ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২০২৪ সালের পর দেশে দারিদ্র্য থাকবে না ॥ মুহিত

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১ ডিসেম্বর ২০১৬

২০২৪ সালের পর দেশে দারিদ্র্য থাকবে না ॥ মুহিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ২০২৪ সালের পর বাংলাদেশে দারিদ্র্য থাকবে না। তার মানে এই না যে, তখন কোন দরিদ্র লোক থাকবে না। বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ৮-১০ শতাংশ মানুষ রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল থাকবে। এটা সব দেশেই থাকে। এসব মানুষকে রাষ্ট্রীয় সকল সেবার আওতায় আনার উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে। বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। নিজেদের নেয়া ‘মঙ্গা’ নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগ (সংযোগ) কর্মসূচীর সমাপন উপলক্ষে পিকেএসএফ এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ এবং পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবদুল করিম। অনুষ্ঠানে ‘মঙ্গা’ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আজ বাংলা শব্দকোষ থেকে ‘মঙ্গা’ শব্দটি বিদায় করে দিলাম। আমরা আনন্দের সঙ্গে এ শব্দটিকে বিদায় দিতে পারি। বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে পিকেএসএফ ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্থা চালু করে মঙ্গাকে বিদায় করেছে। বাংলাদেশে এখন আর ‘মঙ্গা’ নেই। সভাপতির বক্তব্যে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, কর্মসূচীটি স্বচ্ছতা ও সফলতার সঙ্গে শেষ হয়েছে। কিন্তু আমাদের তদারকি থেমে থাকবে না। কারণ কোন প্রকল্প শেষ হলে তদারকির অভাবে সংশ্লিষ্টরা যথার্থ সুবিধা পায় না। তাই কর্মসূচীটি এখনও আমাদের নজরদারিতেই রয়েছে। আমরা মানুষের সক্ষমতার ওপর জোর দিচ্ছি। অতি দারিদ্র্য দূর করার চেষ্টাতো ছিলই, এখন আরও নতুন উদ্যোগের দিকে যাব। আমাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। সরকারের নীতির সঙ্গেও আমাদের পদক্ষেপের মিল রয়েছে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পিকেএসএফ ২০০৬ সাল হতে দেশের বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে মঙ্গাক্রান্ত অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ‘মঙ্গা নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগ (সংযোগ)’ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে। পরবর্তীতে ২০০৭ সাল থেকে উন্নয়ন সহযোগী ডিএফআইডি এ প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। ‘সংযোগ’ প্রকল্প দেশের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের ১১টি জেলার অতিদারিদ্র্য প্রবণ ৫০টি উপজেলায় ২৪টি সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে প্রায় ৫ লাখেরও বেশি অতিদরিদ্র খানায় সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করেছে। প্রকল্পটি চলতি বছরের ৩০ জুন সমাপ্ত হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় অতি দরিদ্রদের সংগঠিত করার মাধ্যমে তাদের মাঝে নমনীয় সঞ্চয়, সহনীয় ও নমনীয় ঋণ এবং আপদকালীন ঋণ প্রদান করা হয় এবং আয়বর্ধনমূলক কর্মকা-ে (আইজিএ) অতিদরিদ্র সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্ব-নিয়োজিত ও মজুরিভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। অতিদরিদ্র পরিবারের নাজুকতা দূরীকরণে আর্থিক সেবার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও কারিগরি সেবা প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রয়োজনে মঙ্গাকালীন কাজের বিনিময় অর্থ কার্যক্রম এবং সুপেয় পানি বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কর্মসূচীভুক্ত পরিবারের বার্ষিক আয় ২০০৭ সালে ছিল ৩৭ হাজার টাকা, তা এখন বেড়ে ১ লাখ ৪২ হাজার ৬৩৮ টাকা দাঁড়িয়েছে। বেড়েছে খাদ্য নিরাপত্তা। ২০০৭ সালে এসব পরিবারে তিন বেলা খাওয়ার হার মাত্র ৪ শতাংশ ছিল, যা এখন বেড়ে ৯৯ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। মঙ্গাকালীন (৫ মাস সেপ্টেম্বর-নবেম্বর ও মার্চ-এপ্রিল) কর্মসংস্থান প্রায় শূন্যের কোটা থেকে বর্তমানে মাসে ২১ দিন হয়েছে। ২০০৮ সালে এসব পরিবারের গড় সম্পদ ছিল ৬২ হাজার টাকা, এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার টাকায়।
×