প্রিয় আউং সান সুচি
বেশ আগে, খোঁপায় গোলাপ আর গ্রীবায় অজস্র
বেলি ফুল ফুটানো তোমার ভরা যৌবনের
দ্যুতিময় ছবি দেখে আমি অলক্ষ্যে বলেছি-
বাহ্, পূর্ব-এশিয়ার এই রূপসীর মুখ
অপরূপ আর্য সুন্দরীদেরও হার মানিয়েছে!
পরে, প্রিয়তম স্বামী আর সন্তানের সুখ তুচ্ছ করে
বার্মার আলোকপিপাসু নির্বাক নিপীড়িত
মানুষের অনাবিল ভালোবাসায় আপ্লুত হয়ে
নেলসন ম্যান্ডেলার মতো তুমি হয়েছ
নোবেলজয়ী বিশ্বখ্যাত প্রিয় রাজবন্দী।
প্রিয় সুচি
বিজয়ের দিনে তুমি বকুলফুলের মালা
পরেছো গলায়; হাতে জনতার ভালোবাসা ভেজা
পত্রশোভিত গোলাপগুচ্ছ;
পূর্ণিমার জোয়ারের মতো তোমার হাসির ছন্দে
দৃষ্টিনন্দন কিয়াঙ সবুজ পাহাড় বনভূমি শস্যক্ষেত
আর বসন্তের নতুন পাতারা আনন্দে নাচছে...
এনএলডির যে পতাকা বহণ করার অপরাধে
কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছে বার্মার মুক্তিকামী
সরল মানুষ ও নিরীহ বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ;
আজ ইয়াঙ্গুন থেকে মান্দালয়
মান্দালয় থেকে সামরিক জান্তার বাঙ্কারময়
নতুন নগরী নেপিডোর পথে পথে
রং-বেরঙের কিশোর-কিশোরীর নাচের তালে তালে
সোনালি ময়ূর আর লাল জমিনের মধ্যে
সাদা তারকাখচিত সেই পতাকা উচ্ছল পপ সুন্দরী
সাকিরার মোহনীয় ভঙ্গিতে দুলছে;
আর প্রতীক্ষিত মুক্তির আনন্দ-ঢেউ
ইরাবতীর দুকূল উপচিয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে
লুটিয়ে পড়ছে নাফ নদীর উদ্দাম স্রোতে।
সুচি
আজ তুমি মুক্ত। তোমার সামনে লক্ষ পথ।
কোন্ পথে পা বাড়াবে নিশ্চয়ই তুমি জানো;
তবু, নরম পায়ের নিচে কাঁকর, পাথর আর
ইয়াঙ্গুনের আকাশে নানা জাতের বাজ পাখিদের
আনাগোনা দেখে আমার কিঞ্চিত ভয় হচ্ছে!
তাই, তোমাদের আরাকান রাজসভার বাঙালী কবি
দৌলত কাজীর নায়িকা চন্দ্রানী আর আলাওলের
পদ্মাবতীর বিরহের কথা মনে করে
একালের বাঙালী কবির দায় মেটাতে আমিও
তোমার বকুল ফুলে ঢাকা কানে কানে বলি-
মুহূর্তে আলোর গতি লক্ষাধিক মাইল হলেও
আগুনের লেলিহান শিখা রক্তপাত আর
ঘরে-বাইরে লোভার্ত শত্রুকবলিত
নুন আনতে পান্তা ফুরনো সমাজে
সে আলো কখন যে কীভাবে প্রবেশ করবে!
শীর্ষ সংবাদ: