ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্দোনেশিয়া সফর বাতিল ॥ সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে উভয় সঙ্কট

রোহিঙ্গা নিয়ে চাপের মুখে সুচি

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ৩০ নভেম্বর ২০১৬

রোহিঙ্গা নিয়ে চাপের মুখে সুচি

মিয়ানমার নেত্রী আউং সান সুচি রোহিঙ্গা মুসলিম নির্যাতন নিয়ে তার ওপর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সোমবার তার ইন্দোনেশিয়া সফর স্থগিত করেছেন। এর আগে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর নতুন করে দমন অভিযান শুরু হলে ইন্দোনেশিয়ায় বিক্ষোভ দেখানো হয়। মিয়ানমারে সহিংসতা বেড়ে গেলে বেশ কিছু লোক নিহত হয় এবং এতে সামরিক বাহিনীর ওপর তার ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা প্রকাশ পায়। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের। মিয়ানমারের পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র কাইয় জায়া বলেন ইন্দোনেশিয়ার বিক্ষোভের কারণেই সুচি তার সফর বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেন। সোমবারই সেই সফর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ সম্প্রতি ইসলামিক স্টেটের কয়েকজন কথিত সমর্থককে গ্রেফতার করলে উত্তেজনার মাত্রা বেড়ে যায়। তারা জাকার্তার মিয়ানমার দূতাবাসসহ কয়েকটি ভবনে বোমা হামলার পরিকল্পনা করছিল বলে সন্দেহ করা হয়। পুলিশ এ কথা জানায়। ইন্দোনেশিয়ার বেশির ভাগ লোকের মতো রোহিঙ্গারাও মুসলিম। গত অক্টোবরে শুদ্ধি অভিযান শুরু হওয়ার পর রাখাইন রাজ্যের উত্তর অঞ্চল থেকে শত শত মানুষ পালিয়ে যায়। এর আগে একদল রোহিঙ্গা জঙ্গী ওই এলাকার নিরাপত্তা ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে নয় পুলিশকে হত্যা ও অস্ত্রশস্ত্র লুট করে। ত্রাণ সংস্থা ও সাংবাদিকদের জন্য ওই এলাকায় যাওয়া নিষিদ্ধ। সেখানে দেড় লাখেরও বেশি লোক এখন খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা ছাড়াই দিন কাটাছে। আর মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনী তাদের ভাষায় ‘পরিষ্কারকরণ অভিযান’ অব্যাহত রেখেছে। এতে অন্তত ৬৯ বিদ্রোহী নিহত হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানায়। ২০১২ সালে বৌদ্ধ উন্মত্ত জনতা রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালানোর পর এখন পরিস্থিতি খুবই শোচনীয়। রাখাইনে ১১ লাখ রোহিঙ্গার বাস। মিয়ানমারে তাদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা ছাড়াও তাদের চলাফেরা ও কাজ করার ওপর বাধা নিষেধ রয়েছে। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র জা তে চলতি মাসে রোহিঙ্গা জঙ্গীদের মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক খ্যাতি বিনষ্ট করতে তাদের নিজেদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়ার দায়ে অভিযুক্ত করেন। সৈন্যরা রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করছে- রোহিঙ্গা মানবাধিকার কর্মীদের এমন অভিযোগ মুখপাত্র অস্বীকার করেন। তিনি বলেন যে, যদি বিদ্রোহীরা ফাঁড়িতে হামলা এবং অস্ত্রশস্ত্র লুট করত, তবে অন্য যে কোন দেশই ব্যবস্থা নিত। সুচি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট নন, স্টেট কাউন্সেলর হিসেবে কাজ করেন। তিনি এক সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। চলতি মাসে জাপানে তিনি বলেন, সব তথ্য না জানা পর্যন্ত দোষারোপ করা উচিত নয়। কোন কোন আন্তর্জাতিক গবেষক বলছেন, সুচির নীরবতাই মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে গ্রাম জনশূূন্য করতে ও জ্বালিয়ে দেয়ার অবাধ সুযোগ করে দিচ্ছে। সমগ্র রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করাই এর উদ্দেশ্য। বাস্তবতা হলো, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী সুচি এক ঐতিহাসিক নির্বাচনের পর গত বছর ক্ষমতায় এলেও এখনও বাধা নিষেধের মুখে রয়েছেন। মিয়ানমারের নতুন সংবিধান অনুযায়ী সেনাবাহিনী প্রতিরক্ষা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রেখেছে। এর অর্থ হলো তার সরকারকে অবশ্যই সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগ করে নিতে হবে। এতে তিনি এক উভয় সঙ্কটে পড়েছেন : তিনি রোহিঙ্গাদের প্রতি তার সাবেক বন্দীকর্তাদের আচরণ সম্পর্কে নিশ্চুপ থেকে অবনতিশীল মানবিক সঙ্কটের সম্মুখীন হবেন, না এর বিরুদ্ধে কথা বলে সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে তার গড়ে তোলা কাজের সম্পর্ক বিনষ্ট করার ঝুঁকি নেবেন। কোন কোন বিশ্লেষক উল্লেখ করেন যে, সুচি ও সেনাবাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক সুবিধাজনক সম্পর্ক বিদ্যমান। তার কার্যকরভাবে শাসন করার জন্য সেনাবাহিনীর প্রয়োজন রয়েছে, আর সেনাবাহিনীরও নিজেদের বিশ্বের অবশিষ্টাংশের কাছে বৈধ প্রতিপন্ন করতে সুচির দরকার রয়েছে। মিয়ানমার বিষয়ক বিশ্লেষক ও ইয়াংগুনভিত্তিক পরামর্শক রিচার্ড হরসি একথা বলেন। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যাওয়ার রাজনৈতিক দিক দিয়েও অজনপ্রিয় প্রমাণিত হতে পারে। মিয়ানমারে মুসলিমবিরোধী অনুভূতি খুবই প্রবল। বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরা এ অনুভূতি উস্কে দিচ্ছে। ইসলাম খুবই দ্রুত দেশটিতে প্রভাব বিস্তার করছে বলে তারা যুক্তি দেখায়। ৯ অক্টোবরে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার পর তারা আরও উচ্চকণ্ঠ হয়ে ওঠেন।
×