ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তাজকিয়া নূর মুন

সময়ের সেরা রবিচন্দ্রন অশ্বিন

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৩০ নভেম্বর ২০১৬

সময়ের সেরা রবিচন্দ্রন অশ্বিন

রবিচন্দ্রন অশ্বিন দলে এসেছিলেন মূলত স্পিনার হিসেবে। টেলএন্ডে ভাল ব্যাট ধরতে পারতেন। তবে সেই ভালটা যে এত ভাল, সেটি আর কেই বা ভেবেছিল। টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ অলরাউন্ডার তিনি বেশ কিছু দিন ধরেই। ব্যাটে-বলে ধারাবাহিকতায় এবার জায়গা করে নিয়েছেন রেকর্ড বইয়ের দারুণ এক পাতায়। রবিচন্দ্রন অশ্বিন অর্জন করেছেন টেস্টে এক বছরে ৫০০ রান ও ৫০ উইকেটের অসাধারণ এক ‘ডাবল’। ৫০ উইকেট স্পর্শ করেছিলেন আগেই মোহালিতে ইংল্যান্ডের সেঙ্গ পাঁচ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ছাড়িয়ে গেছেন এ বছর ৫০০ রানও। দলের বিপর্যয়ে ব্যাট করতে নেমে দিনশেষে ৫৭ রানে অপরাজিত অশ্বিন। এ বছর যা ঝিল অশ্বিনের দশম টেস্ট। দ্বিতীয় দিন শেষে ৪৮.১৮ গড়ে রান ৫৩০, উইকেট নিয়েছেন ৫৬টি। সিরিজে আরও দুটি টেস্ট বাকি। ভারতের মাত্র দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন অশ্বিন। এর আগে পেরেছেন কেবল কপিল দেব। স্পিনিং অলরাউন্ডারদের মধ্যেও মাত্র দ্বিতীয় অশ্বিন। এর আগে পেরেছিলেন ড্যানিয়েল ভেটোরি। সব মিলিয়ে এই ডাবল টেস্ট ক্রিকেট দেখেছে ১০ বার। তবে অর্জন করেছেন ৭ জন অলরাউন্ডার। কপিল, ইয়ান বোথাম ও শন পোলক করেছেন দুবার করে। প্রথম এই কীর্তি গড়েছিলেন ইয়ান বোথাম। ১৯৭৮ সালে ১২ টেস্টে ৫৯৭ রান করেছিলেন ইংলিশ কিংবদন্তি, উইকেট নিয়েছিলেন ৬৬টি। ১৯৮১ সালে ৬২৯ রান করেছিলেন ১৩ টেস্টে, উইকেট ৬২টি। কপিল ১৯৭৯ সালে ১৬ টেস্টে করেছিলেন ৬১৭ রান, উইকেট নিয়েছিলেন ৭৪টি। ভারতীয় গ্রেট পরে ১৯৮৩ সালে ১৮ টেস্ট খেলে করেছিলেন ৫৭৯ রান, উইকেট নিয়েছিলেন ৭৫টি। শন পোলক করেছিলেন ১৯৯৮ সালে ও ২০০১ সালে। প্রথমবার ১৪ টেস্টে ছিল ৫৯৩ রান, ৬৯ উইকেট। সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক পরের দফায় ১৩ টেস্টে নিয়েছিলেন ৫৫ উইকেট, রান ছিল ৫৭৩। এক পঞ্জিকাবর্ষে ৫০ উইকেট নেয়ার পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড এ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের। ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডকে এ্যাশেজ জেতানোর বছরে ১৪ টেস্টে রান করেছিলেন ৭০৯, উইকেট নিয়েছিলেন ৬৮টি। ২০০৮ সালে প্রথম স্পিনার হিসেবে এই ডাবল করে দেখিয়েছিলেন ভেটোরি। ১৪ টেস্টে নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক করেছিলেন ৬৭২ রান, নিয়েছিলেন ৫৪ উইকেট। অশ্বিনের আগে সবশেষ এই কীর্তি ছিল মিচেল জনসনের। অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার ২০০৯ সালে ১৩ টেস্টে করেছিলেন ঠিক ৫০০ রান, উইকেটি ছিল ৬৩টি। চলতি টেস্টের পরও এই সিরিজে থাকবে আরও দুটি টেস্ট। রান ও উইকেট, দুটিতেই নিজেকে এই তালিকার শীর্ষে তুলতেই পারেন র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ অলরাউন্ডার! অধিনায়ক কোহলি বলেন, ‘বল হাতে অশ্বিন বরাবরই দারুণ। এখন প্রয়োজনে ব্যাট হাতেও যা করছে তার জন্য কোন প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। মোহালি টেস্টের প্রথম ইনিংসের হাফ সেঞ্চুরির মধ্য দিয়ে দেখতে দেখতে টেস্টে ১ হাজার রানের মালিক বনে গেছেন অশ্বিন। যার মধ্যে রয়েছে ২ সেঞ্চুরি ও ৬টি হাফ সেঞ্চুরি। ‘সত্যি বলের পর ব্যাট হাতেও সে ভরসার নাম হয়ে উঠেছে।’ যোগ করেন টেস্ট অধিনায়ক কোহলি। গত আগস্টের কথা। শ্রীলঙ্কার মাটিতে দীর্ঘ বাইশ বছর পর টেস্ট সিরিজ জেতে ভারত। সেখানে প্রথম টেস্টের ইনিংসে স্বাগতিকদের ১৮৩ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। অশ্বিন একাই নের ৬ উইকেট। অথচ দলে ছিলেন অভিজ্ঞ হরভজন সিং এবং অপর বিশেষজ্ঞ স্পিনার অমিত মিশ্র। তিন স্পিনারের সঙ্গে দুই পেসারÑ পাঁচ বোলার নিয়ে মাঠে নেমেছিল অধিনায়ক বিরাট কোহলি। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা মূলত তিন স্পিনারের মধ্যে। তবে অন্যকে নয়, বরং নিজেকেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মন্তব্য করেন আলো ছাড়ানো অশ্বিন। ‘বার বার হরভজন সিংয়ের দলে ফিরে আসাটা আমার জন্য বাড়তি মোটিভেশন কি না? এমন প্রশ্ন শুনতে হলেও আমার কাছে উত্তরটা সবসময় এক। ভাজ্জি (হরভজন) ভারতীয় ক্রিকেটের একজন চলমান কিংবদন্তি। আমির অনেক পরে শুরু করেছি। তাই আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমার নিজের সঙ্গে। নিজের জন্য যে লক্ষ্য ঠিক করি, সেটিই বড় কথা। কখনোই কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি না।’ এন শ্রীনিবাসনের জামানায় অশ্বিনের বেড়ে ওঠা, পেয়েছেন ক্যাপ্টেন কূল মহেন্দ্র সিং ধোনির অকৃতিম স্নেহ। হয়েছেন আইপিএলে তার দল চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচ-উইনার। সুতরাং তার কথায় বাড়তি আত্মবিশ্বাস ফুটে ওঠাটা স্বাভাবিক! নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীÑ ধারণায় অশ্বিনের আত্মবিশ্বাসটাকে ঔদ্ধত্য মনে হতে পারে। তবে অশ্বিন কিন্তু বিনয়ী। তিনি আরও যোগ করেন, ‘ভাজ্জি শ্রদ্ধাভাজন, আমি ব্যক্তিগতভাবে ওকে পছন্দ করি। এদিন হয়ত উইকেট পায়নি। একপ্রান্তে আমি নিয়মিত ভাল করায়, তার জন্য সুযোগটাও কম ছিল। এটা মাথায় রাখতে হবে। তাঁকে তার মতো খেলতে দিতে হবে।’ ১০৩ টেস্টে ৪১৭ উইকেট হরভজনের, ভারতীয় ইতিহাসে তার চেয়ে বেশি উইকট আছে কেবল অনিল কুম্বলে (৬১৯) ও কপিল দেবের (৪৩৬)। দীর্ঘ বিরতির পর গত বছর বাংলাদেশ সফরে যখন পুনরায় দলে ডাক পান, অনেকেই বিষয়টিকে অশ্বিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে দেখছিলেন। ফতুল্লায় পরিত্যক্ত সেই ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন অশ্বিন। গল টেস্টেও সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখে বিদেশের মাটিতে টানা দুই ম্যাচে পাঁচ বা ততোধিক উইকেট তুলে নেন ৩০ বছর বয়সী ডানহাতি অফস্পিনার। মাত্র ৪১ টেস্টেই ২৩১ উইকেট শিকারি (মোহালি টেস্টর আগে পর্যন্ত) অশ্বিন বলেন, ‘এর আগেও পরপর দুই টেস্টে ৫ উইকেট পেয়েছি। ব্যক্তিগত মাইলস্টোনের কথা মাথায় রাখি না। উপমহাদেশে স্পিনারদের জন্য ধারাবাহিকতা রক্ষা করা বড় চ্যালেঞ্জ।’ সাফল্যের পেছনে মেন্টর রবি শাস্ত্রী এবং বোলিং কোচ ভরত অরুনের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতার কথাও বলেন অশ্বিন। তিনি আরও যোগ করেন,‘ মাঠে নতুন কিছু নিয়ে আপনি ভাবতেই পারেন। কিন্তু সেটাকে করে দেখানোর জন্য কারও পাশে থাকাটা জরুরী। এদিক দিয়ে শাস্ত্রী-ভরতের কাছে কৃতজ্ঞ।’ সাবেক লঙ্কান তারকা মাহেলা জয়বর্ধনে যেমন বলেন, ‘গত ১০ বছরে শ্রীলঙ্কার মাটিতে কোন বিদেশী স্পিনারের সেরা বোলিং। অশ্বিন একাই মোড় ঘুড়িয়ে দিতে সক্ষম। যার সৌজন্যে শেষ পর্যন্ত ভারত যে কোন সিরিজও জিততে পারে!’
×