ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কলম্বিয়ায় বিমান দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২ ডিসেম্বর ২০১৬

কলম্বিয়ায় বিমান দুর্ঘটনা

মঙ্গলবার কলম্বিয়ার মেডিলিনে ব্রাজিলের ফুটবল ক্লাব শাপেকোয়েন্সে বলিভিয়ান চার্টার লামিয়ার একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়। ঘটনায় ১৯ জন খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, সাংবাদিক, ডেলিগেটসহ ৭৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। মর্মান্তিক এই ঘটনায় ব্রাজিলসহ পুরো বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে আসে। দলটি আতলেতিকো নাসিওনালের বিপক্ষে কোপা সুডামেরিকার ফাইনাল খেলতে কলম্বিয়ায় যাচ্ছিল। ব্রাজিলের শাপেকো শহরের ছোট এই ক্লাবটি সাম্প্রতিক সময়ে খুব আলোচিত ছিল। এই দলের একাধিক খেলোয়াড় বিশ্ব ফুটবলে বড় তারকা হতে পারতেন। তথ্যপ্রযুক্তি-প্রকৌশলের উৎকর্ষের এই সময়ে এমন দুর্ঘটনা অত্যন্ত হতাশার, দুঃখজনক এবং বেদনাদায়ক। সাম্প্রতিক কয়েকটি দুর্ঘটনা বিমান পরিচালনা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অথচ বিমান পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথমেই নজর দিতে হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার সক্ষমতার দিকটি। এখন বিমানটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে, নাকি দুর্ঘটনার নেপথ্যে অন্য কোন কারণ আছে তা সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখা জরুরী। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৪৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৭০টিরও বেশি বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানগত দিক থেকেও এই দুর্ঘটনা নিছক কম নয়। এসব ঘটনায় নিহতের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক। অথচ বিমান পরিবহন ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়। যদিও সামান্য ভুল বা যান্ত্রিক ত্রুটি একটি বিমানকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। এই বিমান দুর্ঘটনাও যাত্রীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে। কয়েক বছর যাবত বিমান দুর্ঘটনা ক্রমে বেড়েই চলেছে। নিয়মানুযায়ী বিমান গ্রাউন্ডে থাকা অবস্থায় সর্বশেষ জরুরী চেকগুলো করে থাকেন পাইলট। যাত্রা নিরাপদ নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল তিনি উড্ডয়নের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বিমান পরিচালনায় এত আধুনিক এবং কম্পিউটারাইজড ফ্লাইং সিস্টেম থাকার পরও রাডার থেকে বিমান হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এমনকি জ্বালানি ঠিক আছে দেখার পরও কীভাবে তেল ফুরিয়ে যায় আকাশে। এর আগে দেখা গেছে মহাসাগরে একটি বড় বিমান হারিয়ে যাওয়ার প্রায় দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও তা খুঁজে না পাওয়ার মতো ব্যর্থতা। আধুনিক বিজ্ঞান বিমানের চলাচলকে প্রায় নিখুঁত করে গড়ে তুলতে সমর্থ হলেও দুর্ঘটনার লাগাম এখনও যথাযথভাবে টেনে ধরতে পারেনি। যে কারণে বিশ্বে বড় বড় বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে। কোন অবহেলা বা গাফিলতির কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটলে তা মেনে নেয়া যায় না। ব্রাজিলের শাপেকো শহরটি এখন শোকে নিস্তব্ধ। সেখানকার মেয়র দুর্ঘটনার দিনটিকে ট্র্যাজেডি ডে হিসেবে ঘোষণা করেছেন। একথা সত্য যে, খেলোয়াড় দল নিয়ে বিমান দুর্ঘটনা বিশ্বে এটাই নতুন নয়। ১৯৪৮ সালে প্যারিস থেকে লন্ডন যাওয়ার পথে বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান চেকোসেøাভাকিয়ার কয়েকজন হকি খেলোয়াড়। ১৯৫৮ সালে মিউনিকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফুটবল টিম, ১৯৭২ সালে আন্দিজ বিমান দুর্ঘটনায় ওল্ড ক্রিস্টিয়ান ক্লাব রাগবি ইউনিয়ন, ১৯৯৩ সালে বিমান দুর্ঘটনায় জাম্বিয়ার জাতীয় ফুটবল দলের সব সদস্যের মৃত্যুর খবর, ২০০২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক হ্যান্সি ক্রনিয়ের মৃত্যুর খবরও সবার জানা। বিমান দুর্ঘটনার এই ঘটনাগুলো ছিল ক্রীড়া ক্ষেত্রে সবচেয়ে মর্মান্তিক। মৃত্যু মানুষের নিয়তি হলেও এমন মৃত্যু কাম্য নয়। সবাই চায় বিমান পরিবহনে এমন এক চুলচেরা মনিটরিং ব্যবস্থা চালু হোক যাতে আকাশে ওড়ার আগে যাত্রীরা নিশ্চিত থাকতে পারেন তাদের বহনকারী ফ্লাইটটি নিরাপদ। নিয়তি মেনেই আমাদের প্রত্যাশা বিমান আরোহীদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত হোক। এই বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।
×