ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বরিশালকে ৮ উইকেটে হারাল মাশরাফির দল

কুমিল্লার বিলম্বিত ভেল্কি

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৩০ নভেম্বর ২০১৬

কুমিল্লার বিলম্বিত ভেল্কি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রদীপ নিভে যাওয়ার আগে দপ করে জ্বলে ওঠে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অবস্থাও কী সেইরকমই হলো? হারলেই ৩ ম্যাচ হাতে রেখেই বিপিএল থেকে নিশ্চিত বিদায় ঘটে যেত। কিন্তু বরিশাল বুলসকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে বিদায় পর্ব আপাতত ঠেকালো কুমিল্লা। ম্যাচে টস জিতে বরিশাল আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। ৮ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৪২ রান করে। শুরুতে মুশফিকুর রহীম ২৯, জীবন মেন্ডিস ২৮ রান করেন। শেষে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে এনামুল হক অপরাজিত ২০, আবু হায়দার রনি অপরাজিত ১৬ ও তাইজুল ইসলাম ১৪ রান করেন। নাবিল সামাদ ভাল বোলিং করে ৩ উইকেট তুলে নেন। জবাবে আহমেদ শেহজাদের ৬১, ইমরুল কায়েসের ৪৬ ও মারলন স্যামুয়েলসের অপরাজিত ২৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে এক ওভার হাতে রেখেই ১৪৫ রান করে জিতে যায় কুমিল্লা। যে কুমিল্লা টানা ৫ ম্যাচে হারের সঙ্গে ৭ ম্যাচের মধ্যে ৬টিতেই হেরেছিল, তারাই কিনা বরিশালকে পাত্তাই দিল না। বরিশালের করা ১৪২ রান সহজেই অতিক্রম করে ফেলল। তাও আবার মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নিল। একটা সময়তো মনে হচ্ছিল, দুই ওপেনার ইমরুল ও শেহজাদই ম্যাচ জিতিয়ে দেবেন। কিন্তু ৯৩ রানে গিয়ে ইমরুল আউট হয়ে যান। এরপর মনে হচ্ছিল আর কোন উইকেটই পড়বে না। কিন্তু ১২০ রানে শেহজাদের দুর্দান্ত ক্যাচটি ধরেন মুশফিক। আর কোন উইকেটই পড়েনি। স্যামুয়েলস ও খালিদ লতিফ (৭*) মিলেই ম্যাচ জিতিয়ে দেন। কুমিল্লার মতো এত ভাল শুরুটা বরিশালের হয়নি। বরিশাল শুরুতেই বিপদে পড়ে। দলের ৮ রানের সময়ই শ্রীলঙ্কান দিলশান মুনাবিরাকে আউট করে দেন পেসার শাহাদাত হোসেন রাজিব। এরপর ডেভিড মালান ও জীবন মেন্ডিস মিলে কিছুটা এগিয়ে যান। ৩৪ রানের জুটি গড়েন তারা। যেই ৪২ রানে মেন্ডিস (২৮) আউট হয়ে যান, বরিশালের ব্যাটিংয়ে ছন্দপতন ঘটে যায়। ৯২ রানেই ৭ উইকেটের পতন ঘটে যায়। শুরুতে এত দুর্দান্ত খেলেও এমন বিপত্তিতে বরিশালের বেশিদূর এগিয়ে যাওয়ার কথা না। মুশফিক, শাহরিয়ার দুর্দান্ত খেলছেন। মুশফিক ২৯ রান করে আউট হলেও শাহরিয়ার ১১ রানের বেশি করতে পারেননি। তাতে দলও বিপাকে পড়ে। কিন্তু শেষদিকেই বরিশাল আবার দুর্দান্ত খেলা উপহার দেয়। এনামুল হক ও তাইজুল ইসলাম অসাধারণ ব্যাটিং করে দলকে ১২০ রানের কাছাকাছি নিয়ে যান। ১১৭ রানে গিয়ে তাইজুল (১৪) আউট হন। তখনও মনে করা হয়, হাতে থাকা ৮ বলে আর ১০ রানই হয়ত করতে পারবে বরিশাল। কিন্তু পেসার আবু হায়দার রনি যেন ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠেন। দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে দেন। তাতে করে বরিশাল ১৪২ রানে পৌঁছে যায়। এনামুল ১৫ বলে অপরাজিত ২০ রান করেন। আর রনি ৬ বলেই ১৬ রান করে অপরাজিত থাকেন। দু’জন মিলে দ্রুতই ৮ বলে অবিচ্ছিন্ন ২৫ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। তাতেই বরিশাল জয়ের ভিত পেয়ে যায়, এমনটিই মনে করা হয়েছিল। কুমিল্লা যে টুর্নামেন্টে খারাপ খেলছে। কিন্তু সেই ধারণা এবার পাল্টে গেল। ম্যাচটিতে খেলতে নামার আগে পয়েন্ট তালিকায় দুই দলের অবস্থাই বেহাল ছিল। বরিশাল ৯ ম্যাচে তিন জয় নিয়ে ৬ পয়েন্ট পেয়ে ষষ্ঠ স্থানে ছিল। আর কুমিল্লা ৮ ম্যাচ খেলে ১ জয়ে ২ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে ছিল। বরিশাল হারলেও সেরা চারে খেলার ক্ষীণ সুযোগ থাকত। কিন্তু কুমিল্লা হারলেই বিদায় নিত। এমন ম্যাচে বরিশাল হেরেও সেরা চারে খেলার সুযোগ জিইয়ে রাখল। আর কুমিল্লা জিতে বিদায় পর্ব ঠেকাল। এ মুহূর্তে কাগজে-কলমে কুমিল্লারও সেরা চারে খেলার সুযোগ আছে। ৯ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট পেয়েছে কুমিল্লা। তবে আরেকটি ম্যাচে হারলেই বিদায় ঘটবে। বরিশালেরও একই অবস্থা। আরেকটি ম্যাচে হারলেই বিদায় ঘণ্টা বাজবে। দুই দলই আবার নিজ নিজ অবস্থানেও বজায় আছে। প্রথম লেগে কুমিল্লাকে ৬ উইকেটে হারিয়েছিল বরিশাল। এবারও জয়ের সম্ভাবনা জাগায়। শেষ পর্যন্ত জয় আর তুলে নিতে পারেনি। কুমিল্লা প্রতিশোধ নিল। শেষ বেলায় যেন জ্বলে উঠল। স্কোর ॥ বরিশাল বুলস-কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ম্যাচ- টস ॥ বরিশাল (ব্যাটিং)। বরিশাল ইনিংস ১৪২/৮; ২০ ওভার (মুনাবিরা ৭, মালান ৯, মেন্ডিস ২৮, মুশফিক ২৯, শাহরিয়ার ১১, নাদিফ ০, এনামুল ২০*, রুম্মন ৪, তাইজুল ১৪, রনি ১৬*; নাবিল সামাদ ৩/১৭)। কুমিল্লা ইনিংস ১৪৫/২; ১৯ ওভার (ইমরুল ৪৬, শেহজাদ ৬১, স্যামুয়েলস ২৭*, খালিদ ৭*)। ফল ॥ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ নাবিল সামাদ (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স)।
×