ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় হকি দলের অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমি;###;হংকংয়ে এএইচএফ কাপ হকিতে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরল বাংলাদেশ দল

‘অধিনায়ক হিসেবে আমার সেরা অর্জন’

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ৩০ নভেম্বর ২০১৬

‘অধিনায়ক হিসেবে আমার সেরা অর্জন’

রুমেল খান ॥ ‘আমার অধিনায়কত্বে এটা বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলের দ্বিতীয় শিরোপা। এর আগে ২০১২ এএইচএফ কাপেও অধিনায়ক ছিলাম। ওই আসরেই ২০০৮ চ্যাম্পিয়ন দলেরও সহ-অধিনায়ক ছিলাম। তবে গুরুত্বের বিচারে ২০১৬ সালের শিরোপাটাই আমার কাছে সেরা অর্জন।’ কথাগুলো রাসেল মাহমুদ জিমির। বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলের তারকা ফরোয়ার্ড এবং অধিনায়ক তিনি। তার নেতৃত্বেই হংকংয়ে সদ্যসমাপ্ত ‘এএইচএফ কাপ’ হকি আসরে দাপটের সঙ্গে খেলে হ্যাটট্রিক এবং অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, এই জয়ে আগামী এশিয়া কাপ হকির মূলপর্বেও খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে লাল-সবুজের বাংলাদেশ। সাফল্যের ঝা-া উড়িয়ে বীরের মতো দেশে ফিরলেন জিমিরা সোমবার দিবাগত রাত ২টায়। তাদের এই উদ্ভাসিত সাফল্যে উদ্বেলিত গোটা জাতি। আকাশ থেকে মাটিতে নামার কথা ছিল সোমবার দিবাগত রাত ১২টায়। কিন্তু অনাকাক্সিক্ষতভাবে দুই ঘণ্টা বিলম্বিত হয় উড়ালপঙ্খীর যাত্রা। সরাসরি হংকং থেকে ঢাকা আসতে সময় লাগে চার ঘণ্টা। কিন্তু জিমিদের আসতে হয়েছে মালয়েশিয়ায় যাত্রা বিরতি (ট্রানজিট) করে। ফলে তাদের সময় লাগে ১২ ঘণ্টা। এ প্রসঙ্গে জিমির স্বগতোক্তি, ‘বুঝতেই পারছেন দীর্ঘ ভ্রমণের ফলে সবার শরীর দারুণ ক্লান্ত। কিন্তু মানসিকভাবে কোন ক্লান্তি নেই। বরং উজ্জীবিত ছিলাম। কারণ আমরা অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। পূরণ করতে পেরেছি দেশবাসীর প্রত্যাশা। এটাই তৃপ্তির।’ গত রবিবার হংকংয়ের কিংস পার্ক হকি স্টেডিয়ামে ফাইনালে খেলার শুরু থেকেই প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে খেলার চেষ্টা করে বাংলাদেশ। লক্ষ্য ছিল শুরুতেই গোল করে শ্রীলঙ্কাকে চাপে রাখা। দলনায়ক জিমির ভাষ্য, ‘কিন্তু বারবার আক্রমণ করেও গোল না পাওয়াতে উল্টো আমরাই চাপে পড়ে যাই। পরে প্রথম গোলটি পেয়ে অনেকটাই নির্ভার হয়ে যাই।’ হংকং যাবার আগে জিমি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। তবে সেটা হতে পারেননি। এমনকি ফাইনালেও গোল করতে পারেননি। এ প্রসঙ্গে জিমির ব্যাখ্যা, ‘আমাকে আটকাতে দু’জন মার্কার ছিল, যারা সারাক্ষণ আমার পিছু লেগে ছিল।’ ফাইনালের আগে জিমিদের কি মেসেজ দিয়েছিলেন জার্মান কোচ অলিভার কার্টজ? ‘বলেছিলেন যেভাবে তোমাদের অনুশীলন করিয়েছি এবং পরিকল্পনা করেছি, সে অনুযায়ী খেলতে পারলে ও সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে তোমরাই জিতবে। আমাদের সবার আত্মবিশ্বাস ছিল আমরাই জিতব। তবে আরও গোলের সুযোগ নষ্ট না করলে আমরা ৭-৮ গোলেও জিততে পারতাম।’ জিমির জবাব। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি গোল (৩২) করেছে। সবচেয়ে কম গোলও হজম করে (৪টি)। বাংলাদেশের আশরাফুল ইসলাম হয়েছেন সর্বোচ্চ গোলদাতা (৯টি)। জিমি করেন ৪ গোল। এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য, ‘সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে পারিনি বলে মোটেও দুঃখ নেই। কেননা সবসময়ই ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। দেশের সাফল্য সবার আগে। টুর্নামেন্টে আমরা খেলেছি ম্যাচ বাই ম্যাচ। একেক ম্যাচের মেজাজ ছিল একেক রকম। তবে পিসি গোল নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। যেভাবে ও যতগুলো পিসি গোল করতে চেয়েছিলাম, তার অধিকাংশই করতে পেরেছে দল।’ ফাইনালে জিমিদের সমর্থন দিতে স্টেডিয়ামে এসেছিল প্রায় ৫০০ প্রবাসী বাংলাদেশী। তারাই স্টেডিয়ামের গ্যালারিগুলো দখল করে রেখেছিলেন। চ্যাম্পিয়ন হবার পর তারা জিমি-চয়ন-মিমো-আশরাফুল-অসীমদের যেভাবে অভিনন্দন জানান এবং খেলোয়াড়দের সঙ্গে সেলফি ওঠান, সেই সুখস্মৃতি জিমিদের হৃদয়ের মণিকোঠায় চিরকাল সযতেœ সংরক্ষিত থাকবে। খেলা শেষে হোটেলে ফিরেও জিমিরা আনন্দ উদযাপন করেন। সবাই মিলে নেচেছেন ‘চ্যাম্পিয়ন’ গানের সুরে। নিজেদের গ্রুপে প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক হংকংকে ৪-২ গোলে হারায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে চাইনিজ তাইপেকেও হারায় একই ব্যবধানে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে ম্যাকাওকে ১৩-০ গোলে শোচনীয়ভাবে হারিয়ে অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় লাল-সবুজরা। শেষ চারের দ্বৈরথে সিঙ্গাপুরকে হারায় ৮-০ গোলে। এরপর ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে ৩-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জেতে।
×