ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিহতের ভাই নজরদারিতে

ডলি রানী হত্যা রহস্যের ২০ দিনেও কোন কিনারা হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৩০ নভেম্বর ২০১৬

ডলি রানী হত্যা রহস্যের ২০ দিনেও কোন কিনারা হয়নি

গাফফার খান চৌধুরী ॥ রাজধানীর রমনার মধুুবাগে ডলি রানী বণিক হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনার আজও কিনারা হয়নি। ঘটনার বিশ দিন পরও হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এজন্য ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামতের নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। রহস্যের জট খুলতে নিহতের ভাই অশোক বণিক ওরফে বাবু বণিক ও তার পরিচিত ব্যক্তির ওপর নতুন করে নজরদারি শুরু হয়েছে। এ দুজন নিহত ডলি রানীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ধার নিয়েছিলেন। সেই ধারের টাকার সূত্র ধরেই হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটতে পারে বলে তদন্তকারীদের ধারণা। এজন্য অশোক বণিক এবং অপরজনের দেশত্যাগের ক্ষেত্রেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। গত ৮ নবেম্বর দুপুর বারোটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টার কোন এক সময় রাজধানীর রমনা থানাধীন মধুবাগের উদ্দীপন গলির ১০/ই/৮ নম্বর চারতলা বাড়ির চতুর্থ তলার পূর্বপাশের দুই কক্ষের একটি ফ্ল্যাটে নৃশংসভাবে খুন হন ডলি রানী বণিক (৪৬)। রাত একটার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী সজল বণিক বাদী হয়ে রমনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। রমনা মডেল থানার ওসি মশিউর রহমান জানান, অর্থ সংক্রান্ত বিষয়াদির জের ধরে হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। তবে এজাহারে সরাসরি কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। নিহতের ভাই অশোক বণিক ওরফে বাবু বণিক এবং প্রতিবেশী একজনের সঙ্গে নিহতের অর্থ লেনদেনের সূত্র ধরে ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। নিহতের স্বামী মালয়েশিয়া প্রবাসী। দেশে পাঠানো টাকা ধার নেয় বাবু বণিক ও তার পরিচিত এক লোক। তারই জেরে হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে মামলার অভিযোগে। সন্দেহভাজন আসামি অশোক বণিককে গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে বুঝিয়ে দেয় র‌্যাব। বাবু বণিককে কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে বাবু বণিকের হত্যাকা-ে সরাসরি জড়িত থাকার কোন প্রমাণ মেলেনি। পরোক্ষভাবে বাবু বণিক বোন হত্যায় জড়িত কিনা এখনও তা পরিষ্কার নয়। তাই বাবু বণিককে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে বাবু বণিক নজরদারির মধ্যে রয়েছে। মামলাটির তদন্তকারী সংস্থার একজন উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে বলেন, ডলি রানী হত্যার ঘটনাটি খুবই রহস্যময়। কারণ ডলি রানীকে বাসার বঁটি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, যা হত্যাকারীরা পরিচিত বলে ধারণা দিচ্ছে। সেই সঙ্গে হত্যাকারীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ডলি রানীকে যে হত্যার জন্য এসেছিল তা প্রমাণ করে না। পরিস্থিতির কারণে হত্যাকারীরা ডলি রানীকে হত্যা করতে পারে। আর যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাতে একার পক্ষে ডলি রানীকে হত্যা করা কঠিন ব্যাপার। লাশ উদ্ধারের সময় ডলি রানীর ফ্ল্যাটের মূল দরজা বন্ধ ছিল। হত্যাকারীরা বাড়ির সামনে দিয়ে প্রবেশ করার কোন তথ্য মেলেনি। আশপাশে থাকা বহু সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়েছে। তাতে সন্দেহভাজন হত্যাকারীদের সম্পর্কে কোন তথ্য মেলেনি। ডলি রানীর ফ্ল্যাটে পেছন দিক থেকে প্রবেশ করা গেলেও, তা খুবই দুরূহ ব্যাপার। পেছন দিক দিয়ে প্রবেশ করে বের হওয়া কঠিন। কারণ বের হওয়ার তেমন কোন রাস্তা নেই। চারতলা লাফিয়ে নিচে পড়ে পালানো ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। বাড়ির পেছনে নোংরা। সেখানে যত্রতত্র ইট, কাঁচসহ নানা ধরনের ময়লা রয়েছে। সেখানে লাফিয়ে পড়লে হাত-পা ভাঙ্গা ছাড়াও কেটে যাওয়া নিশ্চিত। এমন পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে রীতিমতো গোলকধাঁধার সৃষ্টি হয়েছে। আর ঘটনার সময় নিহতের স্বামী সজল বণিক মালয়েশিয়া ছিলেন। বড় ছেলে ঢাকার বনানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র জুয়েল বণিক ও ছোট ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে ভর্তির জন্য অপেক্ষায় থাকা দীপ্ত বণিক বাড়ির বাইরে ছিল। একমাত্র মেয়ে ঝুমা বণিক ভারত প্রবাসী। ডলি রানীর ফ্ল্যাটে তিনি ব্যতীত কেউ ছিল না। যদিও নিহতের বড় ছেলের সন্দেহ, তার মামা নরসিংদী জেলার মাধবদী থানাধীন ঘোড়াদিয়া গ্রামের বাসিন্দা অশোক বণিক কুখ্যাত প্রতারক হিসেবে পরিচিত। তার মামা তার মায়ের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ধার নিয়েছিলেন। সেই টাকার সূত্র ধরে মামার সঙ্গে মায়ের দ্বন্দ্ব চলছিল। তারই ধারাবাহিকতায় তা মা খুন হতে পারে। তার মায়ের হত্যাকা-ের পেছনে তার মামার সরাসরি অথবা পরোক্ষভাবে হাত থাকা বিচিত্র নয়। এ ব্যাপারে রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জানান, ঘটনার ২০ দিন পার হয়ে গেলেও হত্যাকা-ের রহস্যের কিনারা হয়নি। বিশেষ করে লাশ উদ্ধারকালে ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকা রীতিমতো রহস্যের জন্ম দিয়েছে। বাড়িটির সামনের দিক দিয়ে কারও প্রবেশ বা বের হওয়া সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণাদি মেলেনি। আর বাড়ির পেছন দিক থেকে প্রবেশ করে চারতলায় ওঠা বা হত্যাকা- শেষে বের হওয়া যথেষ্ট দুরূহ ব্যাপার। নানা দিক পর্যালোচনা করেই হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে।
×