ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৭ ডিসেম্বর আলোর উৎসব ;###;উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

১৫ হাজার মেগা ওয়াট

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৯ নভেম্বর ২০১৬

১৫ হাজার মেগা ওয়াট

রশিদ মামুন ॥ দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ১৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। এ অর্জন ঘিরে উৎসব করতে যাচ্ছে বিদ্যুত বিভাগ। বিগত ২০১৩ সালে সরকার ১০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্য অর্জন করে। তবে এবার মূল উৎপাদনের সঙ্গে শিল্পকারখানায় নিজস্ব উদ্যোগে স্থাপিত কেন্দ্র ক্যাপটিভ পাওয়ারকে যোগ করা হচ্ছে। বিদ্যুত বিভাগ ও বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, এখন দেশের মোট স্থাপিত বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১৩ হাজার মেগাওয়াট। তবে কেন্দ্রের ক্ষমতা কমে যাওয়ায় নিট উৎপাদন ১২ হাজার ৪০৫ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ভারত থেকে আমদানি করা ৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুতও রয়েছে। এবারই প্রথমবার দেশের ক্যাপটিভ পাওয়ারকে মূল বিদ্যুত উৎপাদনের সঙ্গে যোগ করা হচ্ছে। দেশী শিল্পোদ্যোক্তারা অনেকেই নিজস্ব উদ্যোগে বিদ্যুত উৎপাদন করেন। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের জন্য উদ্যোক্তারা গ্রিডের গ্যাসেই বিদ্যুত উৎপাদন করেন। অতীতে কোনদিনই এ বিদ্যুত উৎপাদনকে দেশের মোট বিদ্যুত উৎপাদনের সঙ্গে যোগ করা হয়নি। দেশে এমন দুই হাজার ২শ’ মেগাওয়াটের ক্যাপটিভ বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ বলছে, সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আগামী ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বিদ্যুত বিভাগ আলোক উৎসবের আয়োজন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই আলোক উৎসবের উদ্বোধন করবেন। বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা মনে করেন, যেহেতু সরকারই এ বিদ্যুত কেন্দ্রের জ্বালানি সরবরাহ করে তাই এদেরও মূল বিদ্যুত উৎপাদনের সঙ্গে যোগ করা উচিত। শিল্পকারখানাগুলোকে বিদ্যুত না দিলে তারা গ্রিডের বিদ্যুত নিত। আবার শিল্পকারখানাগুলোকে গ্যাস দিতে না হলে সরকার আরও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে পারত। গ্যাস সঙ্কটের কারণে নতুন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে এসেছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের নবেম্বরে দেশের বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ১০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়। ওই বছরের ডিসেম্বরে উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১০ হাজার ২৪৫ মেগাওয়াট। গত তিন বছরে আরও প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াটের নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালে উৎপাদনে আসে ৬৩৫ মেগাওয়াট, পরের বছর ২০১৫-তে উৎপাদনে আসে এক হাজার ৩৭৫ মেগাওয়াট, আর চলতি বছর এখন পর্যন্ত উৎপাদনে এসেছে ৯২৭ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র। এর বেশিরভাগই গ্যাসচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র। গত তিন বছরে উল্লেখযোগ্য সাতটি বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। এগুলো হলোÑ হরিপুর-৪১২ মেগাওয়াট, ভোলা-২২২ মেগাওয়াট, আশুগঞ্জ-৩৬০ মেগাওয়াট, আশুগঞ্জ-২২৫ মেগাওয়াট, বিবিয়ানা-৩৩৫ মেগাওয়াট ও শাহ্জীবাজার-২২০ মেগাওয়াট। অন্য কেন্দ্রগুলো তেলচালিত ছোট আকারের বিদ্যুত কেন্দ্র। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারের মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আওতায় বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। এর আওতায় আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে আরও কয়েকটি বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। কেন্দ্রগুলো হলো বড়পুকুরিয়া-৩৬৫ মেগাওয়াট, ঘোড়াশাল-২৭৫ মেগাওয়াট এবং সিরাজগঞ্জ-৪১২ মেগাওয়াট। তবে হতাশার কথা হচ্ছে, দেশে বিকল্প জ্বালানি কয়লার ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এখনও পর্যন্ত পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র ছাড়া আর