ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইব্রাহীম রাসেল

শ্রেণীকক্ষে যথার্থ পাঠদান

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ১ ডিসেম্বর ২০১৬

শ্রেণীকক্ষে যথার্থ পাঠদান

পিতা-মাতার পরের স্থানটিই শিক্ষকের। কারণ পিতা-মাতা আমাদের পৃথিবীর আলো দেখালেও শিক্ষকরাই সেই পৃথিবীতে আমাদেরকে সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন। শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার। শিক্ষা আর শিক্ষক পরস্পরের পরিপূরক। শিক্ষকরাই একটি আদর্শ জাতি গঠনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শিক্ষাই জাতীর মেরুদণ্ড আর সেই মেরুদণ্ড গড়ার কারিগর হলেন শিক্ষক। শিক্ষকরাই শিখিয়ে থাকেন ভবিষ্যত জীবনের প্রয়োজনীয় নানাবিধ দিক। শিক্ষাজীবনে তাই শিক্ষকই হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীদের আদর্শ। একজন আদর্শ শিক্ষকই সেই স্থানের যোগ্য। জাতির ভবিষ্যত বিনির্মাণে যাদের ভূমিকা সর্বাগ্রে। এই মহান পেশায় যারা নিয়োজিত রয়েছেন, পেশাজীবনে তাদের যেমন আদর্শবান হতে হবে ঠিক তেমনি ব্যক্তিগত জীবনেও ন্যায়-নীতিতে অটুট থাকা বাঞ্ছনীয়। কারণ তাদের কাছ থেকেই শিক্ষার্থীরা শিখছে, শিখবে। একজন আদর্শ শিক্ষকই হতে পারেন আদর্শ জাতি গঠনের কাণ্ডারী। দুঃখ ও হতাশাজনক হলেও সত্য যে আমাদের শিক্ষক সমাজের অনেকেই শিক্ষকতা পেশাটাকে বাণিজ্যে রূপান্তরিত করেছেন। মফস্বলের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, সেখানকার স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা বাসায় ব্যাচ পড়ান। এমন অনেকে আছেন স্কুল ছুটির পরে বাকি সময় ধরে প্রতিদিন ৮-১০টা ব্যাচ পড়ান। ১ ঘণ্টা বা ৪০ মিনিট সময় ধরে এসব ব্যাচে ১৫-২০জন করে শিক্ষার্থী পড়ছে। আর শহরের কথা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না। শহরের শিক্ষকরা একদিকে যেমন বাসায় নিজস্ব ব্যাচে পড়ান অনেক শিক্ষক আবার কোচিং সেন্টার খুলে বসে আছেন। সেখানে ব্যাচের পর ব্যাচ পড়ানো হচ্ছে। আর এসব নিজস্ব ব্যাচ বা কোচিংয়ে শিক্ষার্থীরা কি শিখছে সেটা বড় কথা নয়, বাণিজ্যটাই তাদের আসল কথা। শহরের অভিভাবকরা তো ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। বর্তমান সরকার শিক্ষকদের এই শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধ করতে সম্মানজনক বেতন স্কেলের ব্যবস্থা করলেও অনেক শিক্ষক এখনও বহাল তবিয়তে তাদের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। একজন আদর্শ শিক্ষকের কাছে অর্থ উপার্জন নয় শিক্ষার্থীদের যথার্থ জ্ঞানদানই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। শিক্ষাদান একটি আদর্শ কর্ম এবং এই আদর্শ কর্মের উপরই নির্ভর করে আগামী দিনের আদর্শ শিক্ষিত জাতির। শিক্ষার্থীরা যদি শিক্ষকদের আচার-আচরণ বা কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্জন মানে অর্থ উপার্জন দেখতে পায় তাহলে তাদের কাছ থেকে জাতি ভবিষ্যতে সেরকমই আচরণ পাবে। তাই শিক্ষকদের উচিত নীতি ও আদর্শে অটুট থাকা। আইন করে যদি শিক্ষকদের বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করতে হয় সেটা দুঃখজনক। সুতরাং জাতির একটি মহান দায়িত্বে তারা নিয়োজিত রয়েছেন এই কথা ভেবে শিক্ষককে স্কুলেই সঠিক পাঠদান করাতে হবে। মোহাম্মদপুর, ঢাকা থেকে
×