ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দালাইলামা বিল

পাখিদের অভয়ারণ্য মানুষের ভালবাসা পেয়ে সুন্দর

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১ ডিসেম্বর ২০১৬

পাখিদের অভয়ারণ্য মানুষের ভালবাসা পেয়ে সুন্দর

জাহাঙ্গীর আলম শাহীন ॥ অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখর। বিলের আশপাশের মানুষের ঘুমভাঙ্গে পাখির ডাকে। সন্ধ্যায় পাখির নীড়ে ফেরার কলতানে অন্যরকম হয়ে ওঠে পরিবেশ। বিভিন্ন প্রজাতির শত শত পাখি। এর সৌন্দর্যই আলাদা। একেকটি পাখি একেক ধরনের। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না, পাখিগুলো কত সুন্দর! লালমনিরহাট জেলা শহর থেকে ১৫ কিমি দূরে মোগলহাট সীমান্তের শেষপ্রান্তের গ্রাম কুমারটারী। গ্রামটির পেছনে বিশাল বিল। এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত দালাইলামার বিল নামে। চারপাশে নানা প্রজাতির গাছ, আর বিশাল বিশাল বাঁশবাগান। গ্রামের মানুষগুলো খুবই সহজ-সরল ও নিরীহ। মাটির তৈরি তৈজসপত্র বিক্রি করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে বাসিন্দারা। প্রতিবছর অতিথি পাখিরা গ্রামবাসীর সরলতার আতিথেয়তা নেয়। মানুষের ভালবাসা পেয়ে বার বার ফিরে আসে, বাসা বাঁধে। আছে দেশী পাখিও। এসবের মধ্যে রয়েছে কানি বক, সাদা বক, মাছরাঙা, ডাউকপাখি, কদকা পাখি, বালিহাঁস, মনুয়া পাখি। এসব ছাড়াও সাইবেরিয়া হতে আসে নাম না জানা সুন্দর সুন্দর পাখি। বিলটি যেন পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। কুমারটারী গ্রামের মানুষ পাখি শিকার করতে দেন না, নিজেরাও শিকার করেন না। পাখিদের জন্য বিলটি হয়ে উঠেছে স্বর্গরাজ্য। সীমান্ত গ্রামটিতে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ঘরে ফিরে যেমন প্রশান্তির ঘুম দেয়, পাখিগুলোও তেমন। সন্ধ্যা হলেই দল বেঁধে ফেরে আপন ঠিকানায়। আশ্রয় নেয় গ্রামের গাছে, ঝোপঝাড়ে, বাঁশবাগানে। গৃহবধূ লক্ষ্মী রানী (৩৪) জানান, ১৮ বছর বয়সে বিয়ের সুবাদে গাইবান্ধা হতে কুমারটারী গ্রামে স্বামীর সংসারে বসবাস। গ্রামের সহজ-সরল মানুষগুলোর আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে শীত মৌসুমের শুরুতে কোথা হতে যেন নানা ধরনের পাখি দালাইলামার বিলে এসে আশ্রয় নেয়। প্রায় এক যুগ ধরে প্রতিবছর একই দৃশ্য চোখে পড়ে। এখানে পাখি আর মানুষ যেন মিলেমিশে সহাবস্থানে নিজেদের মতো করে জগৎ তৈরি করে নিয়েছে। বদরগঞ্জে অতিথি পাখির গ্রাম ॥ সংবাদদাতা জানান, রংপুরের ছোট্ট শহর বদরগঞ্জ। এই শহরের ওপর দিয়ে উড়ে চলে অতিথি পাখির ঝাঁক। নিমিষেই হারিয়ে যায় দূর দিগন্তে। প্রতিদিন সকাল-বিকেল অতিথি পাখির দল ছুটে চলে। রামনাথপুর ইউনিয়নের হাজীপাড়া গ্রাম। সেখানে একটি প্রাচীন জঙ্গলে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাশাপাশি দুটি শিমুল গাছ। গাছের মগডালে নির্বিঘেœ বাসা বেঁধে বসবাস করছে অগণিত অতিথি পাখি। কেউ এই পাখির নাম ‘কদোয়া’, কেউ ‘চকোয়া’ আবার কেউ ‘ভেলা’ নামে চেনে পাখিগুলোকে। তবে রংপুর চিড়িয়াখানায় খোঁজ নিয়ে এই পাখির প্রকৃত নাম ‘ধূসরবর্ণ সারস’ বলে জানা গেছে। গ্রামের লোকজন সকাল-সন্ধ্যা পাখিদের কলকাকলিতে মুগ্ধ হয়ে পাখিপ্রেমী বনে গেছে। তাই গত চার বছর ধরে শিকারীদের অত্যাচারের হাত থেকে অতিথি পাখিকে সুরক্ষা দিচ্ছে তারা। গ্রামের আশরাফুল হক জানান, বছর চারেক আগে কোন এক শীতের সকালে ২০-২২টি সারস পাখি এক সঙ্গে শিমুল গাছে বসে। এরপর গাছের ডালে দু-একটি করে পাখি আসতে আসতে ওইদিন বিকেল বেলা পাখির সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে যায়। সন্ধ্যায় এসব পাখির কলকাকলিতে গ্রামবাসী মুগ্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাদের বিচিত্র শব্দ আর ডানা ঝাপটার আওয়াজ। একদিন সকালে অতিথি পাখি আসার খবর শুনে শিকারিরা বন্দুক হাতে ছুটে আসে গ্রামে। কিন্তু মানুষের বাঁধার মুখে তারা একটি পাখিও শিকার করার সুযোগ পায়নি। তখন থেকে তারা অতিথি পাখি রক্ষায় বদ্ধপরিকর। এভাবে দিনের পর দিন গ্রামবাসীর ভালবাসার উঞ্চতা পেয়ে তারা বাসা বেঁধে নির্বিঘেœ বংশ বিস্তার শুরু করে। কলেজছাত্র রাশেদ খান মিলন বলেন, সাত সকালে কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে পাখিরা দূর-দূরান্তের জলাশয়ে চলে যায়। সারাদিন শিকার করে সূর্যাস্তের আগেই ফিরে আসে পাখির দল। গ্রামের মানুষ আগলে রেখেছে পাখিগুলো।
×