ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও সমন্বয় ছাড়াই নির্মাণের ফলে দ্রুত নষ্ট হচ্ছে ;###;দুর্ঘটনায় বছরে আর্থিক ক্ষতি অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকা ;###;প্রাণ হারাচ্ছে ৫ হাজার ;###;আহতদের অনেকেই পরিবার ও দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে

দেশের মহাসড়ক গুলোর হাল ॥ গলার কাঁটা হতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২ ডিসেম্বর ২০১৬

দেশের মহাসড়ক গুলোর হাল ॥ গলার কাঁটা হতে পারে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ বছর বছর দেশের মহাসড়ক ভেঙ্গে যাওয়ার মূল কারণ সমন্বয়হীনতা। এখনও সমন্বয়হীনতার মধ্যেই মহাসড়ক নির্মাণ অব্যাহত আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা এবং সমন্বয় ছাড়া মহাসড়ক নির্মাণ করা না হলে অদূর ভবিষ্যতে মহাসড়ক দেশের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর মহাসড়কে থাকা খানাখন্দ, পাশে থাকা অবৈধ স্থাপনা, হাট-বাজার সরানো সম্ভব না হলে দিন দিন বেড়ে যাবে দুর্ঘটনার হার। তাতে প্রাণহানির সংখ্যা বছরে পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। চিরতরে পঙ্গুত্ববরণকারীর সংখ্যা বিশ হাজার ছাড়িয়ে ৩০ হাজারে ঠেকতে পারে। আহতদের মধ্যে অনেকেই দেশের অর্থনীতিতে তেমন কোন ভূমিকা রাখতে পারছেন না। উল্টো পরিবার ও দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে অন্তত দেড়হাজার কোটি টাকা। দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হলে দেশের অর্থনীতিতে স্বল্প সময়ের মধ্যেই যেমন ইতিবাচক প্রভাব পড়বে তেমনি দেশ দ্রুতই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। বিআরটিএর (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে ১১ হাজার ৮০৬ কিমি মহাসড়ক রয়েছে। সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কে রেজিস্ট্রেশনকৃত বিভিন্ন প্রকারের যানবাহন চলাচল করছে প্রায় ২৭ লাখ। যদিও বাস্তবে দেশে অন্তত ৩৫ লাখ যানবাহন চলাচল করে। এরমধ্যে অন্তত ২০ লাখ যানবাহন নিয়মিত মহাসড়কে যাতায়াত করে। বাদবাকি যানবাহনের মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ যানবাহন মহাসড়কে অনিয়মিতভাবে যাতায়াত করে। দেশে যে পরিমাণ মহাসড়ক রয়েছে তাতে প্রায় ১৫ লাখ যানবাহন মোটামুটিভাবে যাতায়াত করতে পারে। সারাবছর গড়ে দেড়লাখ যানবাহন গ্যারেজে থাকে। বিপুলসংখ্যক এই যানবাহন চালানোর জন্য রয়েছে প্রায় ১৬ লাখ বৈধ চালক। বাকি যানবাহনের স্টিয়ারিং ঘোরাচ্ছে অবৈধ চালক। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিডেন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হিসাব অনুযায়ী, দেশে যে পরিমাণ মহাসড়ক রয়েছে, আর যে পরিমাণ যানবাহন চলাচল করছে তা রীতিমতো বিস্ময়ের বিষয়। মহাসড়কের তুলনায় অধিক পরিমাণ যানবাহন চলাচল করায় এবং মহাসড়কের দুইপাশের শতকরা ৫০ ভাগ বেদখল থাকায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। অতিরিক্ত যানবাহন ছাড়াও মহাসড়কে বর্তমানে থাকা প্রায় দেড় শ’টি ব্ল্যাকস্পট (দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা), অদক্ষ চালক, ভাঙ্গা রাস্তা, ক্ষমতার অধিক মাল নিয়ে যানবাহন চলাচল করা এবং ডাকাতের কবলে পড়ার কারণে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। প্রতিবছর গড়ে মহাসড়কে দুর্ঘটনায় প্রায় ৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। মৃত্যুর পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে গড়ে অন্তত ২০ হাজার মানুষ আহত হন। আহতদের মধ্যে গড়ে অন্তত ৫ হাজারকে চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়। এদের মধ্যে অন্তত তিন হাজার সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সড়ক দুর্ঘটনা ছাড়াও ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতির মতো অপরাধ সংঘটিত হয় মহাসড়কে। সংঘটিত এসব অপরাধে অনেকের মৃত্যু হয়। আবার অনেককে চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়। মহাসড়কে দুর্ঘটনা, যানজট ও অপরাধ রোধে পদক্ষেপ ॥ মহাসড়কের এসব সমস্যা কমিয়ে আনতে ২০০৫ সালের ১১ জুন হাইওয়ে পুলিশ বিভাগ চালু হয়। পুলিশের এই শাখা সৃষ্টির মাধ্যমে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা হরিলুট করার অভিযোগ রয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে। ২০০৯ সালে হাইওয়ে পুলিশকে ঢেলে সাজার উদ্যোগ নেয়া হয়। মহাসড়কের ব্ল্যাকস্পট মেরামত থেকে শুরু করে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ, আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনাসহ অনেক কিছুই করা হয়। ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি হাইওয়ে পুলিশের জন্য ৫০ স্থায়ী আউটপোস্ট নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এখাতে বরাদ্দ দেয়া হয় প্রায় ৫৩ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্প শেষ করার কথা ছিল। হাইওয়ে পুলিশের উর্ধতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণ করা জমির দাম কম নির্ধারিত হওয়ায় জমির মালিকরা পুলিশকে জমি দিতে রাজি হন না। স্বাভাবিক কারণেই জমির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অনেক সময় জমির মালিকরা আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছেন। ফলে জটিলতা বেড়েছে। এজন্য আউটপোস্ট নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত করা হয়। এ খাতে বরাদ্দও বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকা। মূলত হাইওয়ে পুলিশের ২৪ থানা ও ৪৮ ফাঁড়ির মধ্যে গুরুত্ব বিবেচনা করে ৫০টিকে আউটপোস্ট নাম দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। হাইওয়ে পুলিশের উপপ্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এমএ মালেক জনকণ্ঠকে বলেন, আউটপোস্টষ্টগুলোর মধ্যে মোট ৩২টির টেন্ডার হয়েছে। এরমধ্যে ২৯টির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। নির্মিত আউটপোস্টের মধ্যে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দেয়া জমির ওপরই নির্মিত হয়েছে ১১টি। নির্মিত আউটপোস্টের মধ্যে নানা জটিলতার কারণে চারটি ভেঙ্গে নতুন করে নির্মিত হচ্ছে। এই কর্মকর্তা আরও জানান, মহাসড়কের দুর্ঘটনা ও যানজট কমিয়ে আনা সম্ভব হলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিভাবে প্রভাব পড়বে তার একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রকল্পের অনুমতি দিলে অনেক যন্ত্রপাতি কেনা সম্ভব হবে। যা সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট নিরসনে গুরুত্বপর্র্ণ ভূমিকা রাখবে। এই কর্মকর্তা বলছেন, অনেক দেরিতে হলেও হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করার দায়িত্ব পেয়েছে। এতে করে কি কারণে দুর্ঘটনা ঘটে সে সম্পর্কিত একটি ফিরিস্তি মিলেছে। দেখা গেছে, অদক্ষ চালক, ভাঙ্গা রাস্তা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন বিশেষ করে রাতে চলাচলকারী যেসব যানবাহনের বাতি থাকে না, রাস্তার অবস্থা অনুযায়ী অতিরিক্ত গতি, মহাসড়কের তুলনায় অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল, মাদকাসক্ত হয়ে যানবাহন চালানো, অতিরিক্ত ওজন নিয়ে পণ্যবাহী যানবাহনের চলাচল, ওভারটেকিংসহ নানা কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া ছিনতাই বা ডাকাতির কারণেও অনেক সময় যানবাহন দ্রুত চালিয়ে নিরাপদ জায়গায় যাওয়ার সময় দুর্ঘটনা কবলিত হয়। পর্যায়ক্রমে মহাসড়কে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তভারও জেলা পুলিশের কাছ থেকে