ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটাতে মরিয়া বিশেষ মহল

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২ ডিসেম্বর ২০১৬

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটাতে মরিয়া বিশেষ মহল

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ মিয়ানমারে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাকে পুঁজি করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটাতে মরিয়া একটি বিশেষ মহল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারে সমস্যা সমাধানে কাজ করার উদ্যোগী হয়েছেন জেনেও এদের অপতৎপরতা থেমে নেই। ইতোপূর্বে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়টি মিয়ানমারকে জানানো হয়েছে। মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সরকার বিদ্যমান বলেই দেশটির সরকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেবে এটিই সকলের আশা। তারপরও আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপ রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইশেন (আরএসও) এবং স্বার্থান্বেষী মহলের কতিপয় নেতা গোপনে এককাট্টা হয়ে সীমান্ত পরিস্থিতি ঘোলাটে করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিজ্ঞজনরা জানিয়েছেন। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ঘাঁপটি মেরে থাকা আরএসও জঙ্গীরা মিয়ানমারে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের এদেশে পালিয়ে আসতে উস্কানি দিচ্ছে। আর এ কাজে মৌলবাদী গোষ্ঠী সমর্থিত একাধিক মিডিয়াও সহযোগিতা দিয়ে চলছে। তবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে টহল জোরদার ও নজরদারী বৃদ্ধি করেছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা। এরপরও অনুপ্রবেশকারী কিছু রোহিঙ্গাকে মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। মানবিক এ শিথিলতার সুযোগে প্রতিরাতে কিছু কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত এলাকায়। সেখানে তাদের দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। এদিকে মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ভরণ-পোষণের জন্য দুইটি এনজিও ছাড়াও চট্টগ্রামে বসবাসকারী হাজী ওসমান, নূর কামাল, মীর আহমদ কোম্পানি ও ছালেহ আহমদসহ অনেক ধনাঢ্য রোহিঙ্গা নেতা অর্থায়ন করে চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সচেতন মহল জানান, বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমার সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছে এ পর্যন্ত। মিয়ানমারে সংঘঠিত সশস্ত্র ঘটনায় যাতে সেখানে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা কষ্ট না পায়, এ জন্য বিজিবি মিয়ানমারের বিজিপিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মংডুর তিনটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা ঘটনার পর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এদেশে পালিয়ে আসা অনুপ্রবেশকারী দুই রোহিঙ্গা যুবককে ধরে মিয়ানমারে সোপর্দ করেছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)। গত বছরও রাখাইন বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ আরাকান আর্মিদের কাছ থেকে মিয়ানমারের দুই সামরিক সদস্যকে উদ্ধার করে মিয়ানমারে ফেরত দিয়েছে বাংলাদেশ। হেফাজতের সংবাদ সম্মেলন ॥ রোহিঙ্গা মুসলমানদের সঙ্কটমুক্তি ও মানবাধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বাংলাদেশ সরকারের জরুরী হস্তক্ষেপ চেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেছে কক্সবাজার জেলা হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দ। মাওলানা আবুল হাসানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ইয়াছিন হাবিব। রোহিঙ্গাবাহী ১১ নৌকা ফেরত ॥ নাফ নদীর চারটি পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় রোহিঙ্গা বহনকারী ১১ নৌকা ফেরত পাঠিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বৃহস্পতিবার সকাল ও বুধবার নৌকাগুলো ফেরত পাঠানো হয়। ওসব নৌকায় ১০ থেকে ১২ জন করে রোহিঙ্গা ছিল। টেকনাফ বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানান, সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ রোধ করা হচ্ছে। বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। কক্সবাজার বিজিবি-৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার জানান, উখিয়ার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশকালে ১৯ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। এর আগে বুধবার নাফ নদীর তিন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় রোহিঙ্গা বহনকারী পাঁচটি নৌকা মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।
×