ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পানি নিরাপত্তা...

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ১ ডিসেম্বর ২০১৬

পানি নিরাপত্তা...

নদী যেমন ছুটে চলে সাগর ঠিকানায়, তেমনি পানিও আকর্ষিত হয় পানির পানে। বিশ্ব প্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পানি। যার অপর নাম জীবন হিসেবে খ্যাত। সেই পানিরই সঙ্কট বাড়ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা মরুভূমি সৃষ্টিতে অবদান রাখার কারণে পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্র যথাযথ সম্প্রসারিত না হওয়ার কারণে অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বজুড়ে পানির জন্য হাহাকার দেখা দেয়ার সম্ভাবনার কথা জোরেশোরেই আলোচিত হচ্ছে। প্রচার রয়েছে যে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে, তা হবে পানির জন্যই। অবশ্য পানির অভাব মূল কারণ নয়, পানি সঙ্কটের পানির সুষম বণ্টনও এই সঙ্কটের একটি কারণ। মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি, ধ্যানধারণার প্রধান অংশজুড়ে রয়েছে পানি। তবে পানির সুরক্ষা, সংরক্ষণের ওপর সমষ্টিগতভাবে কোন দৃষ্টি দেয়া হয় না। যদি হতো, তবে পানি নিয়েই বৈষম্য থাকত না। আর এর ফলে সমাজে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হয়ে যেত। যদিও বিশ্বে অনেক উত্তেজনা ও সংঘাতের মূলে রয়েছে এই পানি। আন্তঃসীমান্ত নদীর পানির সুব্যবস্থাপনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় বিষয়। যদিও আন্তঃসীমান্ত নদী প্রবাহের বণ্টন একটি জটিল বিষয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত নগরায়ণ ও অপরিকল্পিত শিল্পায়নের এই যুগে পানির কারণে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে এবং রাষ্ট্রের ভেতরে বৈষম্য ও বিভেদ তীব্রতর হচ্ছে। আর এই সমস্যার সমাধানে সমষ্টিগতভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা, পানির নিরাপত্তাই বিশ্ব মানবের মর্যাদাপূর্ণ ও মঙ্গলময় জীবনের নিশ্চয়তা দিতে পারে। পানি হচ্ছে সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং পরিবেশের ভারসাম্যের মৌলভিত্তি। তাই পানিকে রাষ্ট্রের সব নীতি ও কাজে অগ্রাধিকার দেয়া সঙ্গত। গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে পানিবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের প্যানেলে গৃহীত লক্ষ্যগুলো অর্জনে একযোগে কাজ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে গঠিত পানিবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের প্যানেলের সদস্য শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক তহবিল গঠনসহ সাত দফা যে প্রস্তাব পেশ করেছেন, তাতে পানি নিয়ে বিদ্যমান সমস্যার সমাধানের পন্থা রয়েছে। প্রস্তাবের শুরুতে বলা হয়, এজেন্ডা ২০৩০-এ পানি এবং বৃহত্তর টেকসই উন্নয়ন কাঠামোর মধ্যে আন্তঃসংযোগ ও বিনিময়ের গৃহীত নীতি অনুযায়ী জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে যে কোন উন্নয়ন প্রচেষ্টায় পানি হবে অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশ্বে পিছিয়ে থাকা লাখ লাখ মানুষ অথবা গ্রুপ যারা বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং স্যানিটেশন সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সঙ্কট মোকাবেলা করছে; তাদের চাহিদার প্রতি গুরুত্বারোপ জরুরী, জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকির মুখোমুখি দেশগুলোর বিপন্ন এলাকায় পানি সম্পর্কিত বিপর্যয় রোধে সহায়ক কাঠামো নির্মাণ জরুরী। সুষম বণ্টনের জন্য আন্তঃসীমান্ত নদীর পানির কার্যকর ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সীমিত পানি ব্যবহার করে মৎস্য উৎপাদনে পদক্ষেপ গ্রহণ ও পানিসাশ্রয়ী প্রযুুক্তির উন্নয়ন ঘটাতে হবে। পানি সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জনে গবেষণা, উদ্ভাবনা ও প্রযুক্তি হস্তান্তরে বৈশ্বিক তহবিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই শেখ হাসিনার প্রস্তাবসমূহ বেশ প্রশংসিত হয়েছে। নদী বিধৌত বাংলাদেশের দর্শন, সংস্কৃতি, জীবন ও জীবিকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে পানি। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সকলের জন্য সুপেয় পানি ও জনসংখ্যার অন্তত নব্বই শতাংশের জন্য উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। শেখ হাসিনার প্রস্তাব বিশ্বকে পানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে একটি যুগান্তকারী সাফল্য এনে দিতে পারে।
×