ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দলের সর্বইউরোপীয় শাখার নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনতে প্রচার চালান

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১ ডিসেম্বর ২০১৬

আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনতে প্রচার চালান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে পুনরায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনতে প্রচার কার্যক্রম চালানোর জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, অন্য কোন দল ক্ষমতায় এলে দেশ পিছিয়ে পড়বে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বুদাপেস্টে ফোর সিজনস হোটেলে অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেবলমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে... অন্য কোন দল ক্ষমতায় আসলে দেশ পিছিয়ে পড়বে।’ খবর বাসস’র। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে এ জন্যই আওয়ামী লীগ আন্তরিকভাবে দেশের উন্নয়ন চায়। ‘দেশকে উন্নত করা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব এবং এটি আমরা অব্যাহত রাখবো ইনশাআল্লাহ্।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া দল। যে দল দেশের স্বাধীনতা নিয়ে এসেছে কেবল তারাই দেশের উন্নয়ন করতে পারে... আওয়ামী লীগের চেয়ে অন্য কোন দল তা পারবে না। প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশীদের আগামী সাধারণ নির্বাচনের প্রচার কার্যক্রম শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আপনারা যখন দেশে ফিরবেন আপনারা আপনাদের গ্রামবাসীদের একটি প্রশ্ন করবেন তারা উন্নয়ন চায় নাকি উন্নয়ন চায় না। সংবর্ধনা সভায় সভাপতিত্ব করেন অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা অনিল দাসগুপ্ত। বিভিন্ন ইউরোপিয়ান দেশ থেকে আগত আওয়ামী লীগ নেতারা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি অধিকতর উজ্জ্বল করতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আপনাদের নিজেদের রাষ্ট্রদূতের মতো করে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে হবে। শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নয়ন হয়। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের পর ২১ বছর পর্যন্ত যে দলগুলো রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল তাদের জবাবদিহি করতে হবে যে কেন তারা দেশের উন্নতি করতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে স্থলসীমান্ত ও সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি করেছে। কিন্তু জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকারের এসব ইস্যু উত্থাপনেরও সাহস ছিল না। আওয়ামী লীগ সভাপতি পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে দলের বিজয়ের জন্য বিদেশে বসবাসকারী দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা যখন দেশে যাবেন তখন নিজ এলাকার মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ব্যাপক সাফল্যের চিত্র তুলে ধরবেন। উন্নয়ন কর্মকা-ের বিরুদ্ধে একদল মানুষের বিক্ষোভের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কিছু মানুষ আছে যারা সবকিছুই অপছন্দ করে। সবকিছুতে তারা দোষ-ত্রুটি দেখে। এটাই স্বাভাবিক যে তারা সব বিষয়ে আন্দোলন করবে। তবে তারা তাদের বিক্ষোভ করতে থাকুক, আমরা আমাদের উন্নয়ন কর্মকা- চালিয়ে যাব। ২০১৩ সালে নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সময় আমি সর্বদলীয় সরকারে যোগ দিতে খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করেছিলাম। আমি তাকে (খালেদা) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেয়ারও প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু তিনি রাজি হননি, এমনকি নির্বাচনেও আসেননি। বরং তিনি নির্বাচন ভ-ুল করার চেষ্টা করেছিলেন। মূলত ২০১৩ সালে খালেদা জিয়া সংলাপের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার ছেলে কোকোর মৃত্যুর পর সমবেদনা জানাতে আমি তার (খালেদা) বাসায় গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি বাসায় ঢোকার সুযোগ দেননি। ভেতর থেকে বাসার গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। বিগত ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর প্রথম ৩ মাস খালেদা জিয়ার দলের সৃষ্ট নৈরাজ্য ও তা-বের জন্য তার তীব্র সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ওই সময় তারা আন্দোলনের নামে ১৫৭ জন মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছেন এবং এতে দগ্ধ হয়েছেন ৫০৮ জন। তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যাকারীরা দেশকে কি দেবে। আর কেনইবা জনগণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনিকারীদের ওপর আস্থা রাখবে। যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে এবং ইতোমধ্যে এর কিছু রায় কার্যকরও হয়েছে। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের জেল থেকে মুক্ত করে এবং মন্ত্রী ও এমপি বানিয়ে তাদের পুনর্বাসন করেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের হাতে জাতীয় পতাকা দিয়েছেন তাদেরও যুদ্ধাপরাধীদের মতো একই শাস্তি ভোগ করা উচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে ‘বোদাপেস্ট ওয়াটার সামিট-২০১৬’তে যোগ দিতে চার দিনের দ্বিপক্ষীয় সফরে রবিবার এখানে পৌঁছেন। তিনি বুধবার স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ১০টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল সোয়া ৩টা) দেশের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
×