ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর মোট শাখা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫১৫টি

গ্রামের তুলনায় শহরে বাড়ছে বেসরকারী ব্যাংকের শাখা

প্রকাশিত: ০৫:১১, ৩০ নভেম্বর ২০১৬

গ্রামের তুলনায় শহরে বাড়ছে বেসরকারী ব্যাংকের শাখা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে বেসরকারী ব্যাংকগুলো সর্বমোট ১০৫টি নতুন শাখা খুলেছে। কিন্তু এর মধ্যে শহরে খুলেছে ৫৯টি, গ্রামে ৪৬টি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন না দিলে কোন ব্যাংক নতুন শাখা খুলতে পারে না। অর্থাৎ নতুন শাখা খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোতে যে অনিয়ম ঘটছে, সেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনসাপেক্ষেই। জানা গেছে, এক সময় গ্রামের তুলনায় শহরে কয়েকগুণ বেশি শাখা খুলত বেসরকারী ব্যাংকগুলো। তবে ২০০৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক নির্দেশনায় বেসরকারী ব্যাংকের শহরাঞ্চলে চারটি শাখার বিপরীতে গ্রামাঞ্চলে অন্তত একটি শাখা খোলার নির্দেশনা দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শহরে দুটি শাখার বিপরীতে গ্রামে একটি শাখা খুলতে বলা হয়। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে অপর এক নির্দেশনার আলোকে গ্রাম-শহরে সমান শাখা খুলতে হচ্ছে। এছাড়া এখন বিভাগ ও জেলা শহরের পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভা এলাকায় স্থাপিত শাখাকেও শহর শাখা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, গ্রামাঞ্চলে ব্যাংকের শাখা বাড়াতে একটি নীতিমালা রয়েছে। তবে ব্যাংকের ধরনভেদে এতে কিছুটা শৈথিল্যও রয়েছে। নতুন শাখা খোলার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন দেয়। অনুমোদন দেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শহরে ও গ্রামে শাখার অনুপাত, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাব্যতা, সম্ভাব্য সেবাগ্রহীতা, শাখা শহরে অবস্থিত হলেও ওই শাখার মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সেবা গ্রহণের সম্ভাব্যতা ইত্যাদি বিষয় যাচাই-বাছাই করা হয়। তিনি জানান, বছরজুড়েই ব্যাংকগুলো শাখা খুলছে। অনেক ব্যাংক আগে শহরে পরে গ্রামে শাখা খোলে, যার ফলে এখন শহর-গ্রামে শাখার অনুপাতে তারতম্য থাকলেও বছর শেষে তা অনেকটা কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরও জানান, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সব পর্যায়ের মানুষের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর মোট শাখা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫১৫টি। গত ডিসেম্বরে মোট শাখার পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৩৯৭টি। এই নয় মাসের ব্যবধানে সরকারী-বেসরকারী ব্যাংক মিলিয়ে সারাদেশে নতুন ১১৮টি শাখা খুলেছে। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে খোলা হয়েছে ৬০টি। বাকি ৫৮টি শাখা খোলা হয়েছে গ্রামে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর শহরে শাখা রয়েছে ৪ হাজার ১২৩টি আর গ্রামে ৫ হাজার ৩৯২টি। সরকারী ব্যাংকগুলোর বেলায় অবশ্য গ্রামে শাখা খোলার হারই বেশি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলোর মোট শাখা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৩১টি। এরমধ্যে গ্রামে ১ হাজার ৭৬০টি এবং শহরে ২ হাজার ৫৭১টি। ডিসেম্বরে এ খাতের ব্যাংকগুলোর ৪ হাজার ২২৬টি শাখার মধ্যে গ্রামে ছিল ১ হাজার ৭১৪টি আর শহরে ২ হাজার ৫১২টি। বেসরকারী খাতের একমাত্র ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শহরের তুলনায় গ্রামে শাখা বেশি। ব্যাংকটির গ্রামের শাখা ৭৬টি এবং শহরের শাখা ৭৫টি। এটি ছাড়া অন্য সব ব্যাংকের শহর ও গ্রামের শাখার ব্যবধান অনেক বেশি। উত্তরা ব্যাংকের ২২৪টির মধ্যে মাত্র ৬৩টি, এবি ব্যাংকের ৯৯টির মধ্যে ৩১টি, সিটি ব্যাংকের ১১৯টির মধ্যে ৩১টি, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ৩৩টির মধ্যে ৪টি গ্রামে অবস্থিত। চতুর্থ প্রজন্মের নতুন ৯টি ব্যাংক অনুমোদনপ্রাপ্তির পূর্বশর্ত ছিল, কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এ খাতে ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ৫ শতাংশ দেয়ার শর্তও রয়েছে। কিন্তু শাখা খোলার ক্ষেত্রে সাধারণ নিয়ম মানছে না নতুন ব্যাংকগুলো। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নতুন ৯টি ব্যাংকের মোট শাখা খোলা হয়েছে ৩২৪টি। এর মধ্যে শহরে ১৬৯টি, গ্রামে ১৫৫টি। চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সাউথ বাংলা এ্যাগ্রিকালচার এ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের শহরের তুলনায় গ্রামে শাখা বেশি। ব্যাংকটির মোট ৫৩টি শাখার মধ্যে ২৭টি গ্রামে। সরকারী মালিকানাধীন ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট শাখা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭০৬টি। ডিসেম্বরে ছিল ৩ হাজার ৬৯০টি। চলতি বছরের নয় মাসে ১৬টি নতুন শাখা খোলা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রামে খোলা হয়েছে ১১টি আর শহরে খোলা হয়েছে ৫টি। সেপ্টেম্বরে সরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর গ্রামের শাখা ২ হাজার ৩৩৫টি এবং শহরে ১ হাজার ৩৭১টিতে দাঁড়িয়েছে। সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের গ্রামের শাখা অনেক বেশি। কিন্তু বেসিক ব্যাংকের ৬৮টি শাখার মধ্যে গ্রামে ২২টি এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ৩৯টি শাখার মধ্যে মাত্র ১১টি গ্রামে অবস্থিত। আলোচ্য সময়ে বিদেশী ব্যাংকগুলো নতুন শাখা খোলেনি, উল্টো ৪টি শাখা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে শাখা খোলার সর্বশেষ নিয়মনীতি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে অনুযায়ী যে কোন ব্যাংকের ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামে শাখা খোলার অনুপাত ১:১ করা হয়। এরও আগে এ অনুপাত ছিল যথাক্রমে ২:১।
×