ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবার ও সাংবাদিক সমাজ হতাশ

মানিক সাহা হত্যার পরিকল্পনাকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১ ডিসেম্বর ২০১৬

মানিক সাহা হত্যার পরিকল্পনাকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যাকা-ের পরিকল্পনাকারী ও মদদদাতারা রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এমনটিই মনে করছেন খুলনার সাংবাদিক সমাজ, মানিক সাহার পরিবার ও আইনজীবী নেতারা। তারা বলেন, মানিক সাহা ঠুনকো কেউ ছিলেন না। তাকে হত্যার জন্য নেপথ্যে পরিকল্পনাকারী ও অর্থের যোগানদাতাও ছিল। তারা হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মানিক সাহার হত্যাকারীসহ খুনের পরিকল্পনাকারীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য বার বার দাবি জানানো হলেও তদন্তকারীরা গডফাদারদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছেন। ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি খুলনা প্রেস ক্লাব থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে দিবালোকে বোমা মেরে হত্যা করা হয় সাংবাদিক মানিক সাহাকে। তিনি ব্যক্তিত্বের গুণে সর্বস্তরের মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। এমন এক মানুষকে বোমা মেরে মাথা উড়িয়ে দেয়া হয়। এই ঘটনার পর খুলনার সাংবাদিক সমাজসহ সর্বস্তরের অসংখ্য মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তার শব যাত্রায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজার হাজার মানুষ শামিল হন। পরিবারের সদস্যদের আহাজারি এবং স্বজন শুভানুধ্যায়ীদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকা-ের প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় বয়ে যায় দেশের সর্বত্র। খুলনার সাংবাদিক সমাজ একটানা প্রায় ৬ মাস আন্দোলন করেছে। সে আন্দোলনে নেতৃত্বে ছিলেন খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ছিলেন দৈনিক জন্মভূমি সম্পাদক হুমায়ূন কবীর বালু। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শেখ আবু হাসান। এ সময় আন্দোলন বন্ধ করার জন্য তাদের হুমকিও দেয়া হয়। সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে খুলনার সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করেছেন। রাজপথে ক্যামেরা রেখে ও কলম ভেঙ্গে প্রতিবাদ করেছেন। ‘বিচার পাই না, তাই বিচার চাই না’ সেøাগান দিয়েছেন। মানিক সাহা হত্যাকা-ের বিচারের দাবিতে আন্দোলন চলার এক পর্যায়ে একই বছরের ২৭ জুন দুপুরে জন্মভূমি ভবনের সামনে হুমায়ূন কবীর বালুকে বোমা মেরে হত্যা করা হয়। বৃহস্পতিবার খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার আদালতে মানিক সাহা হত্যা মামলার রায়ে ৯ আসামির যাবজ্জীবন কারাদ- ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। খুলনার সাংবাদিক সমাজ মনে করেন, এই হত্যকা- শুধু বোমাবাজদের দ্বারা সংঘটিত হয়নি। এর পেছনে মদদদাতা রয়েছে। যারা বোমাবাজদের ব্যবহার করে হত্যাকা- ঘটিয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে পারেননি, বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারেননি। খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এসএম জাহিদ হোসেন বলেন, রায় নিয়ে কোন মন্তব্য করব না। তবে সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়ায় সাংবাদিক মানিক সাহা, হুমায়ূন কবীর বালুর হত্যার পরিকল্পনাকারীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে বলে তিনি মনে করেন। অনুরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন খুলনা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মামুন রেজা। সাংবাদিক মানিক সাহার ভাই প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক নেতা প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, এই রায়ে তারা সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। তিনি মনে করেন, তার দাদাকে হত্যার পেছনে শুধু বোমাবাজরাই ছিল না, কোন গোষ্ঠী তাদের ব্যবহার করেছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে হত্যার পরিকল্পনাকারীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য আমরাও দাবি জানিয়ে ছিলাম। কিন্তু আমরা হতাশ হয়েছি। হত্যার পরিকল্পনাকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেল। হত্যাকা-ের নীলনক্সা যারা করেছিল তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে হত্যাকা-ের ঘটনা কমে যেত বলে তিনি মনে করেন। খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান পপলু বলেন, বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইমাম, সাংবাদিক মানিক সাহা, হুমায়ুন কবীর বালুসহ কয়েকজন সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগের নেতা ওই সময় খুন হয়েছেন। প্রতি হত্যাকা-ের সঙ্গে যোগসূত্র ছিল। হত্যার পরিকল্পনাকারীরা নেপথ্যে থেকে জনযুদ্ধসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে হত্যাকা- ঘটিয়েছে। হত্যাকারী ও হত্যার পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করার দায়িত্ব ছিল তদন্ত কর্মকর্তাদের। তারা যদি সুষ্ঠু তদন্ত করে খুনের পরিকল্পনাকারীদের বিচারের আওতায় আনতেন তা হলে খুনখারাবি বন্ধ হয়ে যেত। যদিও সেই সময় ভয়াবহ পরিস্থিতি এখন আর নেই বলে তিনি জানান। এদিকে মানিক সাহা হত্যাকা-ের পর তার স্ত্রী ডাঃ নন্দা সাহা দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে যেন অথৈ সাগরে পড়ে যান। অনেক কষ্ট ও ধৈর্যের সঙ্গে দুই সন্তানকে বুকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যান। স্বাস্থ্য বিভাগে তিনি চাকরি করেন। থাকেন খুলনা শহরের আহসান আহমেদ রোডের বাসায়। তার দুই মেয়ে নাতাসা ও পর্সিয়া খুই মেধাবী। স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে তারা দু’জন এখন আমেরিকায়। নাতাসা শিক্ষা জীবন শেষ করে একটি চাকরি করছে এবং পর্সিয়া এখনও শিক্ষার্থী।
×