কোন বিদ্যুত কেন্দ্রের নির্মাণই শুরু করা হয়নি। ফলে বড় আকারের কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আসা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছে। সারাদেশে বিদ্যুতের বিস্তারে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে (আরইবি) বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকারের পরিকল্পনায় ২০২১ সাল বলা হলেও আরইবি ২০১৮ সালের মধ্যে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। ফলে সরকারী কোম্পানিগুলোকে নতুন কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্য বেঁধে দেয়া হয়েছে। দুটি সরকারের শুরুতে দেশের বিদ্যুত উৎপাদন পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখা যায়, ২০০৯ সালে দেশে মাত্র ২৭ বিদ্যুত কেন্দ্র ছিল। সবগুলো বিদ্যুত কেন্দ্র মিলিয়ে উৎপাদান ক্ষমতা ছিল ওই সময়ে চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। তবে গড়ে তিন হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুত উৎপাদন হতো। বিদ্যুত খাতে এক নাজুক পরিস্থিতি নিয়ে ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার গঠন করে। ওই সময়ে সারাদেশে গড়ে ১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হতো। খোদ রাজধানীতে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ রাখতে হতো। সরকার গঠনের পরই বিদ্যুত খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় ওই সরকার। শুরু থেকেই অনেকটা উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন শুরু করা হয়। সমালোচনা হলেও বিদ্যুত খাতের সার্থকতা সমালোচকদের মুখেও হাসি ফুটিয়েছে। বিদ্যুত বিভাগের নেয়া কর্মপরিকল্পনায় দেখা যায়, ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার এবং ২০৩০ সালে ৪০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ছয় হাজার কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন এবং এক লাখ কিলোমিটার বিতরণ লাইন ও প্রয়োজনীয় উপকেন্দ্র নির্মাণ ও ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। এজন্য সরকারের ২০২১ সাল পর্যন্ত ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সংস্থান করতে হবে। অতীতে বিদ্যুতের প্রকল্প বাস্তবায়নে দাতা সংস্থার দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো। দাতা সংস্থা বছরের পর বছর ঘুরিয়ে প্রকল্প বাতিল করত। এখন সেই পরিস্থিতি থেকে সরে এসে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। অনেক ব্যাংকই বিপুল বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে সরকারের কাছে আসছে। সরকার বলছে, এখন প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন কোন বড় সমস্যা নয়। সরকার প্রতিবেশী দেশের সহায়তা সম্প্রসারণ করছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জ্বালানি সঙ্কট নিরসনের জোর চেষ্টা চলছে, যার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো নিজেদের জ্বালানি সঙ্কট সমাধানে নিজেদের মধ্যে সহায়তা বৃদ্ধিকে সম্প্রসারিত করেছে। সার্কে এ সংক্রান্ত একটি ফ্রেমওয়ার্ক স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশ ভারত থেকে ৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করছে। আরও ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আগামী বছরের শেষ নাগাদ আরও ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি শুরু করে। দেশটির বেসরকারী খাত এ বিদ্যুতের যোগান দেবে। এজন্য কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পৃথক আরও একটি ব্যাক টু ব্যাক সাব-স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে আরও ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত আসবে বাংলাদেশে। সরকারের পরিকল্পনা বলছে, আঞ্চলিক গ্রিডের মাধ্যমে ’২১ সালের মধ্যে আরও ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হবে। এছাড়া ছয় হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র বাস্তবায়ন পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতষ্ঠান রোসাটমের মাধ্যমে দুই হাজার মেগাওয়াট পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করছে। সরকার আশা করছে, ’২২ সালের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির জন্য ঋণচুক্তি সই হয়েছে।
×