ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রিজার্ভের অর্থ ফেরত পেতে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলার চিন্তা ॥ মুহিত

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১ ডিসেম্বর ২০১৬

রিজার্ভের অর্থ ফেরত পেতে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলার চিন্তা ॥ মুহিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত পেতে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশের রিজার্ভের অর্থ আরসিবিসির মাধ্যমে সরানো হয়। এখন রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত প্রদানে ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ (আরসিবিসি) বিস্ময়করভাবে ইউটার্ন নিয়েছে। বুধবার বিকেলে সচিবালয়ে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, রিজাল ব্যাংকের (আরসিবিসি) মনোভাব মোটেও ভাল নয়। চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত প্রদানে তারা যে ওয়াদা করেছে সেটা না মানলে অনৈতিক হবে। তারা বিস্ময়করভাবে অর্থ ফেরত না প্রদানে মোড় নিয়েছে। রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রকাশ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন যখন খুশি তখন প্রকাশ করব। সংসদীয় কমিটিতেও তখন দেয়া হবে। তিনি বলেন, সংসদীয় কমিটি তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশে সুপারিশ করতে পারে, কিন্তু অর্ডার দিতে পারে না। রিজার্ভ চুরির পর এ ঘটনায় যে পদক্ষেপ বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে, এর বাইরেও প্রতিবেদনে অনেক কিছু আছে। সেজন্য এখন তা প্রকাশ করা হচ্ছে না। এছাড়া আমার ইচ্ছেতেই এতদিন এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিকই বলেছে। এদিকে, মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন-আরসিবিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থের বাকি চার-পঞ্চমাংশ ফেরত দেবে না। পাশাপাশি আলোচিত ওই ঘটনার জন্য উল্টো বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দায়ী করেছে ফিলিপিন্সের ব্যাংকটি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সুইফট সিস্টেমে ভুয়া পরিশোধ অর্ডার পাঠিয়ে নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে চুরি করা প্রায় ১০ কোটি ডলারের মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার রিজাল ব্যাংকের একটি শাখা হয়ে জুয়ার বাজারে চলে যায়। তার মধ্যে এক ক্যাসিনো মালিকের ফেরত দেয়া দেড় কোটি ডলার বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। বাকি প্রায় সাড়ে ৬ কোটি ডলার ফেরত পাওয়ার বিষয়ে কথা বলতে ফিলিপিন্সে গেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির। তারা চুরির বাকি অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে যখন জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন তখন আরসিবিসি বেঁকে বসেছে। রিজাল কর্র্তৃপক্ষ দাবি করেছে ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের কোন দায় নেই। রিজালের আইনজীবী থিয়া দায়েব এক বিবৃতিতে বলেছেন, ওই চুরির কারণ আরসিবিসি নয়। আমাদের বিরুদ্ধে তাদের (বাংলাদেশ ব্যাংক) কোন যুক্তি নেই। অবহেলা যদি কারও থেকে থাকে, তবে তা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। সুতরাং আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে ফিলিপিন্স সরকারের কাছে স্পষ্ট হতে বলব, তাদের সহযোগিতায় সরকার অনেক করেছে। কারা ওই চুরি করেছে তা বাংলাদেশ ব্যাংককেই বের করতে হবে। ম্যানিলায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ বাকি অর্থ আদায়ের জন্য গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে অন্যায্যভাবে ফিলিপিন্স সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন বলেও আরসিবিসি অভিযোগ করেছে। যদিও জন গোমেজ এর আগে ফিলিপিন্সের সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, রিজার্ভ চুরি নিয়ে গত বছর এপ্রিলে ফিলিপিন্সের সিনেট কমিটির শুনানির সময় আরসিবিসির সাবেক প্রেসিডেন্টে লরেঞ্জো তান ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী ব্যাংকটি ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ কোটি ডলার পরিশোধ করবে বলে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে। ম্যানিলা সফররত আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, রিজাল ব্যাংক রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল। নিজেদের দায়ও তারা স্বীকার করেছে। এখনও ছয় কোটি ৬০ লাখ ডলার বাকি, আর আমরা সেই অর্থ উদ্ধার করতেই এখানে এসেছি। তিনি বলেন, ফিলিপিন্সের সিনেট ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে প্রমাণ হয়েছে যে, আরসিবিসির ভূমিকায় বড় ধরনের সমস্যা ছিল। হ্যাকাররা যাতে তাদের চুরির অর্থ জুপিটার শাখার ভুয়া এ্যাকাউন্ট দিয়ে বের করে নিয়ে যেতে পারে, সেই সুযোগ আরসিবিসিই দিয়েছে। পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগসহ সাত প্রস্তাব অনুমোদন ॥ অর্থনৈতিক রিপোর্টার জানান পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পে ৯৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে পরামর্শক নিয়োগসহ মোট সাতটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। বুধবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে সরকারী ক্রয় কমিটির এক সভায় এ প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ ও নাইট ক্লিয়ারেন্স সহায়তা, রিসেটেলমেন্ট প্ল্যান বাস্তবায়ন, ডিজাইন রিভিউ ও নির্মাণ কাজ সুপারভিশন সেবা ক্রয়ের জন্য একক উৎসভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতিতে কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ড (সিএসসি) কল অব ক্রপস অব ইঞ্জিনিয়ার এবং বাংলাদেশ আর্মি ইন এ্যাসোসিয়েশন সঙ্গে বিআরটিসিকে (বিইউইটি) নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৯৪০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। বৈঠকে জানুয়ারি-জুন ২০১৭ সময়ে উন্মুক্ত দরপত্রের প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক কোটেশন আহ্বানের মাধ্যমে ৭ দশমিক ১৯৮ মিলিয়ন ব্যারেল গ্যাস অয়েল, ০.৭২০ মিলিয়ন ব্যারেল জেট এ-১ এবং এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল ১৮০ সিএসটি আমদানির প্রস্তাব অনুমোদ দেয়া হয়। তিনটি দরপত্রের মাধ্যমে আমদানি করা হবে। কাজ পেয়েছে কোরিয়ান কোম্পানি ইনডিগো ও ভিটাল এশিয়া।
×