ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রতন চক্রবর্তী

ব্রত নয় বাণিজ্য!

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১ ডিসেম্বর ২০১৬

ব্রত নয় বাণিজ্য!

ঘটনা-১ : নরসিংদীর একটি স্বনামধন্য বিদ্যালয়। মাধ্যমিক শ্রেণীর একটি ক্লাস। শিক্ষক অঙ্ক নিচ্ছেন। শিক্ষক : এই সম্পাদ্যটি তোমরা বাড়ি থেকে করে আনবে। বুঝেছ? জনৈক ছাত্রী : স্যার, এটা যদি একটু বুঝিয়ে দিতেন তবে ভাল হতো। শিক্ষক : বুঝতে হলে আমার কোচিংয়ে আস। আমার কোচিংয়ের দরজা তোমাদের জন্য খোলা। ঘটনা-২ : নরসিংদীর স্বনামধন্য একটি বয়েজ স্কুল। সেই স্কুলের একজন শিক্ষক বাড়ি ফেরার পথে ওই স্কুলেরই কয়েকজন ছাত্র দ্বারা আক্রান্ত হলেন। ‘... বাচ্চা, তোর কাছে যারা পড়ে তারা যা খাতায় লিখছে আমরাও তাই লিখছি। তোর ছাত্রগোরে বেশি নম্বর দিছস আমাগরে ফেল করাইছস ক্যান।’ তার ক্লাসের ছাত্রদের দ্বারাই লাঞ্ছিত হলেন ওই শিক্ষক। এই যে দুটি ঘটনা, এ থেকে কী বোঝা যায়? মহান ব্রত যে শিক্ষকতা- সেটা এখন ব্যবসায় রূপান্তরিত হয়েছে। আর শিক্ষকরা নিজের নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে বাণিজ্যে নামছেন। আর এর ফলও ভোগ করছেন। দেশে ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয় হয়ত আছে। কিন্তু আদর্শ বিদ্যালয় নেই বললেই চলে। ছাত্র-শিক্ষক নিয়েই বিদ্যালয়। কিন্তু বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণেরই যদি আদর্শ না থাকে ছাত্রদের থাকবে কোত্থেকে? আর এই দুই ক্ষেত্রেই যখন আদর্শ অনুপস্থিত তখন আদর্শ বিদ্যালয় কোথায়? যে ছাত্র বা ছাত্রীটি শিক্ষকের কাছে পড়বে তার হাতেই শিক্ষক পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র ধরিয়ে দেবে। মেধার বিকাশ হবে কীভাবে? ‘আমার কাছে না পড়লে বুঝিছ!’ এই রকম হুমকি কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের জন্য কতটুকু মঙ্গলজনক? এর শেষ কোথায়? ওই শিক্ষকের কাছে না পড়লে পরীক্ষাপত্রে উত্তর সঠিক লিখলেও ‘হয়নি’ অজুহাতে কেটে দেয়া হয়। নম্বর কম দেয়া হয়। অনেক সময় ফেল করিয়ে দেয়া হয়। এটাই কী শিক্ষকের আদর্শ? এ তো গেল লেখাপড়ার দিকটি। ইদানীং কিছু স্যাডিস্ট শিক্ষকের আবির্ভাব ঘটেছে বিদ্যালয়গুলোতে। যারা ছাত্রীদের নিজের সন্তান মনে করতে পারেন না। ছাত্রীরা এখন বিদ্যাপীঠের মতো একটা পবিত্র জায়গায় নিরাপদ নয়। ওই সব বিকৃতমনা শিক্ষক তখনই আদর্শ শিক্ষক হবে যখন তারা তাদের স্কুলের ছাত্রীদের নিজের মেয়ের স্থানে বসাবে। আদর্শ বিদ্যালয় তাকেই বলে যার শিক্ষকরা আদর্শ শিক্ষক আর যার ছাত্রছাত্রীরা আদর্শ ছাত্রছাত্রী। যেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে শিক্ষকদের ওপর। শিক্ষকদের মনে রাখতে হবে শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। দেশপ্রিয় রোড, নরসিংদী থেকে
×