টি-পীড়িত টবের রঙ্গন বললো। পায়ের চিহ্নতে ফাঁকা বারান্দায় কাঁদছে সন্ধ্যা। আলোর উৎসবে ঘরটা সুন্দর সাজানো শিল্পে হঠাৎ থামলে। এমন থেমে যাওয়া হয়তো মৌলিক! ** ঝরা বকুলের গান হাফিজুর রহমান শিশিরের মতো ঝরেছো যেদিন ভোরে জেগে উঠবার সময় দাওনি তো কারো তুমি যে বকুল, ভুলেই তো ছিলাম যেন ঝ’রে যেতে যেতে বলেছিলে তবু, ধরো। ঈষৎ আঁধারে তোমাকে ছোঁয়ার সুখে বুকের ভিতরে মাতাল হাওয়ার ঘ্রাণ। তুমি কি কিছু টের পেয়েছিলে বুকে পৃথিবীজোড়া ভালোবাসাময় প্রাণ। ঝ’রে পড়ার সে বিভোর খুশিতে মেতে ভুলে ছিলে বুঝি পতনের পরিণাম, মালার বাঁধনে ধরা পড়বার ক্ষণে কেঁদেছিলে খুব হারিয়ে নিজের নাম। তবু তো দিয়েছ সুবাসিত ঘ্রাণের মালা তবু তো দিয়েছ অনিন্দিত গানের দোলা। ** আমার স্যান্ডেল নাজিম শাহ্রিয়ার মনে হয় এই স্টেশনেও ট্রেনটি থামবে না আমি তাহলে কি ভাবে পাবো মাটির স্পর্শ? লোকে বলে পায়ের নিচেই নাকি থাকে মাটি আমার পায়ের নিচে চামড়ার স্যান্ডেল আমাকে কখনোই মাটির শীতল পাটির স্পর্শ নিতে দেয় না। প্রশ্ন করলেই বলে,পথে ঘাটে কত ভাঙা কাঁচ, আমি ছাড়া তোমাকে রক্ষা করার কেউ নেই। এ কেমন স্বেচ্ছাচারিতা! আমাকে সে ভালোবাসে অথচ আমার আকাক্সক্ষার সামনে সে এক চামড়ার দেয়াল ! ট্রেনটি কি সামনের স্টেশনে থামবে? এবার আমি খালি পায়ে ঘুরব সারাটি শহরজুড়ে, আমি আর কোন বন্ধু চাই না, আমি আর কোন নিরাপত্তা চাই না, আমি প্রয়োজনে রক্তাক্ত পায়ে হেঁটে সারাদিন নেবো মাটির স্পর্শ। ট্রেন, তুমি আর কতদূরে গিয়ে থামবে? এবার আমি নামব। ** মুজিবের বাংলা সুজন হাজারী বাবার মোটা ফ্রেমের পুরনো কালো চশমা ঘষাঘষি হিজিবিজি দাগগুলো মিথ পুরু লেন্স শৈশবের কৌতূহলে এঁটেছি চোখে বালক বয়সে পাকামো হয়ে গেছি বাবা পাকা চুলে বিলি কেটে বেছে দেয় বধূ বেশে পাড়ার হালিমা খাতুন বৃন্দাবনের রাজপুত্র রাখাল গোপাল গোমাতা ভালোবাসে ধবলী নামের গাভী গোচরে ঘাস খায় মাঠ ভরা পাকা ধান ক্ষেত অঘ্রাণে নবান্ন উৎসবে টইটুম্বুর ধুম পাড়া গাঁয়ে রোদ মাথায় আরএফএলএর ছাতা মেলে আলপথে হেঁটে বট ছায়ায় পথিক জিরায় গাছপাতার আড়ালে লাল ঠোঁট সবুজ টিয়া পাখি শূন্য আকাশে দুঙের জাতীয় পতাকা ওড়ে নদী মাতৃকার রাখি বন্ধনে গেরিলারা শিলিগুড়ি ক্যাম্পের ট্রেনিং শেষে বিজয়ের হাসি মুখে ফিরেছে মুজিবের বাংলায় ** যুগের যোগ্যতা ফকির ইলিয়াস আমার চেয়ে বয়সে বড় যে ঢেউসমগ্র, তার নাম সুরমা। প্রতিমা হিসেবে যে আমার ভোরে প্রতিদিন ছিটিয়ে দিত লক্ষ্মীকণা, তার নাম ছিল বৃষ্টি। আমি কোন দিনই তাদের দৃষ্টির সীমানায় দাঁড়াতে পারি’নি। বরং চেয়ে থেকেই বার বার বলেছি- ‘ভালোবাসি, ছায়া’! অনেক প্রেম সম্পর্কের কোনো ছবি এঁকে রাখেনি এই জাগতিক ক্যানভাস। অথবা যারা চিত্রকর সেজে পাঠ করে গেছেন তাদের প্রেমিকার চোখ- তারাও সেই চক্ষুযুগলে কোনো দিন, দেখতে চান’নি বসন্তের অশ্রুশিখা। শিখা অনেক কিছুই পোড়াতে পারে। আর মাটি ধারণ করে রাখে তার বুকে সকল ছাইছন্দ। যুগের যোগ্যতায় যারা সেই ছাইছন্দ খুঁড়ে উষ্ণতায় রাখতে পারে হাত, প্রকৃতপক্ষে তারাই প্রেমিক অথবা কবি। ** স্বপ্নঘুড়ি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী আমি এক স্বপ্ন ফেরিওয়ালা স্বপ্ন ফেরি করি; উড়াই স্বপ্নঘুড়ি ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নগুলো দুহাত দিয়ে গড়ি। স্বপ্ন নেবে স্বপ্ন; এক টুকরো স্বপ্ন ভাঙা গড়ার স্বপ্ন আঁধার আলোর স্বপ্ন দূর্বা ঘাসের মায়ামাখা সুখ-দুঃখের স্বপ্ন। যৌবনেরই স্বপ্ন; রূপকথার রাজকন্যের রূপবতীর স্বপ্ন। গ্রাম বাংলার স্বপ্ন নদ নদীর স্বপ্ন প্রকৃতির বুকচিরে রাখাল ছেলের স্বপ্ন। স্বপ্ন নেবে স্বপ্ন শেকড় খোঁজার স্বপ্ন স্বপ্ন থেকে জেগে ওঠা দিন বদলের স্বপ্ন।
×