ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গত এক সপ্তাহে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি ॥ সাখাওয়াত

সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ইসি যে কোন ব্যবস্থা নিতে পারে ॥ আইভী

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৩০ নভেম্বর ২০১৬

সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ইসি যে কোন ব্যবস্থা নিতে পারে ॥ আইভী

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আচরণবিধির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারে না থাকলেও ভোটারদের কাছে দোয়া ও ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। আগামী ৫ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর জোরেশোরে প্রচারে নামবেন প্রার্থীরা। কিন্তু এরপরও থেমে নেই প্রার্থীরা। সবমিলিয়ে ধীরে ধীরে জমে উঠতে শুরু করেছে সিটি নির্বাচন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। এখন নগরীতে চা দোকান থেকে শুরু করে পত্রিকার আড্ডাসহ সর্বত্রই নির্বাচনী আমেজ লক্ষ্য করা গেছে। চলছে নানামুখী হিসাব-নিকাশ। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সেনা মোতায়েনের দাবি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র পদ প্রার্থী সদ্য সাবেক মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী বলেছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন যে কোন বাহিনীকে যদি তলব করে, যে কোন বাহিনীকে যদি প্রয়োজন মনে করে সেই সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের। তাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে অবশ্যই আমি একমত। এদিকে বিএনপি দলীয় মেয়র পদ প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন অভিযোগ করেছেন, তিনি গত এক সপ্তাহ আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানালেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে সেনাবাহিনীকে আবারও ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে মোতায়েনের দাবি জানান। মঙ্গলবারও মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে কৌশলে প্রচার চালিয়েছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এদিকে নির্বাচনে বিএনপির সেনা মোতায়েনের দাবি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী বলেছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন যে কোন বাহিনীকে যদি তলব করে, যে কোন বাহিনীকে যদি প্রয়োজন মনে করে সেই সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের। তাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে অবশ্যই আমি একমত। মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর শহীদনগর এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গোগনগর ইউনিয়ন কমান্ড কার্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি সেখানে গেলে মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকার লোকজন তাকে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানান। সদ্য সাবেক মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ঘরোয়াভাবে আলোচনা করতে এসেছি। আমি কীভাবে নির্বাচন করব? তাদের সঙ্গে ঘরে মতবিনিময় করব। মা-বোনদের সঙ্গেও কথা বলব। তিনি বলেন, আমি আগামী ৫ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর মাঠে নামব। তখন বলতে পারব আমার প্রতি অন্য প্রার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে কি না? তখন আমি আপনাদের জানানো ও বলব। যেহেতু আমি এখনও নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করেনি তাই এখন বলতে পারছি না। বিএনপির সেনা মোতায়েনের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন যে কোন ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে। আমি বলতে চাচ্ছি একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আমরা চাই। নারায়ণগঞ্জবাসী উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পারে এবং জয়যুক্ত করতে পারে। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনই তো শুরু হয়নি। আগে নির্বাচন শুরু হোক, তারপর আপনাদের বলব। সদ্য সাবেক মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী বলেন, আমি নারায়ণগঞ্জবাসীর ভোটের অধিকারের স্বার্থে, নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে এবং নারায়ণগঞ্জবাসী যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পারে সেই দাবি জানাচ্ছি নির্বাচনের কমিশনের কাছে। আর সেই পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এই পরিবেশকে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক রাখার জন্য ইসি যেই যাকে প্রয়োজন তাকে ডাকতে পারে। নির্বাচনের পরিবেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক আছে। এখনও পর্যন্ত কোন ঘটনা ঘটেনি আমাদের এখানে। আমি যতদূর জানি সকলে নিয়ম কানুন মেনেই এখানে কাজ করছেন। আমি মনে করি যদি নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থাকে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সকল ধরনের পদক্ষেপ নেয় তাহলে নারায়ণগঞ্জের মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেবে। বিগত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে দেবে। নারায়ণগঞ্জবাসী যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে যেতে পারে সেই প্রত্যাশা করছি। অন্যদিকে বিএনপি দলীয় মেয়র পদ প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন মঙ্গলবার সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২০, ২১ ও ২২নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেছেন। এ সময় তিনি এলাকার বিভিন্ন মসজিদে তিনি নামাজ আদায় করেন এবং মুসল্লিদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন। বিএনপি দলীয় বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে কুশলাদি বিনিময় করেন। সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য অবৈধ এবং বৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে গত এক সপ্তাহ আগে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়নি নির্বাচন কমিশন। বর্তমানে আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনী কোন ভূমিকা পালন করছে না। তাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে দরকার দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী মোতায়েন। তাই তিনি সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে মোতায়েনের দাবি জানান আবারও। এদিকে সন্ধ্যায় বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেনের মিডিয়া সেলের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দিনব্যাপী নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার সাধারণ মানুষের কাছে নির্বাচনে আমার তথা ধানের শীষের জন্য দোয়া চেয়েছি। যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। মানুষ খুবই উচ্ছ্বাসিত। শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর একটি সেতুর কথা প্রায় সকল বন্দরবাসীই দাবি করেন। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে সাখাওয়াত বলেন, স্থানীয় সাংসদ ও মেয়রের কূটকৌশলের কারণেই আপনাদের শীতলক্ষ্যা ব্রিজ হয়নি। উন্নয়নের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য ধানের শীষের প্রার্থীকে নির্বাচিত করুন। আমি কষ্ট করে হলেও একটি ব্রিজ করার চেষ্টা করব। আপনাদের এখানে সড়কে খুবই খারাপ অবস্থা, আপনারা বলেছেন আমি শুনেছি যদি নির্বাচিত হতে পারি আমি রাস্তাঘাটের উন্নয়নে কাজ করবও। সড়কে সড়কে সড়কবাতি লাগানোর ব্যবস্থা করব। খেলার মাঠের ব্যবস্থা করব। মা ও শিশুর জন্য মাতৃসেবা কেন্দ্র গড়ে তোলার চেষ্টা করব। একজন মেয়র প্রার্থীসহ বাতিল হওয়া ৭ প্রার্থীর আপীল আবেদন ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যাচাই বাছাইয়ে সিটি কর ও ব্যাংকের কাছে ঋণ খেলাপির কারণে মনোনয়ন বাতিল হওয়া মেয়র প্রার্থী সুলতান মাহমুদ ও ১ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীসহ ৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থী আপীল করেছেন। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের আপীল বিভাগে তারা এ আপীল করেন বলে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গত ২৬ ও ২৭ নবেম্বর দুই দিনব্যাপী যাচাই-বাছাইয়ে ব্যাংকের কাছে ঋণ খেলাপি, সিটি কর্পোরেশনের কর খেলাপী, নির্দিষ্ট পরিমাণ ভোটারের স্বাক্ষর না থাকা ও ত্রুটিপূর্র্ণ কাগজের জন্য মেয়র পদের একজন, সংরক্ষিত নারী আসনের একজন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদের ১৩ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এদের মধ্যে বাতিল হওয়া ১ জন মেয়র, ১ জন সংরক্ষিত নারী ও ৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র বৈধ করতে আপীল আবেদন করেছেন। আগামী ১ থেকে ৩ ডিসেম্বর আপীলের নিষ্পত্তি করা হবে। আপীল করা কাউন্সিলর প্রার্থীরা হলেনÑ ২নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী সুমি বেগম, ২নং ওয়ার্ডের সুমন কাজী, ৮নং ওয়ার্ডের দেলোয়ার হোসেন, ১৩নং ওয়াডের্র মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, একই ওয়ার্ডের শাহ্ ফয়েজউল্লা ফয়েজ ও ২০নং ওয়ার্ডের শাহেন শাহ। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা কৌশলে প্রচার চালাচ্ছেন ॥ মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা মহনগরের বিভিন্ন স্থানে প্রচার চালাচ্ছেন। পিছিয়ে নেই সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরা। মঙ্গলবার কেউ বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জে গিয়েও প্রচার চালিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা, সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদমরসুল পৌর সভা বিলুপ্ত করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয়। সাধারণ ভোটাররাও সন্ত্রাসমুক্ত নির্বাচন চাইলেন ॥ ৫নং ওয়ার্ডের ভোটার সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদুল মতিন জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন শান্তিপূর্ণ চাই। নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক। আমরা আশা করছি গত সিটি নির্বাচনে যে রকম শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারও একই রকম শান্তিপূর্ণ হবে। মানুষের মধ্যে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। ১নং ওয়ার্ডের ভোটার রেকমত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা পারভীন ফেরদৌসী জানান, ভোট হলো মানুষের নৈতিক অধিকার। অবশ্যই নিরপেক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত নির্বাচন চাই। ২৬নং ওয়ার্ডের ভোটার মহিউদ্দিন জানান, ভোট হলো আমাদের আমানত। যে যোগ্য তাকেই আমরা ভোট দেব। তবে ভোটের দিন যাতে সন্ত্রাস না হয় সেই দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে। ভোটারদের আশ্বস্ত করতে হবে যে ভোটের দিন কোন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হবে না। নির্বিঘেœ যার যার ভোট তার পছন্দের প্রার্থীকে দিতে পারে। সংরক্ষিত কাউন্সিল প্রার্থীরাও অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করেন ॥ ১৯, ২০, ২১নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর রেজওয়ানা হক সুমি জানান, আমরা অবশ্যই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কামনা করি। আশা করি ভোটের দিন কোন সন্ত্রাস হবে না। গত সিটি নির্বাচনে সুষ্ঠু হয়েছে আশা করছি এবারও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। ২২, ২৩, ২৪নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ইশরাত জাহান খান স্মৃতি জানান, আশা করি অবাধ ও নিরপক্ষে নির্বাচন হবে। আমরা বিশ্বাস করি এবারও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে। আমাদের ওয়ার্ডের এবার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আশা করি উন্নয়নের ধারাবাহিকতার আমাকে আরেকবার কাউন্সিলর পদে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।
×