ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নাজনীন বেগম

মিয়ানমারের দুঃসহ বিভীষিকায় নারী লাঞ্ছনা

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২ ডিসেম্বর ২০১৬

মিয়ানমারের দুঃসহ বিভীষিকায় নারী লাঞ্ছনা

মিয়ানমারের মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে যেভাবে মুসলমান নারী-পুরুষের ওপর নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ এবং পাশবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে তাতে পুরো বিশ্ববাসী আজ হতবাক, বিস্মিত। ৯ অক্টোবর তিনটি সীমান্ত পোস্টে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হয় ৯ সীমান্ত পুলিশ। এই হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং দুর্বৃত্তদের আশ্রয় দেয়ার সন্দেহ থেকেই এই অমানবিক, পাশবিক নির্যাতনের শুরু। যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকে। মারাত্মক আহত এবং বিপদগ্রস্তরা নানাভাবে বাংলাদেশ সীমান্ত পার হয়ে এখানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে খোলা হয়েছে শরণার্থী শিবিরসহ আনুষঙ্গিক আরও অনেক ব্যবস্থা। নারী-পুরুষ উভয়ই এই বিপন্ন অবস্থার শিকার হলেও অসহায় এবং দুর্বল অংশ হিসেবে নারী এবং শিশুরাই বেশি নির্মম নিপীড়নে নিষ্পেশিত হচ্ছে। গুলি চালিয়ে ঘর-বাড়িতে আগুন দিয়ে যেভাবে হত্যা ও পোড়ানোর বিভীষিকা এবং ত্রাসের সৃষ্টি করা হয়েছে একইভাবে নারীদের ওপর অমানসিক অত্যাচারও নির্দ্বিধায় চলছে। নিজ দেশ থেকে পালাতে গিয়ে আসন্ন প্রসবা অনেক নারী পথিমধ্যেই সন্তান জন্ম দিচ্ছে। এমন অমানবিক, লোমহর্ষক বেদনাদায়ক ঘটনা মানুষের বিবেককে নানাভাবে তাড়িত করছে। মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত এবং অনেকটা সরকারের প্রচ্ছন্ন মদদে এমন নিষ্ঠুর অপতৎপরতার অবতারণা করা হয়। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব এমন নারকীয় হত্যাযজ্ঞ এবং বেপরোয়া দুঃসহ অভিযানে প্রতিবাদে, প্রতিরোধে, বিক্ষোভে এর যথাযথ প্রতিবিধানের আবেদন জানিয়ে যাচ্ছে। নারীদের ওপর চলছে নানামাত্রিকে সহিংস হামলা যা মানবিক মূল্যবোধকে প্রতিনিয়তই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। যে কোন অরাজক, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে অকারণে, অপ্রয়োজনে নারী নির্যাতনের মতো জঘন্য মনোবৃত্তিতে হামলাকারী প্ররোচিত হয়। আর সেটাই সব ধরনের আক্রমণের একটি অপরিহার্য শর্ত হয়ে দাঁড়ায়। নারীর, সম্মান, মর্যাদা, সম্ভ্রম কোন কিছুই এই পাশবিক উন্মাদনাকে রোধ করতে পারে না। কিন্তু যারা লাঞ্ছিত বা নির্যাতিত হয় তাদের এই দুর্ভোগের শেষ কোথায় সে প্রশ্ন কারোরই জানা নেই। সভ্যতার এমন সুবর্ণ যুগে, প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার সন্ধিক্ষণে নারী এখনও মানুষের মর্যাদা নিয়ে নিজেকে দাঁড় করাতে পারল না। এটা যেমন বেদনাদায়ক তেমনই বর্বরোচিত। এসব অসহায়, বিপন্ন নারী সামাজিকভাবেও নিগৃহীতা হয়। সমস্ত অপমান আর নির্যাতনের দায়ভাগ নিজেকেই বহন করতে হয়। যে পরিস্থিতি-পরিবেশ তাদের বাধ্য করেছে এমন নিষ্ঠুর পরিণতির মুখোমুখি হতে সেখান থেকে তারা পরিত্রাণ পাবে কি আদৌ? নাকি সে অসম্মান আর লজ্জার বোঝা টানতে হবে সারা জীবন ধরে। সমস্ত নারকীয় উন্মাদনার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াকে নির্মমভাবে বয়ে বেড়াতে হয় দুর্বল নারী সমাজকে। মিয়ানমারের এমন পাশবিক উন্মত্ততার নগ্ন থাবা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে আক্রান্ত করলেও নারীদের অবস্থা যে সবচেয়ে শোচনীয় এবং লোমহর্ষক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই জঘন্য হামলায় তৈরি হওয়া এই শত শত অভিবাসীর ভবিষ্যত আজ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কেউ কল্পনাও করতে পারছে না। আর দুঃসহ যন্ত্রণায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত, বিপর্যস্ত, লাঞ্ছিত নারীদেরও সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া কতখানি সম্ভব তাও সময়ই বলে দেবে।
×