হাইওয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তরিত হওয়ার কথা রয়েছে। এসব মামলার তদন্ত করা সম্ভব হলে মহাসড়কে ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িতদের সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। তাদের আইনের আওতায় আনা সহজ হবে। হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের এই শাখা আরও কার্যকর করতে হলে জনবল ২ হাজার ৪২ জনের জায়গায় কমপক্ষে ৫ হাজার দরকার। ইতোমধ্যেই ১ হাজার ৮১৩ জনবলের চাহিদার প্রস্তাব দেয়া রয়েছে। ৯০টি যানবাহনের জায়গায় অন্তত ২শ’টি, ১০টি রেকারের জায়গায় অন্তত ২০টি রেকার, বর্তমানে সিসিটিভি নেই, কমপক্ষে ২শ’ সিসিটিভি, এ্যাম্বুলেন্স নেই, কমপক্ষে ১০টি এ্যাম্বুলেন্স, ৪০টির জায়গায় অন্তত ২শ’ স্পীডগান, ২শ’ এ্যালকোহল ডিটেক্টর (মাদকাসক্ত চালকদের শনাক্ত করার মেশিন) প্রয়োজন। এসব সরঞ্জামের প্রয়োজনীয়তা মিটলে হাইওয়ে পুলিশ সত্যিকারের আধুনিক হাইওয়ে পুলিশে রূপান্তরিত হবে। তখন মহাসড়কের যানজট, সড়ক দুর্ঘটনা ও অপরাধ কমে আসবে। সরকারের চারটি বড় ধরনের প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং) একজন বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে বলেছেন, মহাসড়ক নির্মাণ একটি অত্যন্ত গভীর পরিকল্পনার বিষয়। দেশের আয়তন, জনসংখ্যা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, মোট জনসংখ্যার মধ্যে কত পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করেন সেসব পরিসংখ্যান অনুযায়ী মহাসড়ক নির্মাণের কথা। কিন্তু বাংলাদেশে এর কোনটিই করা হয় না। এক কথায় চরম সমন্বয়হীনতায় তৈরি হচ্ছে দেশের মহাসড়ক। যে কারণে মহাসড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই আবার নতুন করে এর পাশে বর্ধিত রাস্তা নির্মাণ করতে দেখা যায়। যা বিশ্বের কোন উন্নত দেশে দেখা যায় না। তিনি আরও বলেন, একটি দেশের মহাসড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থাকা বাধ্যতামূলক। এসব পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, মহাসড়ক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কত। কমপক্ষে ২০ বছর পরে এই সংখ্যা কত দাঁড়াবে, সেই জনগণের জন্য কি পরিমাণ যানবাহন প্রয়োজন, আর সেই পরিমাণ যানবাহন চলাচল করতে কি পরিমাণ মহাসড়ক প্রয়োজন হবে, সেই পরিসংখ্যান মোতাবেক মহাসড়ক নির্মাণের নিয়ম। দেশে পাঁচ বছর মেয়াদী পরিকল্পনায়ও মহাসড়ক নির্মিত হয় না। আর মহাসড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে উন্নতমানের কংক্রিটের ব্যবহার করা প্রয়োজন। দেশে কংক্রিটের মহাসড়ক নির্মাণের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। মহাসড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে আবহাওয়া, মহাসড়ক ডুবে যায় কিনা এসব নানা বিষয় মাথায় রাখতে হয়। সে সব মানা হয় না দেশের মহাসড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে। এমনকি একটি মহাসড়কে কি পরিমাণ ওজন নিয়ে মালবাহী যানবাহন যাতায়াত করতে পারবে, তারও দিক নির্দেশনা থাকে। যেটি হাইওয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা দেখভাল করার দায়িত্বে থাকেন। মালসহ গাড়ির ওজন মাপার জন্য বিশেষ যন্ত্র থাকলেও তার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় না। মহাসড়কের কোন নিয়মনীতিই সঠিকভাবে দেখভাল করা হয় না। ফলে নির্ধারিত ওজনের বেশি অতিরিক্ত ওজন নিয়ে যানবাহন চলাচল করায় দ্রুত মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা যানজটসহ সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। দীর্ঘস্থায়ী মহাসড়ক নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের বিশেষজ্ঞ শিক্ষক অধ্যাপক ড. শামসুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, মহাসড়কের প্রকৃত যে