ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাষ্ট্র ও ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতার তাগিদ

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১ ডিসেম্বর ২০১৬

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাষ্ট্র ও ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতার তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে ব্যক্তি ও পরিবার পর্যায়ে খাদ্যাভ্যাসজনিত অসচেতনতা রয়েছে। এছাড়া জাতীয় পর্যায়েও রয়েছে পুষ্টি ও খাদ্য অপচয়জনিত সমস্যা। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে সরকারের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন দিক ও ফলাফল নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। তাই খাদ্য নিরাপত্তা ও সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য রাষ্ট্র ও ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বশীল খাদ্যাভ্যাস: ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের ভূমিকা’ শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে দরিদ্র ও অল্প আয়ের মানুষদের বিষয়ে অধিকতর নজর দেয়া প্রয়োজন বলেও বক্তারা মনে করেন। ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ ও ‘ক্রিশ্চিয়ান এইড’ যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করে। খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক। খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলী সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। সেমিনারে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. নাজনীন আহমদ ‘খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বশীল খাদ্যাভ্যাস’ বিষয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদনের সারাংশ তুলে ধরেন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ড. খুরশীদ জাহান, খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান মুহম্মদ হিলালউদ্দিন ও ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সঞ্জীব বিশ্বাস সঞ্জয়। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, ২০০৯ সালে ১৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি নিয়ে যাত্রা শুরু করে বর্তমান সরকার দেশকে খাদ্য-উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত করেছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা। তিনি বলেন, ২০১২ সালের পরে আমরা চাল আমদানি করছি না, বর্তমানে চাল রফতানি করছি। এখন বড় চ্যালেঞ্জ, জনগণের পর্যাপ্ত খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা। এজন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সরকারের ১৪১টি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচী রয়েছে, যার বেশিরভাগই খাদ্যবান্ধব। বর্তমানে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, খাদ্যগ্রহণে চাহিদা ও রুচির পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে দেশে খাদ্যহীন কোন পরিবার নেই। মন্ত্রী আরও বলেন, হতদরিদ্রদের জন্য ১০টাকা কেজিতে চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে উত্থাপিত অনিয়মগুলো আমরা কঠোর হাতে দমনের চেষ্টা করছি। আগামী তিনমাসে এ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হবে বলে আমরা আশা করছি। এসব কার্যক্রম জাতীয় ডাটাবেজের আওতায় নিয়ে আশা হবে বলেও খাদ্যমন্ত্রী জানান। সভাপতির বক্তব্যে খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, আইন প্রণয়নের দায়িত্ব সরকারের কিন্তু বাস্তবায়নের দায়িত্ব জনগণসহ সকলের। তাই সরকার, নাগরিক সমাজ ও জনগণের সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। তিনি বলেন, দেশে খাদ্যাভাব নেই, কিন্তু অপচয় হচ্ছে। আমাদের সংস্কৃতি ও কৃষ্টিতেই খাদ্য অপচয়ের বিষয়ে বেশকিছু শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ এ সম্পর্কিত আইন প্রণয়নের জন্য তাদের উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে। পাশাপাশি সচেতনতা সৃষ্টির জন্য দরকার ব্যাপক প্রচার। এ বিষয়েও সরকারসহ সকলের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। ড. নাজনীন আহমেদ তার উপস্থাপনায় বলেন, প্রতিবছর বিশ্বের মানুষের ভোগের জন্য মোট উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ বা প্রায় ১.৩ বিলিয়ন টন নষ্ট হয়। প্রতিবছর ধনী দেশগুলো যে পরিমাণ খাদ্য অপচয় করে থাকে তা সাব-সাহারা অঞ্চলের নীট খাদ্য উৎপাদনের সমান। বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ হওয়ায় খাদ্য অপচয় সমস্যার সমাধান না করতে পারলে খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে উৎপাদন থেকে ভোগ পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে খাদ্যে অপচয় ঘটে থাকে। তিনি বরিশালের ৬টি ইউনিয়ন ও সিটি কর্পোরেশনের ২টি ওয়ার্ডেও ৫৪০টি খানার প্রধান প্রধান খাদ্য ভোগ ও অপচয়ের সংগৃহীত তথ্য থেকে খাদ্য সংগ্রহ, খাবার প্রস্তুত ও খাদ্যগ্রহণ প্রভৃতি সূচক ধরে বিভিন্ন উপাত্ত তুলে ধরেন। জরিপে দেখা গেছে, উত্তরদাতাদের ৪০ শতাংশ খানা প্রতিদিন তাদের রান্না করা খাবার সম্পূর্ণ শেষ করলেও ৬০ শতাংশ খানার উত্তরে জানা গেছে তাদের খাবার উদ্বৃত্ত থাকে। খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির অবস্থা উন্নত করতে সকল স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পারিবারিক পর্যায়ে জ্ঞানবৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। নাগরিক সমাজকে ভূমিকা রাখতে হবে। সর্বোপরি এগিয়ে আসতে হবে রাষ্ট্রকে।
×