ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুসান্না সাজ্জিল

‘হার্ভার্ড থেকে ঝরে পড়া সবচেয়ে সফল’

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৯ নভেম্বর ২০১৬

‘হার্ভার্ড থেকে ঝরে পড়া সবচেয়ে সফল’

‘বাবা, আমি তোমাকে সব সময় বলেছি, আমি ফিরে আসব, ডিগ্রী অর্জন করব’। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি অপেক্ষা করছি এই একটি কথা বলার জন্য। অবশেষে আমার জীবনবৃত্তান্তে একটি কলেজ ডিগ্রী যুক্ত হলো। ব্যাপারটা দারুণ। আজকের ডিগ্রী অর্জনকারীরা আমার চেয়ে সোজা পথে হেঁটে তা অর্জন করেছেন। এ জন্য তাঁদের অভিনন্দন। দৈনিক ক্রিমসন যে আমাকে ‘হার্ভার্ড থেকে ঝরে পড়া সবচেয়ে সফল’ ব্যক্তি বলে আখ্যায়িত করেছে, এতেই আমি খুশি। আমার মনে হয়, এই শব্দগুচ্ছ আমার সমগোত্রীয়দের মধ্যে আমাকে বিশেষ মর্যাদায় আসীন করেছে...। যাঁরা ফেল করেছেন, তাঁদের মধ্যে আমি সবচেয়ে ভাল করেছি। কিন্তু আমি চাই, লোকে বলুক যে আমার কারণেই স্টিভ বালমার ঝরে পড়েছিলেন। আমার প্রভাব ‘অশুভ’। এ জন্য হয়ত আপনাদের সমাবর্তনে আমাকে বক্তৃতা দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আপনাদের নবীনবরণের দিনে আমি বক্তৃতা দিলে হয়ত এখানকার অনেকেই আজ এখানে থাকতেন না। আমার কাছে হার্ভার্ড এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। শিক্ষাজীবনটা ছিল আকর্ষণীয়। এমন অনেক ক্লাসে উপস্থিত হতাম, যেগুলো আমার ছিল না। ডরমিটরির জীবন ছিল দারুণ। সবাই জানতেন, সকালে ঘুম থেকে ওঠার তাড়া নেই আমার; তাই গভীর রাত অবধি বহুজন নানা বিষয়ে আলাপ জমাতেন আমার ঘরে। এমন করে আমি ‘অসামাজিক’ একদল ছাত্রের নেতা বনে গেলাম। বন্ধুরা এতক্ষণ নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমি কার কথা বলছি আরও একটু খোলাসা করে বললে তৎকালীন বিখ্যাত আইনজীবী উইলিয়াম হেনরি গেটস ও ম্যাক্সওয়েলে গেটসের দ্বিতীয় সন্তান হলেন বিল গেটস। তাদের আরও দু’জন কন্যা সন্তান রয়েছে। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হওয়া বিল গেটস পরবর্তীতে অধিষ্ঠিত হন বিশ্বের সেরা ধনী হিসেবে। একাধারে ১৩ বছর তিনি পৃথিবীর সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি ছিলেন। ছাত্রজীবনে বিল বেশ মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। তার পিতামাতার ইচ্ছা ছিল তাকে আইনজীবী বানানোর। ১৬ বছর বয়সে লেকসাইড স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার সময় ১৬০০ নম্বরের মধ্যে ১৫৯০ নম্বর পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। পরবর্তীতে ভর্তি হন হার্ভার্ড কলেজে। বিল গেটস তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পুরোপুরি গ্রহণ না করেই ব্যবসায় নেমে গিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে স্কুলের বন্ধু পল এ্যালেনকে নিয়ে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেন বিল গেটস, যা পার্সোনাল কম্পিউটিংয়ে বিপ্লব ঘটিয়ে দেয় ও সফটওয়্যার বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে। নিজে বিশ্বের শীর্ষ ধনী হিসেবেও প্রতিষ্ঠা পান বিল গেটস। নিজের মেধা ও বুদ্ধিমত্তার জোরেই প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফটের এই প্রতিষ্ঠাতা নিজেকে এই সব অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। প্রথম যে কম্পিউটার প্রোগ্রামটি বিল গেটস তৈরি করেছিলেন, তা ছিল কাটাকুটি খেলার একটি গেম। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিল গেটস তাঁর শিক্ষকদের বলেছিলেন, ৩০ বছর বয়সে তিনি মিলিয়নিয়ার হবেন। প্রসঙ্গত, তিনি ৩১ বছর বয়সে বিলিয়নিয়ার হন! বিল গেটস হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যাওয়ার ৩৩ বছর পর ২০০৭ সালের ৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ফিরে আসেন ডিগ্রী অর্জনকারীদের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণ দেয়া এবং একটি সম্মানসূচক ডিগ্রী গ্রহণের জন্য। তাঁর ভাষণের বড় অংশজুড়ে ছিল বৈশ্বিক দারিদ্র্য, রোগ-জীবাণুর মতো বিরাট সমস্যা মোকাবিলায় কিভাবে আরও বেশি সংখ্যায় মানুষের; বিশেষ করে তরুণদের সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা যায়। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, হার্ভার্ডে আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত আসে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে। তখন আমি আলবুকুয়ের্কের এক কোম্পানিকে ফোন করে তাদের কাছে সফটওয়্যার বিক্রির প্রস্তাব করি। সেই সময় কোম্পানিটি পৃথিবীর প্রথম পারসোনাল কম্পিউটার (পিসি) তৈরি শুরু করেছিল। আমার ভয় হচ্ছিল, তারা হয়ত বুঝে ফেলবে আমি এক ছাত্র আর ফোনটা রেখে দেবে। কিন্তু উল্টো বলল, ‘আমরা এখনও প্রস্তুত নই, মাসখানেক পর খোঁজ নিন।’ এতে বেশ ভাল হলো। কারণ, তখনও আমাদের সফটওয়্যারটির কাজ শেষ হয়নি। সেই মুহূর্ত থেকে আমি এ প্রকল্পে লেগে পড়ি। এর মধ্য দিয়ে আমার কলেজজীবনের শিক্ষার অবসান ঘটে। মাইক্রোসফটের যাত্রা শুরু হয়। এখন সময় পাল্টেছে। বিশ্বের বৈষম্য সম্পর্কে আজকের তরুণরা আমাদের তুলনায় অনেক বেশি জানেন। আশা করি, তাঁদের বিশ্ববিদ॥্যালয়-জীবনে কেমন করে এসবের মোকাবেলা করবেন, সমাধান করবেন। তা চিন্তা করার সুযোগ পান।
×