সংজ্ঞা, যে সংজ্ঞা অনুযায়ী মহাসড়ক নির্মিত হওয়ার কথা তা মানা হয় না। মহাসড়ককে একটি দেশের মেরুদ- সড়ক বলা হয়ে থাকে। এ ধরনের সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা আবশ্যক। বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা আরও বেশি জরুরী। কারণ ছোট দেশ। জনসংখ্যা বেশি। আর মহাসড়কে চব্বিশ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল করে। এজন্য বার বার মহাসড়ক মেরামত করার সুযোগ থাকে না। কারণ মেরামত করতে গেলেই রাস্তার এক পাশ বন্ধ করতে হয়। ্এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটে বেকার বসে থাকেন মানুষ। কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। দেশের আর্থিক উন্নতিতে বাধার সৃষ্টি করে। সম্প্রতি ভারত মহাসড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে উন্নতমানের কংক্রিট ব্যবহার করছে। ভাল কংক্রিট দিয়ে মহাসড়ক নির্মিত হলে অন্তত বড় ধরনের কোন বিপর্যয় না হলে ৪০ বছর সেই মহাসড়কে আর হাত দেয়ার বিশেষ কোন প্রয়োজন হয় না। বাংলাদেশে আজও কংক্রিটের মহাসড়ক নির্মিত হয়নি। যদিও হালে বর্তমান সরকার সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে। এটি খুবই ইতিবাচক। কংক্রিটের মহাসড়কে খরচ অনেক বেশি। তারপরও দেশকে আগে হোক আর পরে হোক কংক্রিটের মহাসড়ক নির্মাণের দিকেই যেতে হবে। কারণ মানুষ বেশি, মহাসড়কের তুলনায় যানবাহন বেশি চলাচল করে। সহজেই নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে, দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে এবং দুর্ঘটনাসহ নানা কারণেই এটি করতে হবে। আর জায়গা কম। তাই কম জায়গায় শক্তপোক্ত মহাসড়ক নির্মাণ করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে অর্থ সাশ্রয় হয়। দেশে বিটুমিন দিয়ে মহাসড়ক নির্মিত হচ্ছে। ফলে বছর না ঘুরতেই তা ভেঙ্গে পড়ছে। এতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি, হাজার হাজার মানুষের পঙ্গুত্ববরণসহ দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই বিশেষজ্ঞ বলছেন, বাংলাদেশের মহাসড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা বলা হচ্ছে। বিশেষ করে মহাসড়কের উপযোগী নয় এমন যানবাহন মূল মহাসড়কে চলতে পারবে না। একটি চার লেনের রাস্তায় প্রথম দুটি লেনে দ্রুতগতির যানবাহন চলাচল করবে। তার সঙ্গে থাকা দুটি সার্ভিস লেনে অন্যান্য যানবাহন চলাচল করবে। এতে করে মহাসড়ক সার্ভিসিং করতে যেমন সুবিধা হবে তেমনি অন্যান্য যানবাহনও চলাচল করতে পারবে। আর মহাসড়কের পাশের অবৈধ স্থাপনা, দোকানপাট সরিয়ে দিলে যানজট কমে যাবে। দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে। যা দেশকে দ্রুত মধ্যম আয়ের দেশ পরিণত করতে বিশেষ ভ’মিকা রাখবে। মহাসড়কের যথাযথ নির্মাণ সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিশেষজ্ঞ শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম আব্দুল মুক্তাদির জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশে মহাসড়ক নির্মাণ করার মতো ফার্মের সংখ্যা খুবই কম। দেশের সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কথা চিন্তা করে সরকারের উচিত মহাসড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেয়া। প্রয়োজনে যেসব দেশীয় ও বিদেশী কোম্পানি টেকসই মহাসড়ক নির্মাণ করে, তাদের দিয়ে কাজ করানো উচিত। এতে দেশের লাভ হবে। সস্তায় মহাসড়ক নির্মাণ করলে তার যন্ত্রণা পোহাতে হবে দেশবাসীকেই; যা দেশের অর্থনীতিতে দিন দিন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মহাসড়ক দেখভালসহ নানাভাবে যারা এরসঙ্গে যুক্ত তাদের উচিত, সঠিকভাবে মহাসড়কের সার্বিক বিষয় মনিটরিং করা। অন্যথায় মহাসড়ক দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ানো বিচিত্র নয়।
×