ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

বিশ্বের বন্যপ্রাণী অর্ধেকের বেশি কমেছে

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২ ডিসেম্বর ২০১৬

বিশ্বের বন্যপ্রাণী অর্ধেকের বেশি কমেছে

বিশ্বব্যাপী বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৪৫ বছরে ৫৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। লন্ডন জুওলজিক্যাল সোসাইটি (জেডএসএল) ও বিশ্ব বন্যপ্রাণী তহবিলের (ডব্লিউডব্লিউএফ) এক জরিপে বলা হয় এই বাধা চলতে থাকলে ২০২০ সাল নাগাদ মেরুদ-ী প্রাণীর সংখ্যা হ্রাস দুই-তৃতীয়াংশে পৌঁছতে পারে। পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় যে হ্রাস, নদ-নদী ও জলাভূমিতে বসবাসরত প্রাণীরাই সর্বাধিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। আবাসভূমি উজার, বন্যপ্রাণী নিয়ে ব্যবসা ও পরিবেশ দূষণের মতো মানুষের ক্রিয়াকলাপ এবং জলবায়ুর পরিবর্তন বন্যপ্রাণীর সংখ্যা হ্রাসে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে। বিশ্ব বন্যপ্রাণী তহবিলের বিজ্ঞান ও নীতি বিভাগের প্রধান ড. মাইক ব্যারেট বলেন ‘এটা অতি পরিষ্কার যে আমাদের কর্মকা- যেভাবে চলে এসেছে তা চলতে থাকলে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা অব্যাহতভাবে হ্রাস পাবে। আমরা এখন এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছি যেখানে এটা চলতে দেয়ার সত্যিই কোন যুক্তি নেই। বন্যপ্রাণীর সংখ্যা হ্রাসের কারণ এবং প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী জগতের ওপর মানুষের ক্রিয়াকলাপের প্রভাবের পরিধি আমাদের জানা বলেই এ ব্যাপারে সত্যিই কিছু করা এখন আমাদের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ উপরের ওই তথ্যাবলী লিভিং প্লানেট রিপোর্টে পরিবেশিত হয়েছে। দু’বছর অন্তর প্রকাশিত এই রিপোর্টের লক্ষ্য হলো বিশ্ব বন্যপ্রাণী পরিস্থিতির মূল্যায়ন করা। এতে পাখি, মাছ, স্তন্যপায়ী, উভচর ও সরীসৃপ গোত্রের ৩৭০০ ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির ওপর পর্যবেক্ষণ চালান হয়েছে যা হচ্ছে বিশ্বের মেরুদ-ী প্রাণীর মোট সংখ্যার প্রায় ৬ শতাংশ তথ্য সংগ্রহ শুরু করা হয়েছে ১৯৭০ সাল থেকে। বন্যপ্রাণীগুলোর সংখ্যা কালের প্রবাহে কিভাবে বদলে গেছে গবেষকরা তা পর্যালোচনা করে দেখেন। সর্বশেষ রিপোর্টটি প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালে। তাতে দেখা যায় বিশ্বে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ৪০ বছরে অর্ধেক কমে গেছে। এই ধারা অব্যাহত আছে এবং ১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত কমেছে গড়ে ৫৮ শতাংশ। কিছু কিছু প্রাণীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে অন্যগুলোর তুলনায় ঢের বেশি। বিশেষ করে স্বাদুপানির প্রাণীগুলো। শুধু এদেরই সংখ্যা হ্রাসের হার ১৯৭০ সাল থেকে ৮১ শতাংশ। স্বাদুপানি যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং স্বাদুপানি ব্যবস্থা থেকে যেভাবে বের করে নেয়া হচ্ছে তার সঙ্গে এর একটা সম্পর্ক আছে। তা ছাড়া বাঁধ নির্মাণ ইত্যাদির মাধ্যমে স্বাদুপানি ব্যবস্থা খ--বিখ- হয়ে খাওয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক আছে। রিপোর্টে সংখ্যা হ্রাসের ক্ষেত্রে অন্য যেসব প্রাণীর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে আছে আফ্রিকার হাতি। সাম্প্রতিক চোরা শিকার বেড়ে যাওয়ায় এদের সংখ্যা কমেছে। এ ছাড়া আছে হাঙ্গর। অতিরিক্ত হারে মাছ ধরার ফলে হাঙ্গরের সংখ্যা কমে আসছে। অতিরিক্ত আহরণ ও বেআইনী ব্যবসার মতো চাপগুলো বাড়লে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা আরও বেশি হারে হ্রাস পাবে। গবেষকরা বলেন মেরুদ-ী প্রাণীর সংখ্যা বছরে গড়ে ২ শতাংশ হারে হ্রাস পাচ্ছে। তারা হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা না নেয়া হলে চলতি দশকের শেষ নাগাদ বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ৬৭ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১৯৭০ সালে স্তরের ও নিচে নেমে আসবে। তারা আরও বলেন যে, এসব পরিসংখ্যান ও জরিপের মধ্য দিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তা হলো, বন্যপ্রাণীর সংখ্যা কমলেও তারা বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে না। এটাই আমাদের সামনে এ ব্যাপারে কিছু একটা করার সুযোগ এনে হাজির করেছে। সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
×