ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নাসিক নির্বাচন

প্রতীক বরাদ্দের আগেই অনেক প্রার্থীর কৌশলী প্রচার, গণসংযোগ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৯ নভেম্বর ২০১৬

প্রতীক বরাদ্দের আগেই অনেক প্রার্থীর কৌশলী প্রচার, গণসংযোগ

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ প্রতীক বরাদ্দের আগেই বেশ জমে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচন। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নানা কৌশলে প্রচার চালাচ্ছেন। মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ার পর থেকেই অনেক মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী কৌশলে প্রচার ও গণসংযোগে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় করছেন গণসংযোগ, উঠোন বৈঠক, মতবিনিময় ও পথসভা। ভোটারদের কাছে বিলি করছেন লিফলেট। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন নানা উন্নয়নের। লিফলেটের মাধ্যমে প্রার্থীদের পাশাপাশি অনেকেই ভোট চাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের বিধিতে প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচার আচরণবিধির লঙ্ঘন হলেও অনেক প্রার্থী কৌশলে তা করে চলেছেন। তবে কৌশলী প্রচারে বিএনপির মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেনসহ বেশ কয়েকজন মেয়র প্রার্থী থাকলেও মাঠে নেই আওয়ামী লীগের মেয়রপদ প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী। মেয়র আইভী বলেন, নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধিতে উল্লেখ আছে, প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনী প্রচার চালানো যাবে না। তাই কমিশনের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচারে অংশ নিচ্ছি না। এদিকে যে সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে তাদের অনেকেই ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে আপীল করার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতীক বরাদ্দের আগে কোন প্রচার ও লিফলেট বিলি করা যাবে না। এটা করলে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মেয়র প্রার্থীদের কৌশলী প্রচার ॥ সোমবার সকালে শহরের শায়েস্তাখান রোডে গণসংযোগ করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মেয়রপ্রার্থী মাহবুবুর রহমান ইসমাইল। তিনি ভোটারদের কাছে দোয়া চান এবং তাদের খোঁজ খবর নেন। এ সময় মাহবুবুর রহমান ইসমাইল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিয়ে শঙ্কায় আছি। নির্বাচন কমিশনের আশ্বাস অনুযায়ী জনগণ যদি সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে, সুষ্ঠুভাবে ভোট গণনা করা যায় এবং ভোট গণনা শেষে সুষ্ঠুভাবে ফল প্রকাশ করা যায়, তাহলে সেই নির্বাচনকে সুষ্ঠু বলা যাবে। তাই ভোটারদের নিরাপত্তা, ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা এবং ব্যালট বাক্সের নিরাপত্তা দাবি করেন তিনি। জনগণ যদি স্বাধীনভাবে তাদের মতপ্রকাশ করতে পারে তাহলে নির্বাচনে জয়ী হবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এদিকে এলডিপির প্রার্থী কামাল প্রধান নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কের নারায়ণগঞ্জ ক্লাব মার্কেটের সামনে গণসংযোগ করেছেন। এ সময় তিনি ভোটাদের কাছে নিজের প্রার্থিতা ও তাদের দলীয় (এলডিপি) প্রধানের পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছে দেন এবং তাকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। প্রতীক বরাদ্দের আগে গণসংযোগ আচরণবিধি লংঘন হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রয়েছে, সেনা মোতায়েন প্রয়োজন নেই। এদিকে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরে নগরীর ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন। তিনি সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এখনও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা হয়নি। সরকারদলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে সাংসদদের উৎসাহিত করছেন, এতে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন আমাদের যে আশ্বাস দিয়েছে, সেই আশ্বাস মতে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হলে নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করবেন বলেন অভিমত ব্যক্ত করেন। তবে তিনি লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করলেও আচরণবিধি ভঙ্গ হচ্ছে না বলে দাবি করেন। তবে প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচারে নামবেন না আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী। আইভী বলেন, নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধিতে উল্লেখ আছে প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনী প্রচার চালানো যাবে না। তাই নির্বাচন কমিশনের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচার চালাচ্ছি না। কাউন্সিলর প্রার্থীরাও কৌশলী প্রচারে ব্যস্ত ॥ ২৭ সাধারণ ওয়ার্ড ও ৯ সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর অনেকেই গণসংযোগ করছেন এলাকায়, ভোটারদের দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও দোয়া চেয়ে চলেছেন। প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনী প্রচার ও লিফলেটের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, প্রতীক বরাদ্দের আগের নির্বাচনী প্রচার করা যাবে না। লিফলেটও বিতরণ করা যাবে না। আমিও শুনেছি কয়েজন প্রার্থী নির্বাচনী লিফলেট বিতরণ করেছেন। যেসব প্রার্থী আচরণবিধি ভঙ্গ করছে, তারা কী ধরনের আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন তার খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, আগামী ৪ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। আমি প্রার্থীদের অনুরোধ করব, আপনারা একটু ধৈর্য্যধারণ করুন। নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলুন। ৫ ডিসেম্বর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ হবে। তার পর থেকে আপনারা নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি অনুযায়ী প্রচারে অংশ নিন। আগামী ২২ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ হবে। দলীয় কার্যালয়ে প্রথম মতবিনিময় সভা করলেন আইভী ॥ এদিকে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে মহানগরীর ২৪ এবং ২৫নং ওয়ার্ড নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো মতবিনিময় করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী। রবিবার রাতে নগরীর ২নং রেলগেট এলাকায় তিনি মতবিনিময় সভা করেন। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত নেতাকর্মীরা সাংসদ শামীম ওসমানবিরোধী বক্তব্য রাখলে মেয়র প্রার্থী আইভী তাদের শান্ত করে বলেন, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে কোন বিরোধ নেই। ছোটখাটো ভুলত্রুটি ভুলে গিয়ে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘নৌকা’র প্রার্থীকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আরজু ভূইয়া, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর যুবলীগ নেতা খালিদ হাসান, আবু সুফিয়ান, মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মিনহাজুল কাদির মিমনসহ ২৪ ও ২৫নং ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা। তবে ওই সভায় সাংসদ শামীম ওসমান অনুসারীদের কেউ ছিলেন না। আস্তে আস্তে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আইভীর পক্ষে কাজ করবে ॥ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই বলেন, সিটি নির্বাচনের প্রচার এখনও শুরু হয়নি। তাই আইভীর পক্ষে আস্তে আস্তে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে নামবেন। কোন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী নৌকার পক্ষে কাজ না করলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগে নির্বাচনী প্রচার শুরু হোক। এর মধ্যে কার কি এ্যাক্টিভিটিজ দেখেশুনে পরে চিন্তাভাবনা করা যাবে। আমরা নৌকা মার্কা জয়ের ব্যাপারে অবশ্যই আশাবাদী। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান জানান, এখনও সাবেক মেয়র আইভী আমাদের টেলিফোনও করেননি, আসেনওনি, বলেনওনি। এখন আমরা মেয়র বুঝি না। আমরা বুঝি আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি (শেখ হাসিনা) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা নির্বাচন করব। আমরা সংগঠন করি শেখ হাসিনার। আইভী ফ্যাক্টর না, ফ্যাক্টর হলো শেখ হাসিনা। তাই নৌকার পক্ষে নির্বাচন তো করতেই হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ চান কাউন্সিলর প্রার্থীরা ॥ নাসিক নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা এ নিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে নানা শঙ্কা কাজ করছে। সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান কাউন্সিলর প্রার্থীরা। অনেক প্রার্থী আশঙ্কা প্রকাশ করে দাবি জানান, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য নির্বাচনী এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, বৈধ অস্ত্র জমা ও সন্ত্রাসীদের আটক করতে হবে। তারা জানান, ভোটারদের মধ্যে সন্ত্রাসী আতঙ্ক সৃষ্টি করে নির্বাচনের সময় প্রভাব বিস্তার করতে পারে। ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম ম-ল জানান, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বিজিবি মোতায়েন করতে হবে। এছাড়াও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে হবে। ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সির প্রার্থী তোফায়েল হোসেন জানান, আমি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। কোন বহিরাগত যেন নির্বাচনী এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর থাকতে হবে। এছাড়াও নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারসহ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক গণমাধ্যমকে জানান, নির্বাচনের পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×